ইরানে নারীর কর্মতৎপরতা

ইরানে নারীর কর্মতৎপরতা - ছবি সংগৃহীত
১১ ফেব্রুয়ারি ছিল ইরানের জাতীয় দিবস। রাজধানী তেহরানে ইমাম খোমেনি বিমানবন্দর অথবা আগেকার মেহরাবাদ বিমানবন্দরে নেমে টার্মিনাল ভবনে প্রবেশ করলেই নারীদের কর্মতৎপরতা প্রত্যক্ষ করা যায় ইমিগ্রেশনে এবং কাস্টমসে। হোটেল রিসিপশনে দেখতে পাবেন এক বা একাধিক নারী কর্মতৎপর। তারাই রুম বরাদ্দ দিচ্ছেন, নিচ্ছেন পাসপোর্ট ও বায়োডাটা ফরম। রুম সার্ভিসেও নারীরা। সকাল ১০-১১টার দিকে রুম ও টয়লেট পুনরায় সাজিয়ে দিতে ট্রলি নিয়ে আসবেন নারীরা। রেস্টুরেন্টে গেলে আপনার থেকে অর্ডার নিয়ে খাবার সরবরাহ করবেন নারীরাই। ইরানের যেকোনো শহরে, মার্কেটে, দোকানে বিক্রেতার দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। অনেক নারী চেয়ারের পাশে ফ্লোরে কার্পেটের ওপর নিজের সন্তানকে শুইয়ে রেখে কাজ করছেন। সন্তানের বয়স এক-দেড় বছর বা তার অধিক হলে ডে-কেয়ারে অথবা মায়ের পাশে ঘুরঘুর করছে।
ইরান কার, বাস, ট্রাক, ট্রেন ও ছোট বিমান উৎপাদন করে থাকে। সমগ্র ইরানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা কার চালান। মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ইরানে নারীর বিচরণ ব্যাপক। দেশটা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন তার পরিবেশ। জীবন যাত্রায় আমাদের দেশের মতো এত পিছিয়ে নেই, উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রের মতো অতি বিলাসীও নয়। ইরানে ঘরের কাজ তারা নিজেরাই করেন, নেই কাজের লোক আমদানি করার প্রথা। বিশ্বের মধ্যে সুন্দরতম দেহ গঠন লেবানন, জর্দান, ফিলিস্তিন, সিরিয়া এবং ইরানের মানুষের বলে মনে করা হয়। ইমাম খোমেনির আমল থেকে ইরানি নারীদের পোশাকে পরিবর্তন এসেছে। দেশটার ৯০ শতাংশের বেশি নারী কালো পোশাক পরিধান করেন যা বেশ মানানসই। মাথায় ওড়না সবার। বয়স্ক নারীরা ওড়নার স্থলে পর্দা হিসেবে বড় চাদর মাথা ও শরীরের ওপর দিয়ে চাদরের দুই ভাগ সামনে এনে ধরে রাখেন। তাদের মতে নারীর পর্দা করার জন্য এটাই নিয়ম।
২০০৮ সালে ইরান হয়ে তুরস্কে গেলে মার্সিন শহরের সাগর পাড়ে রাতের খাবারের দাওয়াত খেতে রেস্টুরেন্টে গিয়ে সহযাত্রী সাখাওয়াত হোসেন ও এমদাদ উল্লাহকে নিয়ে তুরস্কের তিন নারীর মুখোমুখি হতে হয়। এক নারী সহযাত্রী সাখাওয়াত হোসেনের ব্যবসায়িক পার্টনার বিধায় আমাদেরকে এ রেস্টুরেন্টে রাতের খাবারের দাওয়াত দিয়েছিলেন। এ তিন নারী বিশেষ করে আমাকে ইরানের নারীদের নিয়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ফেলেন। তাদের বক্তব্য হলো, মোল্লারা ইরানে নারীদেরকে বন্দী জীবনযাপনে বাধ্য করছেন। বারবার বোঝাতে থাকি- ইরানে আমরা যা দেখেছি তা এ ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। ইরানের নারীসমাজ শালীনতার ভেতর সম্পূর্ণ স্বাধীন অর্থাৎ তারা উলঙ্গপনাও নয়, গৃহবন্দীও নয়।
খোমেনির নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে ‘ইসলামী’ বিপ্লবের আগে ইরানি নারীদের জীবনযাত্রা পাশ্চাত্যের স্টাইলে ‘খোলামেলা ছিল’। বিশেষ করে দুই শাহের আমলে। ১৯২৫ সালে জেনারেল রেজা শাহ পাহলভী বাদশাহের পদে বসেন। এর তিন বছরের মাথায় ১৯২৮ সালে ‘শাহবানু’ এক অনুষ্ঠানে নিজে মাথার কাপড় খুলে ফেলে প্রথম পর্দাপ্রথা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তখন থেকে মদ, পতিতালয় প্রভৃতি ইরানে চালু হয়ে যায়। যেমনিভাবে চলছিল পার্শ্ববর্তী দেশ তুরস্কও। কিন্তু ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। নারীরা শালীনতা রক্ষা করে উচ্চ ডিগ্রি লাভে এখন ব্যস্ত। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ উচ্চ পেশায়ও তারা বিচরণরত। অপরদিকে পুরুষরা ভারী কাজে বেশি দায়িত্বরত; যেমন- সশস্ত্রবাহিনী, নির্মাণকাজ ইত্যাদি। ইরান আমাদের বাংলাদেশের চেয়ে ১০ গুণ বড়। জনসংখ্যা সাত কোটির উপরে। ফলে আমাদের দেশের মানুষের মতো দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করতে হয় না, অন্য দেশ থেকেও মানুষ আনতে হয় না। অপরদিকে ইরানি নারীরা কর্মতৎপর বিধায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক। ফলে দেশটি প্রকৃতপক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে।
E-mail:aislam@kbhouse.info