করোনার টিকা নিয়ে ধনী দেশগুলোর রাজনীতি
করোনার টিকা - ছবি সংগৃহীত
সব দেশের কাছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও-র অনুরোধ ছিল, তারা যেন আগে নিজের দেশের স্বাস্থ্যকর্মী ও যাদের ভ্যাকসিন নেয়া অত্যন্ত জরুরি, তাদের প্রথমে টিকা দেয়। তারপর অন্য দেশে ভ্যাকসিন পাঠায়।
কিন্তু বিশ্বের ধনী দেশগুলো এই অনুরোধ পুরোপুরি রাখেনি। আর তার প্রভাব বিশ্বজুড়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, সমাজ ও ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে এই প্রভাব পড়ছে। ভ্যাকসিন এখন পুরনো জীবনে ফিরে যাওয়ার প্রতীক। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক নেতাদের উপর ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের পথে চলার জন্য চাপ আসছে। নিজের দেশের সব মানুষকে আগে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য চাপ আসছে। অথচ, বিশ্বের ১৩০টি দেশে ভ্যাকসিন দেয়া এখনো শুরু হয়নি।
ধনী দেশের মানুষ দ্রুত ভ্যাকসিন পেতে চাইছেন। তারা ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চান, যাতে তারা আবার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন আগের মতো শুরু করতে পারেন। তবে কোন ভ্যাকসিন তারা নেবেন, তা নিয়ে মানুষের মনে ছুৎমার্গ আছে। এদিকে আফ্রিকার অনেক দেশে স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় মারা যাচ্ছেন। সেখানে এই মাসে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হতে পারে।
অনেক দেরিতে হলো, সেটাও কম
ডাব্লিউএইচও-র ডিরেক্টর জেনারেল গত মাসে বলেছেন, পুরো বিশ্ব ভয়াবহ নৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে। তার প্রতিক্রিয়াও খুব বড় হবে। এক বছর আগে ডাব্লিউএইচও বিশ্ব জুড়ে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা জারি করে। তারা গরিব দেশগুলো যাতে টিকা পায়, তার জন্য 'অ্যাক্ট অ্যাকসেলেটর' প্রকল্প চালু করে। জি৭ দেশগুলো সেখানে প্রচুর অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই সব পদক্ষেপ নিতে কি বেশি দেরি হয়ে গেছে?
গত সপ্তাহে আমেরিকা, জার্মানি, ইউরোপীয় কমিশন, জাপান ও কানাডা ৪৩০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। তা হলে গরিব দেশগুলিকে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য এক হাজার কোটি ডলার থাকবে। তা সত্ত্বেও প্রায় দুই হাজার দুই শ' কোটি ডলারের ঘাটতি থাকবে। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার্স অফ কমার্সের হিসাব হলো, গরিব দেশগুলোকে যদি সাহায্য করা না হয়, তা হলে বিশ্বের অর্থনীতি ৯ দশমিক দুই ট্রিলিয়ান ডলার হারাবে। এই অবস্থায় ধনী দেশগুলি কি আরেকটু উদ্যোগী হতে পারে না? তারা যে সাহায্য করছে, তা তো খুবই সামান্য।
দোষ দেয়ার কেউ নেই
ইতিমধ্যে ভারত, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো খুব কম দামে বা বিনা পয়সায় কিছু দেশে ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। যে সব দেশের সঙ্গে তারা সম্পর্ক বাড়াতে চায়, তাদের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। বহু দেশের চাহিদা সত্ত্বেও তারা এই কাজ করছে। ভ্যাকসিন কূটনীতি এখন ইউরোপের বাইরে অনেকটাই বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। সার্বিয়ার সংবাদমাধ্যমে হেডলাইন হয়েছে, 'পুটিন সার্বিয়াকে বাঁচিয়ে দিলেন'। ভারত তো বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, আফগানিস্তানকে বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন. 'অ্যাকটিং ইস্ট, অ্যাকটিং ফাস্ট'। চীনও অনেক দেশে ভ্যাকসিন পাঠাচ্ছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেছেন, অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি অন্তত পাঁচ শতাংশ ভ্যাকসিন যেন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেয়। চীন ও রাশিয়াও ভ্যাকসিন দিতে চায়। কিন্তু ট্রাম্পের আমলে মার্কিন প্রশাসন এই ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু এটা দোষ দেয়ার সময় নয়। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে ভ্যাকসিন-অসাম্য ঘোচাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। জি৭ দেশগুলোকে নির্দিষ্ট নীতি নিতে হবে। যেখানেই আর্থিক সঙ্কট হবে, সেখানেই তারা সাহায্য করবে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে