যেখানে গেলে চোখ জুড়িয়ে যায়

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা | Feb 28, 2021 12:37 pm
নারায়ণগঞ্জে ফুলের সাম্রাজ্য

নারায়ণগঞ্জে ফুলের সাম্রাজ্য - অন্য এক দিগন্ত

 

গ্রামের পর গ্রাম। ধূ-ধূ প্রান্তর । যতদূর চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। এ যেন ফুল সাম্রাজ্য। যেখানে গেলে চোখ জুড়িয়ে যায়, মন ভালো হয়ে যায়। চারদিকে লাল, নীল, গোলাপি, বেগুনি, হলুদ, সাদা ও লাল- হরেক রকমের বাহারি ফুল। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার সাবদি গ্রামে। যাকে লোকজন ফুলের রাজ্য বলে। বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সাবদি । কেউ বলে ফুলের গ্রাম , কেউ বলে ফুলের রাজ্য বা আর কেউ বা বলে ফুল সাম্্রাজ্য। তবে সাবদির আশপাশের গ্রামগুলোতে বছরে নির্দিষ্ট সময়ে ফুলের চাষ করে মানুষ।

বছরে ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন চাষিরা। বিভিন্ন দিবসে এখান থেকে সারা দেশে ফুল সরবরাহ করা হয়। এছাড়া প্রতিদিন ঢাকা ও আশপাশ এলাকা থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন ওই গ্রামে।

সরেজিমন দেখা যায়, সাবদি গ্রাম ছাড়াও পাশের গ্রাম দীঘলদী, মাধবপাশা, আরজাদি, ফেলারদী, আখতলা, মুখ কলদী, শেলসারদী ও বন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীবাড়ি, চিনারদী, মোল্লাবাড়ি, কলাবাগ, নবীগঞ্জ ও তিনগাঁও এলাকায় জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন চাষিরা। ওই গ্রামের জমিগুলোতে বিদেশী জারবেরা, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জিপসি, চেরি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, হলুদ গাঁদা, গ্লাডিওলাস, চায়না গাঁদা, কাঠমালতী, কামিনী, বেলি, জবা, গন্ধরাজসহ নানান প্রজাতির ফুল ফুটেছে।

জানা গেছে, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের এসব গ্রামের প্রায় ১৫-১৬ হাজার নারী-পুরুষ এ ফুল চাষে এখন স্বাবলম্বী। প্রায় দেড়শ’ হেক্টর আবাদি জমিতে ২৪-২৫ ধরনের ফুল চাষ হচ্ছে। বসন্ত, ফাগুন, ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসকে কেন্দ্র করে ৪-৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নারী-পুরুষ ভিড় জমান সাবদি গ্রামে।

সাবদির ফুল বাগানের মালিক জামান মিয়া জানান, বাগানে চাষ করা হচ্ছে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গাডিওলাস, জারবেরা, বাগানবিলাস, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, কসমস, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, মোরগঝুঁটি, কলাবতী, বেলি, জিপসি, চেরি, কাঠমালতী, আলমন্ডা, জবা, রঙ্গন, টগর, কাঠগোলাপ, রক্তজবা ও ক্যালেন্ডোলা।
তিনি আরো বলেন, ফলন ভালো হলে লাভ বেশি হয়। তবে ফুল চাষের জন্য মানসম্পন্ন বীজ, চারা ও টিস্যু কালচারের জন্য গবেষণাগার নেই। স্বল্প সুদে ঋণের সুবিধা পাওয়া যায় না। উৎপাদিত ফুল সংরক্ষণে কোনো হিমাগার এবং বাজারজাত করারও ভালো ব্যবস্থা নেই। এসব সমস্যার সমাধান হলে এ গ্রামে ফুলের চাষ আরো বাড়বে, আগ্রহী হবে কৃষকরা। এতে এক সময় এখান থেকে অর্ধশত কোটি টাকা ফুল বিক্রি করা সম্ভব ।

ওই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মোস্তাফ জানান, ১৯৮০ সালের দিকে কাঠমালতী ও গাঁদা ফুল দিয়ে বন্দর উপজেলার সাবদিতে ফুলের চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে কৃষিজমিতে এই ফুল চাষ সম্প্রসারিত হতে থাকে। এখানকার প্রতিটি বাড়ির সীমানা, সড়কের দুপাশে কাঠমালতীসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো রয়েছে। ফুল চাষ করে স্থানীয় লোকজন এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।

কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা সুলতানা বলেন, ধান আলু কিংবা ফল চাষে কৃষকরা নানা সুবিধা পেলেও সরকারের পক্ষ থেকে ফুল চাষিরা তেমন কোন সুবিধাই পায় না। আমার অফিস থেকে তেমন কিছুই করতে পারিনি। করোনা পরবর্তী সময়ে ২৭ জন ফুল চাষিকে ৩৯ লাখ টাকার প্রণোদনার কৃষি ঋণ দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু বর্ষাকালে জমির পানি নামতে দেড়ি ও জমি গুলো বালি ভরাট হতে থাকায় এ বছর ফুল চাষ কম হয়েছে। অনেক চাষি আবার অন্য ফসলের দিকে আগ্রহ বাড়াচ্ছে। আর যে জমিতে চাষ হয়েছে, সেই জমিগুলোতেও দেরি করে গাছ রোপণ করায় ফুল ফুটতে দেরি হচ্ছে। তাই চাষিরা কিছুটা চিহ্নিত। তারপরেও আশা করা হচ্ছে, এ বছর কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবে কৃষকরা।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us