স্পষ্ট হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলামত
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলামত - ছবি সংগৃহীত
গল্পটা শুনেছিলাম ছেলেবেলায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হবে? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘কী অস্ত্র দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে জানি না। তবে চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হবে লাঠি আর পাথর দিয়ে।’ এ মন্তব্য তিনি এজন্য করেছিলেন যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক উন্মাদনায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হবে। সভ্যতা-সংস্কৃতির বিত্তবৈভব, মানব জীবনের সকল উন্নয়ন-স্থিতিশীলতা, বিজ্ঞানের চরম ঔৎকর্ষ সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। যে দু’চারটি প্রাণ বেঁচে থাকবে তাদের হাতেই হবে নতুন সভ্যতার সূচনা। প্রাকৃতিক নিয়মের ওপর ভর করে মানুষ আবার সভ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। সে সভ্যতার নির্মাণপর্বে আবার যখন চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হবে তখন মানুষ প্রকৃতির কাছে পাওয়া গাছের ডাল বা লাঠি এবং পাথর দিয়ে আদিম সভ্যতার মানুষদের মতো করে যুদ্ধ পরিচালনা করবে।
গল্পটা শুনে হেসেছিলাম। কিন্তু এখন পারমাণবিক মরণাস্ত্রের যে দৌরাত্ম্য তাতে এ গল্পটি আমলে নিতেই হয়। অভিজ্ঞ মহল মন্তব্য করছে যে, ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে বহুমাত্রিক, বৈচিত্র্যময় ও কৌশলপূর্ণ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ভূ-রাজনীতি যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিই বদলে দেবে। ভূ-রাজনীতি ও প্রযুক্তিতে পরিবর্তন আসছে। পরাশক্তিগুলোর মধ্যে সঙ্ঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যকার সামরিক প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। গত আধা শতকে এক দেশের প্রতি আরেক দেশের চোখ রাঙানি থাকলেও সে রকম যুদ্ধ দেখা যায়নি। তবে এখন আশঙ্কা বাড়ছে পুরো মাত্রায়। চার দিকে যে গোলমেলে পরিবেশ, যেকোনো সময় শুরু হতে পারে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। এ খেলায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে সভ্যতার বুনিয়াদ।
বিগত দুই যুগে চোখ রাঙানির ফাঁকে ফাঁকে ছোটখাটো রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘাতেও বহু মানুষের প্রাণ ঝরেছে। এখনো ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানামুখী সংঘর্ষ-সঙ্ঘাত চলছে। অন্য দিকে, ভূ-রাজনীতি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে সঙ্ঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এখন মার্কিন প্রতিরক্ষার মূল লক্ষ্য ক্ষমতার লড়াই। আর তাদের প্রধান হুমকি চীন ও রাশিয়া। সম্প্রতি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ রুশ হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যে টান টান উত্তেজনা, ক্ষণে ক্ষণে সঙ্ঘাতের আশঙ্কা ঝলকায়। এই বুঝি টিপ পড়ল পরমাণু অস্ত্রের বোতামে! পেন্টাগনের আচরণে পরাশক্তিগুলো ক্ষুব্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উসকানির অভিযোগ তুলেছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবকে স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বলছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যকার প্রতিযোগিতার বিষয়টি এখন প্রকাশ্য। আর নিশ্চিতভাবে এই প্রতিযোগিতার একটি সামরিক মাত্রা আছে। বিশেষ করে রাশিয়া ও চীন কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য মানতে নারাজ। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে তারা চ্যালেঞ্জ করে আসছে। আঞ্চলিক পর্যায় তারা দারুণ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দৃঢ় প্রভাববলয় গড়ে তুলেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরাশক্তি দু’টি প্রমাণ করেছে, তারা তাদের স্বার্থ রক্ষায় সামরিক শক্তি প্রয়োগেও প্রস্তুত। এ প্রেক্ষাপটে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা পুরোপুরি নাকচ করা যায় না। চীন অর্থনৈতিকভাবে এখন খুবই শক্তিশালী। তারা তাদের সামরিক শক্তিও সমৃদ্ধ করছে। চীন এখন সময়কে নিজের করে নিতে চায়। রাশিয়ার বর্তমান নেতৃত্ব দেশের হারানো শৌর্য-বীর্য পুনরুদ্ধারে তৎপর। পেন্টাগনের প্রতিবেদনে রাশিয়া ও চীন উদ্বেগ দেখালেও দেশ দু’টি কিন্তু নিজ নিজ পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ ও তার আধুনিকায়ন করে চলছে।
পরমাণু অস্ত্র নিয়ে পরাশক্তিগুলোর বড়াইয়ের শেষ নেই। আবার এই অস্ত্রই তাদের দুশ্চিন্তার কারণ। সাইবার হামলায় পারমাণবিক অস্ত্রের ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে অকার্যকর হতে পারে। এ ছাড়া রাশিয়া ও চীনের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে তাদের (চীন ও রাশিয়া) পারমাণবিক অস্ত্রকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। অস্ত্রটি নিয়ে চীন-রাশিয়াও কাজ করছে। কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুদ্ধটা একতরফা হবে না। যুদ্ধ বাধলে উত্তর কোরিয়া জল, স্থল ও আকাশপথে তীব্র আক্রমণ চালাবে। যুদ্ধ পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। নিহত হতে পারে অসংখ্য বনিআদম।
২০২০ সালের নতুন বছরের শুরুতেই মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হন। ঠিক তার পর থেকেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথাটি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় উঠে আসে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে আলোচিত নাম ছিল মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ছিলেন বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর এলিট ইউনিট কুদস ফোর্সের প্রধান। দেশের বাইরে ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় সোলাইমানি ছিলেন এককভাবে মূল ব্যক্তি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের পররাষ্ট্র নীতিনির্ধারণেও তার ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিগত দুই দশক ধরে ইরাক, ইয়েমেন, সিরিয়া ও লেবাননের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর শক্তিশালী হয়ে ওঠার পেছনে কাসেম সোলাইমানির অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। ফলে অনেক দিন ধরেই তিনি ছিলেন ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে।
এ হত্যাকাণ্ডের ফলে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উদ্বেগ। সোলাইমানি হত্যার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো। ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা কাউন্সিল বলেছে, ‘সঠিক সময়ে ও সঠিক জায়গায়’ এ হত্যার বদলা নেয়া হবে। বিবিসির বিশ্লেষক জেরেমি বোওয়েন বলছেন, ইরানের হাতে আধুনিক রকেট ও মিসাইল আছে। কিন্তু এসব অস্ত্র যদি তারা মার্কিন বাহিনীর ওপর প্রতিশোধমূলক হামলার জন্য ব্যবহার করে তাহলে পরিস্থিতি ভীষণ খারাপ হতে পারে। তারা যদি উপসাগরে মার্কিন জাহাজে আক্রমণ চালায় সেটাও প্রচণ্ড পাল্টা হামলা ডেকে আনতে পারে। কারণ ইরানের তেল শোধনাগারগুলো পারস্য উপসাগরে উপকূলের পাশেই। যুক্তরাষ্ট্রের যে বিপুল সামরিক ক্ষমতা, তাতে এগুলো খুব সহজেই তাদের টার্গেটে পরিণত হবে।
কাসেম সোলাইমানি হত্যার পর বিশ্লেষকদের ধারণা, এর ফলে আরেকটি বড় মাপের যুদ্ধ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। সীমিত সামরিক শক্তির কারণে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম শক্তিধর মনে হতেই পারে। কিন্তু ইরানের মানবঅস্ত্র যেকোনো বিচারেই মার্কিনিদের থেকে অনেক দুর্ধর্ষ। বিশেষ করে ইরানের লক্ষ্য কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রকে লড়াইয়ে হারিয়ে দেয়া নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের স্বার্থ এবং মার্কিনিদের মিত্রদের সর্বোচ্চ ক্ষতিসাধনই তাদের মূল লক্ষ্য। ফলে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা কাল নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদে এর জের টানতে হতে পারে। ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে এ উপলব্ধি এনে দেবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিনিরা কোথাও কখনো নিরাপদ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আস্ফালনের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে রাশিয়ার কাছে হেরে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে সিরিয়াসহ সাম্প্রতিক সময়ের ঠাণ্ডা লড়াইগুলোতে রাশিয়া যেভাবে তার সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে তাতে মনে হচ্ছে, যুদ্ধে তারা নিজেদের বিজয়ী দেখতে চায়। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ভাষ্যকার জেমস কনকার মতে, পারমাণবিক ক্ষমতায় রাশিয়া ওয়াশিংটনকে ছাড়িয়ে গেছে এবং এটা নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন। রাশিয়া তার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নয়নে অকাতরে অর্থ ঢালছে। ভøাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটো এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া নিশ্চিত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমের মাধ্যমে নিজেদের রক্ষা করাই তাদের লক্ষ্য। দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে তার চেয়ে রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো অনেক ভালো। কনকা তার প্রতিবেদনে বলেন, সম্প্রতি স্বাক্ষরিত স্টার্ট-৩ চুক্তি ব্যাপকভাবে রাশিয়ার অনুকূলে রয়েছে। মস্কো পরবর্তী প্রজন্মের দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ করেছে এবং খুব শিগগির এই ক্ষেপণাস্ত্র কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ান সাবমেরিন ও কাসপিয়ান সাগরে ফ্লোটিলা জাহাজে স্থাপন করা হবে। পারমাণু অস্ত্র পরিচালনায় মার্কিন সৈন্যদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, রাশিয়ার মোকাবেলা করতে যথেষ্ট প্রস্তুত নয় আমেরিকা।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে গোটা বিশ্বই আতঙ্কে। ইউক্রেন-বিতর্ক থেকে হাওয়া ক্রমেই গরম হয়েছে। রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়। সিরিয়ায় বহু পক্ষীয় সঙ্ঘাতেও ক্রমেই ঘনাচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মেঘ। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি যেন ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে আমেরিকা ও রাশিয়া। চুপ করে বসে নেই ন্যাটো। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্ব রাশিয়ার গতিবিধি নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়া ন্যাটোর ওপর হামলার প্রস্তুতি নিলেও ন্যাটোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করতে চাইছে না। তবে রাশিয়া হামলা করলে তার যোগ্য জবাব দেয়া হবে। দি ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্ব পটভূমিতে এখন চলছে শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দ্বন্দ্বে যেকোনো সময় বেঁধে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেখানে ন্যাটোর প্রতিপক্ষ হতে পারে চীন ও রাশিয়া।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে উন্নত দেশগুলো। পারমাণবিক শক্তির বিবেচনায় ভারতকে বাইপাস করার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় ভারত নিজেকে চীন, রাশিয়া কিংবা আমেরিকার সাথে মেপে চলার নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে ইসরাইল, আমেরিকা ও রাশিয়া। চীনও রাশিয়ার সুরেই কথা বলছে। তাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা যেমন বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি। যদি সেটাই হয়, তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।
পরমাণু অস্ত্রের ভয়াবহতা বিশ্ববাসী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দেখেছে। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি নামে দু’টি শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে পরমাণু বোমা। পারমাণবিক যুদ্ধ উসকে দিতে তথ্যযুদ্ধের কৌশলও এগিয়ে চলেছে ব্যাপকভাবে। রাষ্ট্রীয় মদদে তথ্য হ্যাক, তথ্য ফাঁস, অপতথ্য, সত্য-মিথ্যার মিশেল, মিথ্যা খবর (ফেক নিউজ) ছড়িয়ে দেয়া এখন প্রতিনিয়ত চোখে পড়ছে। ইন্টারনেট বিপ্লবের এ যুগে তথ্যযুদ্ধ যে কতটা কার্যকর, তা সম্ভবত রাশিয়া দেখিয়ে দিয়েছে।
আজ বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি এবং শিল্প-সংস্কৃতি ও মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ এখন পুরোটাই অমুসলিমদের হাতে। মুসলমানদের বোধ বিশ্বাস তথা স্বকীয় সংস্কৃতিবৃক্ষের শেকড়কাটার কাজ করছে ইহুদি খ্রিষ্টান নিয়ন্ত্রিত এসব মিডিয়া। তাদের উদারপন্থী, মানবতাবাদী ও দেবতার আসনে আসীন করতে সম্ভব সব প্রক্রিয়া চলে। পক্ষান্তরে মুসলিম বিশ্বে যখন কোনো দেশ বা দলের বিরুদ্ধে নির্যাতন চলে কিংবা কোনো দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানরা যখন নির্যাতিত হয় তখন তারা নিশ্চুপ থাকে কিংবা তাদের কর্মসূচি ও অবস্থানকে বিকৃতভাবে তুলে ধরে। সেইসাথে মুসলিম নামধারী কিছু লোককে টাকার বিনিময়ে খরিদ করে স্বজাতীয় মুসলমানদের বোধবিশ্বাসে আঘাত হানার কাজে লাগাচ্ছে। ফলে পারমাণবিক যুদ্ধের সাথে সাথে তথ্যপ্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক যুদ্ধের মোকাবেলাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ যেমনই হোক, তা মুসলমানদের জন্য কোনো ভালো সংবাদ বয়ে আনবে না।