তবুও কেন এত আলোচিত জিবুতি?

তবুও কেন এত আলোচিত জিবুতি? - ছবি সংগৃহীত
আফ্রিকার এক প্রান্তে ছোট্ট দেশ জিবুতি। দেশটিতে তেল নেই, স্বর্ণ নেই। আবার তাদের অর্থ সঙ্কট প্রকট। তবে এটি প্রাইমটাইমে স্থান করে নিয়েছে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে।
• উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশটি ১৯৭৭ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর জিবুতি নামে নিজেকে পরিচিত করে। আফ্রিকার তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ জিবুতি।যার আয়তন ৩,২০০ বর্গকিলোমিটার।
• জিবুতির উত্তরে ইরিত্রিয়া , পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ইথিওপিয়া এবং দক্ষিণে সোমালিয়ায় আবদ্ধ । বাব এল মান্দেব প্রণালীর তীরে, লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত।
• দেশটির রাজধানী জিবুতি, ভারত মহাসাগর ও লোহিত সাগরের ট্র্যাফিক সরবরাহ করে।এ পথ দিয়ে ৪.৮ মিলিয়নেরও বেশি অপরিশোধিত তেল এবং পেট্রোলিয়াম পন্যসামগ্রী চলাচল করে। জিবুতির বিশাল প্রতিবেশী ল্যান্ডলকড ইথিওপিয়ার ব্যবসায়ের প্রধান প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে। ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে জিবুতি বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হওয়ায় ওই গুরুত্ব আরো বহুগুণে বেড়ে যায় ৷ জিবুতির পোর্ট বা স্থলবন্দরই বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম পোর্ট! বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জাহাজ জিবুতির সমুদ্র বন্দরের উপর দিয়ে যাতায়াত করে। ভৌগলিক অবস্থানগতভাবে আরবের তেলের খনিগুলোর সবচেয়ে কাছে এই দেশটির অবস্থান। জিবুতিকে সুয়েজখালের প্রবেশপথ বলা হয়। বন্দরকেন্দ্রিক অর্থনীতির কারণেই দেশটির অর্থনীতি সচল রয়েছে। এ দেশে কাজের মূলক্ষেত্র বন্দর।
• জিবুতির সংস্কৃতিতে অন্যতম প্রধান উপাদান ভাষা। হর্ণ অফ আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে সরকারিভাবে দুইটি ভাষা প্রচলিত, ফরাসি ও আরবি।
• এ দেশে ফরাসি ভাষা প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মাধ্যম। তবে এ দেশে সোমালির ভাষা হলো সর্বাধিক কথ্য ভাষা।
• জিবুতির মুদ্রা জিবুতিয়ান ফ্র্যাঙ্ক। জিবুতিয়ান ফ্র্যাঙ্ক মার্কিন ডলারের সাথে যুক্ত হয়। দেশটির বাজার অঞ্চলে স্থানীয় স্ট্রিট মানি চেঞ্জারগুলিতে ডলারকে ফ্র্যাঙ্কে রূপান্তর করা যায়।
• দেশটির প্রধান ধর্ম ইসলাম। এ দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৯ ভাগ মুসলিম। গোদা পাহাড় হচ্ছে সেখানকার মুসলিমদের তীর্থস্থান।
• জাতিগতভাবে জিবুতি দুটি নৃগোষ্ঠীতে বিভক্ত আফার ও ইসা। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশটিতে গৃহযুদ্ধ হয়।
• জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ যাযাবর জীবনযাপন করে, ছোট ছোট ঝুপড়িতে বাস করে, সহজেই প্যাক করে উটের পিঠে করে চলে যায়। আফার জনগণ মরুভূমিতে ও পর্বতমালায় বাস করে।
• জিবুতিতে মিডিয়াগুলো সরকারিভাবে পরিচালিত। দেশটিতে বেসরকারি কোনো টিভি বা রেডিও স্টেশন নেই।
• জিবুতি হলো আফ্রিকান ইউনিয়ন, আরব লিগ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য।
• বাহ্যিকভাবে দেশটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মালভূমি ও উচ্চভূমিসহ এক প্রস্তর আধা মরুভূমি। রাজধানী, জিবুতি শহরটি বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম ও শুষ্কতম শহরগুলোর মধ্যে একটি। জিবুতি খরার জন্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
• জিবুতিতে একমাত্র জাতীয় উদ্যান ডে ফরেস্ট জাতীয় উদ্যান।
• জিবুতিতে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ লেখ হল লেক আবি এবং লেক আসাল। লেক আসাল আফ্রিকার সর্বনিম্ন পয়েন্ট। এবং লেক আবে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্জন স্থান। দেশটিতে আটটি পর্বতমালা রয়েছে।
• ফুটবল ফেডারেশন ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৯৯৪ সালে ফিফা এবং কনফেডারেশন অফ আফ্রিকান ফুটবলের (সিএএফ ) সাথে যুক্ত হয়। এবং ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খেলতে শুরু করে দেশটি। অ্যাথলেটিক্স জিবুতিয়ান সমাজের একটি জনপ্রিয় খেলা।
• জিবুতিয়ানরা হস্তশিল্পের মধ্যে নেই। ইসলামি, ফরাসি ও উসমানিয়া স্থাপত্য উপাদানগুলোর প্রদর্শন করে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করে। ভবনগুলো ছাড়া কোনো ভাষ্কর্য নেই দেশটিতে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়