ল্যাসিক সার্জারির সুবিধা-অসুবিধা
ল্যাসিক সার্জারির সুবিধা-অসুবিধা - ছবি : সংগৃহীত
ল্যাসিক শব্দটির সঙ্গে আমাদের অনেকেই পরিচিত নই। এই ল্যাসিক (লেজার-সহায়তাযুক্ত সিটু ক্যারাটোমাইলিউসিস) হলো সর্বাধিক সাধারণ লেজার আই সার্জারি। যা মায়োপিয়া অর্থাৎ কাছের দর্শন, হাইপারোপিয়া অর্থাৎ দূরদর্শন এবং বিষমদৃষ্টি চিকিৎসার জন্য সঞ্চালিত হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের পর থেকে বিশ্বব্যাপী ১৬ মিলিয়নেরও বেশি ল্যাসিক সার্জারি করা হয়েছে।
ল্যাসিক সার্জারি হলো আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান 'লেজার'। এই লেজার-এর মাধ্যমে খুব কঠিন কাজ অনায়াসে করে ফেলা যায়। যেমন, যুদ্ধক্ষেত্রের ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে শুরু করে হেভি মেটালকে মাখনের মত করে কাটা, এমনকি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই লেজার লাইটের ভূমিকা কিন্তু অপরিসিম। আর, এই লেজারের মাধ্যমে রক্তপাত ছাড়া চোখের সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল অঙ্গের চিকিৎসা ও সার্জারি অনায়াসেই করা সম্ভব হচ্ছে। এই পদ্ধতিকেই বলা হয় 'ল্যাসিক সার্জারি'।
ল্যাসিক সার্জারি চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারের বিকল্প পদ্ধতি। এটি একটি ব্যথামুক্ত প্রক্রিয়া এবং অস্ত্রোপচারের জন্য ১৫ মিনিট সময় লাগে। আমরা আজ এই নিবন্ধে ল্যাসিক চিকিৎসা পদ্ধতি কেন ব্যবহার করা হয় ও এর ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলি কী এবং এই পদ্ধতিটি কীভাবে পরিচালিত হয় তা ব্যাখ্যা করব।
কেন ল্যাসিক সার্জারি করা হয়
মায়োপিয়া -
যখন আপনার অক্ষিগোলকটি তার স্বাভাবিক আকারের থেকে কিছুটা দীর্ঘ হয় তাকে মায়োপিয়া বলে। এটি একটি সাধারণ দৃষ্টিকোণ শর্ত, যেখানে আপনি কাছের বস্তুগুলো দেখতে পাবেন এবং দূরের বস্তুকে অস্পষ্ট বা ঝাপসা দেখবেন। তখন এই সার্জারি করা হয়। মূলত যাদের চশমার ক্ষমতা -১.০ থেকে -১২.০, তাদের জন্য এই সার্জারি।
হাইপারোপিয়া -
এটি আপনার চোখের বলের আকার স্বাভাবিকের থেকে ছোট্ট হলে ঘটে। এক্ষেত্রে কাছের বস্তুকে কম বা ঝাপসা দেখা যায়। যাদের চশমার ক্ষমতা +০.০৫ থেকে +৫.০ তাদের জন্য এটি।
অ্যাস্টিগম্যাটিজম -
এটি ঘটে স্বাভাবিকের থেকে যখন কর্নিয়ার আকৃতিটি অনিয়মিত হয়। এর ফলে চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন এবং অনেকে দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন।
এই অস্ত্রোপচারটি কিন্তু সবার জন্য নয়। সাধারণত যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে এবং যাদের চশমার পাওয়ার কয়েক বছর স্থিতিশীল রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই এই সার্জারির পরামর্শ দেয়া হয়।
ল্যাসিক সার্জারি কীভাবে সম্পাদিত হয়
অস্ত্রোপচারের আগে চিকিৎসক আপনার চিকিৎসা এবং শল্যচিকিৎসার ইতিহাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন এবং আপনি ল্যাসিক অস্ত্রোপচারের জন্য ঠিক কি না তা নির্ধারণের জন্য চক্ষু পরীক্ষা করবেন। শুষ্ক চোখ, চোখের সংক্রমণ এবং উচ্চ চোখের চাপের মতো লক্ষণগুলো সন্ধান করবেন। চক্ষু চিকিৎসক আপনার কর্নিয়ার আকার ও ঘনত্ব পরিমাপ করবেন। তারপরে ডাক্তার একটি কর্নিয়াল টোপোগ্রাফারের মাধ্যমে আপনার চোখ পরীক্ষা করবেন। এটি ল্যাসিক চিকিৎসার আগে আপনার চোখের বিশদ মূল্যায়ন করতে সহায়তা করবে।
অস্ত্রোপচারের সময়
১) প্রথমে সার্জারি মেশিন বেডে আপনাকে শোয়ানো হবে।
২) সার্জারি চলাকালীন যাতে চোখ বন্ধ না হয়ে যায় তাই মেশিনের একটা অংশ আপনার চোখের পাতা ধরে রাখবে।
৩) তারপর চোখের উপরে কয়েক ফোঁটা তরল দেয়া হয় যাতে চোখ শুকিয়ে না যায়।
৪) আপনার কর্নিয়ার অংশটি পুনরায় আকার দেওয়ার জন্য একটি ছোট কর্নিয়াল ফ্ল্যাপ কাটতে লেজার ব্যবহার করা হয়।
৫) কর্নিয়ার উপরের এই পাতলা অংশ ফ্ল্যাপ আকারে কেটে বইয়ের কভারের মতো উল্টিয়ে রাখা হবে।
৬) তারপর চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ লেজার প্রয়োগ করা হয় সেই কাটা অংশে।
৭) লেজার প্রয়োগের সময় আপনি একটা পোড়া গন্ধ অনুভব করবেন। এই অংশটাই আপনার মূল চিকিৎসা। ৮) কর্নিয়াকে পুনরায় আকার দেয়ার পরে চিকিৎসক কর্নিয়াল ফ্ল্যাপটি তার জায়গায় ফিরিয়ে দেয় এবং ফ্ল্যাপটি সাধারণত সেলাই ছাড়াই নিরাময় করেন।
অস্ত্রোপচারের পরে আপনি জ্বালা বা চুলকানি অনুভব করবেন এবং আপনার দৃষ্টি ঝাপসা থাকবে। ব্যথা-উপশম করার জন্য ডাক্তার কিছু ওষুধ বা চোখের ড্রপ দেবেন। অস্ত্রোপচারের পরে আপনার দৃষ্টি ঠিক পরিষ্কার হবে না। চোখের দৃষ্টি ঠিক হতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।
ল্যাসিক সার্জারির ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো
শুষ্ক চোখ -
ল্যাসিক সার্জারির সময় যদি চোখ শুষ্ক থাকে তাহলে চোখে অশ্রুর উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে এবং দর্শনের গুণমানকে হ্রাস করতে পারে।
অত্যধিক সংশোধন -
ল্যাসিক সার্জারির সময় এমন একটি আশঙ্কা থাকে যে, লেজারটি চোখ থেকে অতিরিক্ত টিস্যু সরিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি, চোখের সূক্ষ্ম টিস্যুগুলোও সরিয়ে ফেলতে পারে।
ডবল ভিশন -
আপনি উজ্জ্বল আলোর চারপাশে হালকা ঝলক এবং সংবেদনশীলতা অনুভব করতে পারেন। এটি সাধারণত কয়েক সপ্তাহ অবধি থাকে।
ফ্ল্যাপ সমস্যা -
অস্ত্রোপচারের সময় কর্নিয়াল ফ্ল্যাপটি সরিয়ে ফেলা বা পিছনে ভাঁজ করার ফলে অতিরিক্ত অশ্রু নির্গমন এবং রোগ সংক্রমণের মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে।
কোন ধরনের স্বাস্থ্যে ল্যাসিক সার্জারি হওয়ার ঝুঁকি থাকে
১) অবিরাম শুষ্ক চোখ
২) দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
৩) কর্নিয়ার প্রদাহ
ল্যাসিক সার্জারির সুবিধা
১) এটি আপনার দৃষ্টি সংশোধন করে।
২) এই সার্জারির ফলে খুব অল্প ব্যথা হয়।
৩) অস্ত্রোপচারের সময় কোনো ব্যান্ডেজ এবং সেলাই ব্যবহার করা হয় না।
৪) অস্ত্রোপচারের পরে রোগীদের আর চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্স পরার দরকার পড়ে না। ব্ল্যাক সাপোট খান, সুস্থ থাকুন ল্যাসিক সার্জারির অসুবিধা ল্যাসিক সার্জারি খুবই জটিল। ফলে অস্ত্রোপচারের সময় চোখের ডাক্তার যখন ফ্ল্যাপ তৈরি করে তখন কোনো একটি ভুলের জন্য স্থায়ীভাবে আপনার দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই, এর চিকিৎসা একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে নেয়া ভালো।
এই সার্জারি আপনাকে চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্স পরার ঝামেলা ছাড়াই উন্নত দৃষ্টি অর্জনের উচ্চতর সুযোগ দেয়।
সূত্র : বোল্ডস্কাই