করোনায় সমীকরণ
করোনাভাইরাস - ছবি সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের প্রকৃত প্রভাব কী, সেটা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে করোনা মহামারীর চেয়ে গত বছর আত্মহত্যা করে দ্বিগুণ মানুষ মারা গেছে। আর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার চেয়ে বেশি মানুষ। করোনা কতটা প্রাণঘাতী, সেটা সবচেয়ে বেশি বোঝা গেল একই সময়ে হৃদরোগে এর ৩৬ গুণের বেশি মানুষ প্রাণ হারানোর খবর থেকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে এ ধরনের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর করোনা নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির অস্বচ্ছতার প্রমাণ পাওয়া গেল। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সারসহ আরো অনেকগুলো অসুখে এ সময়ে মৃত্যুহার করোনার চেয়ে বহুগুণে বেশি। বিগত বছরের পরিসংখ্যান নিলে এই তথ্য সারা বিশ্বের জন্য কমবেশি একইরকম পাওয়া যাবে।
কোনো একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির উপযুক্ত মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হলে বড় ধরনের মাশুল গুনতে হয়। করোনা নিয়ে প্রকৃত প্রস্তুতির চেয়ে আমাদের দেশে ঢের বেশি প্রচারণা হয়েছে। অনেকে না বুঝেই এতে অংশ নিয়েছে। করোনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার মূল্যায়ন মানুষ এখন করতে চাইবে। ঘটনার ভয়াবহতার চেয়ে খবর প্রকাশের জোয়ারে প্রথম ধাক্কায় সব কাজ বন্ধ করে দিয়ে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল প্রায় সব মানুষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান এক ধাক্কায় সব বন্ধ করে দেয়া হয়। কল কারখানা তথা উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে মালিক-শ্রমিক নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেন। বড় শহরগুলো থেকে মানুষ রীতিমতো পাালাতে থাকে। রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ে। দিনেদুপুরে শহরে নেমে আসে ভূতুড়ে নীরবতা।
যুদ্ধ বাধার মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ ভয়ের পরিবেশ। মনে হয়েছে যেন সব মানুষ অচিরেই মরতে যাচ্ছে। নিরাপদ কোনো কেল্লায় আশ্রয় না নিলে আর কারো রেহাই নেই। মানুষের জীবনের এক বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষ মারা যাবে। তাই বলে রাস্তায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে বাসের নিচে পড়ে কিংবা চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বিলিয়ে দেয়া যুক্তিগ্রাহ্য নয়। আবার করোনাকে নিয়ে আমাদের সমষ্টিগত এই আচরণও প্রত্যাশিত হতে পারে না। এভাবে সব ছেড়ে ছুড়ে বা গুটিয়ে নিয়ে কোনোভাবে মহামারী বা বিপর্যয় থেকে কেউ কখনো নিজেদের বাঁচাতে পারেনি। জানা ইতিহাসে বিভিন্ন মহামারীর সময় মানুষ একই পরিণতি দেখেছে। মানুষ নিজে থেকে কিছু গায়ের জোরে মোকাবেলা করে ফেলেছে, এমন ঘটেনি। সেটা হলে করোনায় সবচেয়ে উন্নত ও সক্ষম দেশ আমেরিকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক বা পাঁচ লাখের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার কথা নয়। তাদের অভুতপূর্ব উন্নতি করোনা মহামারী ঠেকানোর ক্ষেত্রে কোনো কাজে আসেনি। আমাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে বিপরীত। সব ধরনের অযোগ্যতা অদক্ষতা অনিয়ম, সর্বোপরি দরিদ্র হওয়ার পরও এদেশে আট হাজারের কিছু বেশি মানুষ করোনায় প্রাণ হারিয়েছে।
অপরিণামদর্শী প্রচারণার ফলে আমাদের দেশের শিক্ষা ও অর্থনীতি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে রেখেছে। পুরো একটা প্রজন্ম এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে যে, তা পুষিয়ে নেয়ার কোনো সুযোগ হয়তো থাকবে ন। অটোপাসের সংস্কৃতি চালু হয়েছে আমাদের দেশে। ‘পাসের’ আগে ‘অটো’ শব্দ যোগ হয়ে মূলত একটা বদনামের আমরা জন্ম দিলাম। মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন না হওয়ায় এই অটোপাস ভবিষ্যতে বিপুল বঞ্চনার জন্ম দেবে। ডাক্তার, প্রকৌশলীসহ মেধাবীদের জন্য রক্ষিত জায়গাগুলো বেশি করে ব্যাক বেঞ্চারদের দখলে চলে যেতে পারে। অনেক মেধাবী আগের পরীক্ষায় ভাগ্যের ফেরে গ্রেডপয়েন্ট কম পেয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে অটো গ্রেড পয়েন্ট পরের বার কমেছে। এবার উচ্চ শিক্ষার সুযোগের জন্য এই অটোগ্রেড পাস মার্ক হিসেবে ব্যবহার করায় দ্বিতীয়বার তারা বঞ্চিত হবে। এই বঞ্চনার ধারা চলতেই থাকবে। একটি মেধাহীন জাতি গঠনের দ্বার খুলে দিতে করোনার প্রচারণা কাজে এসেছে এভাবে।
করোনার কারণে আমাদের দেশে মানুষের সম্মানহানি লাঞ্ছনা ও ভয়াবহ ভোগান্তি নেমে এসেছিল। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো এখনো রয়েছে। করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে যারা ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়েছেন, তারা সম্মানহানির শিকার হয়েছেন। যারা করোনা ছাড়া ঠাণ্ডাজনিত মারাত্মক অসুস্থতায় পড়েছেন তারা সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। তাদের আত্মীয় স্বজনের হয়রানি ছিল সীমাহীন। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণে তারা কোথাও চিকিৎসা পাননি। চিকিৎসা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে অনেকে তখন রাস্তায় প্রাণ দিয়েছেন। একসময় আমাদের পুরো চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। অপরদিকে চিকিৎসা নিয়ে একটি দলের দুর্নীতি করার দরজা খুলে যায়। সাহেদ সাবরিনাদের মতো বাটপাড়দের ‘বাণিজ্য’ জাতির সামনে উন্মুক্ত হয়েছে। এমনকি, এরা যে দেশের দুর্নীতিবাজদের মহাসমুদ্রে ভাসমান হিমশৈলীর চূড়া, সেটাও বোঝা গেছে।
আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো বেশি। এই ক্ষতির মাত্রা নিচের দিক থেকে বেশি। অর্থাৎ দরিদ্র শ্রেণী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা কোনোমতে তিনবেলা খাবার জোগাড় করতেন তারা দুই বেলা খেয়েই সন্তুষ্ট থেকেছেন। প্রায় ২০ বছরে দেশের দারিদ্র্য যতটা উন্নতি হয়েছিল, করোনার এক ধাক্কায় তা আগের জায়গায় ফিরে যায়। নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্তের অবস্থা অবর্ণনীয়। চাকরি হারিয়ে সামান্য সঞ্চয়ও তারা শেষ করে ফেলেছেন। যারা চাকরি হারাননি তাদের বেশির ভাগের মজুরি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। জনসাধারণের সামান্য একটা অংশ যারা অতি ধনী তাদের অবস্থায় দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। তাদের আয় উল্টো এই সময়ে বেড়ে গেছে। সারা বিশ্বেই এমনটি ঘটেছে। সরকার ঘোষিত বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ অনেকের জন্য দুর্নীতির করার বিপুল সুযোগ খুলে দিয়েছে। মানুষের অসহায় অবস্থাকে পুঁজি করে এই সময়ে বাংলাদেশে একটা গোষ্ঠী নিজেদের অর্থবিত্ত বাড়িয়ে নিয়েছে।
মানুষের সমাজে যতটা দুর্দশা ও ভোগান্তি নেমে এসেছে করোনা কি প্রকৃতপক্ষে ততটা বিধ্বংসী? এক বছরের তথ্য-প্রমাণ সামনে রাখলে মানুষ সম্ভবত নিজেদের বোকা হিসেবে দেখতে পাবে। আরো বোঝা যাবে, মানুষের যে বুঝ বুদ্ধি ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা, সেটা বিশেষ পরিস্থিতিতে সঠিক হিসাব করতে ব্যর্থ হয়েছে।
চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন’ জানিয়েছে- ২০২০ সালে চার হাজার ৯৯৬ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে বাংলাদেশে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এই বছর সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা কম। এর আগের বছর ২০১৯ সালে সড়কে প্রাণ হারায় সাত হাজার ৮৫৫ জন। বিগত বছরে সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাওয়ার কারণ করোনা মহামারী। দেখা গেছে, ২০২০ সালে এপ্রিল ও মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর সংখ্যা কমে প্রায় এক তৃতীয়াংশ হয়ে যায়। এর কারণ সারা দেশে তখন অঘোষিত কারফিউ চলছিল। সারা দেশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। যান চলাচল একেবারে কমে যায়। হিসাব মতে দেখা যাচ্ছে- ২০২০ সালে করোনায় প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা আর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা সমান। অন্য বছরের হিসাব হাজির করলে দেখা যাবে, করোনায় মৃত্যুর চেয়ে সড়কে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সড়কে একটি দুর্ঘটনায় প্রাণ যাওয়া মানুষের চেয়ে এসব দুর্ঘটনার পর যে দুর্ভোগ নেমে আসে সেটা গভীর প্রভাব ফেলছে মানুষের জীবনে। অনেকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব অবর্ণনীয়। ইলিয়াস কাঞ্চন তার স্ত্রী-সন্তানকে হারানোর পর নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন। আরো অনেকে তার সাথে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু সড়কে মৃত্যুহার কমাতে সরকার দৃশ্যমান কোনো কাজ করতে পারেনি। এর নেতিবাচক প্রভাব তুলনা করলে তা এ পর্যন্ত এক বছরে করোনায় মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি।
পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হচ্ছে বহু বাংলাদেশী মানুষের মধ্যে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেখা যাচ্ছে- ২০২০ সালে দেশে ১১ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেছে। দেখা গেছে, দেশে এককভাবে হৃদরোগে মারা গেছে এই বছর এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ। জরিপে অন্যান্য রোগে এই সময়ে কত মানুষ মারা গেছে সেটা উপস্থাপন করা হয়নি। তবে হৃদরোগ ছাড়া আরো অনেক জটিল রোগ আমাদের রযেছে। সেসব রোগীর সংখ্যা এর চেয়ে কম নয়। সুতরাং করোনা নিয়ে আমাদের উচ্চ প্রচারণার ভিত্তি এক বছরে আপাতত প্রমাণিত হয়নি। এটি দেশে জারি থাকা রোগব্যাধি ও বিপর্যয়গুলোর চেয়ে বেশি ভয়াবহ বলে আলামত পাওয়া যায়নি।
করোনা নিয়ে সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছিল এমন ব্যতিক্রমী একটি গোষ্ঠীও দেখা যাচ্ছে। এই গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম। সংখার দিক দিয়ে তারা শতাংশের মধ্যে পড়েন না। সংখ্যাল্পতার কারণে তাদের মূল্যায়ন গ্রাহ্য হয় না বৃহত্তর সমাজে। এই ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে সামান্য কিছু বিজ্ঞানী ঠিকই শুরু থেকে সোচ্চার ছিলেন। তবে তাদের কথাকে কেউ পাত্তা দেননি। ব্যতিক্রমী দেশও ছিল যারা দৈনন্দিন কাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে, লকডাউনের মতো বিপর্যয়কর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তারা পরিস্থিতির স্বাভাবিক গতিধারা রোধ করে দেয়ার স্পর্ধা দেখাননি। তবে যতটুকু সতর্কতা সাধ্যের মধ্যে নেয়া যায় সেটা তারা করেছেন। এতে করে তারা করোনায় অত্যন্ত সতর্ক জাতিগুলোর চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন নজির কেউ দেখাতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে খোদ ইউরোপের সুইডেনের নাম নেয়া যায়। ইউরোপের দেশগুলো যখন কঠিন লকডাউন করেছে সুইডেন তখন মানুষের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যক্রমের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। তারা ‘হার্ড ইমিউনিটি’র কথা বলেছিলেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর বিজ্ঞানীরা সুইডেনের নেয়া ব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলে। দেশটির ভয়াবহ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। করোনায় নাস্তানাবুদ হওয়া যুক্তরাজ্য ও স্পেনের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে- সুইডেনের করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়নি।
স্পেনের জনসংখ্যা চার কোটি ৬৯ লাখ। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয় ৩১ লাখ ৩৩ হাজার ১২২ জন। মারা গেছেন ৬৭ হাজার ১০১ জন। গত সোমবার পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, দেশটির জনসংখ্যার সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি আক্রান্ত হয়েছে। আর মারা গেছে জনসংখ্যার দশমিক ১৪ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ লাখ ১৫ হাজার ৫০৯ জন। মারা গেছেন এক লাখ ২০ হাজার ৫৮০ জন। দেশটির জনসংখ্যা ছয় কোটি ৬৬ লাখ। জনসংখ্যার ৬ দশমিক ১৭ শতাংশআক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন জনসংখ্যার দশমিক ১৮ শতাংশ।
আর সুইডেনে আক্রান্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৩১ হাজার ১৬৬ জন। মারা গেছেন ১২ হাজার ৬৪৯। দেশটির জনসংখ্যা এক কোটি দুই লাখ। জনসংখ্যার ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন দশমিক ১২ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, সুইডেন কোনো ধরনের বাড়াবাড়িমূলক বিধিনিষেধ আরোপ ছাড়াই করোনায় আক্রান্তের হারে ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি হয়নি। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে কম। এ অবস্থায় কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা সুইডেনের ক্ষেত্রে ঘটেনি। লকডাউন কিংবা শারীরিক দুরত্ব ধরনের কড়াকড়ি আরোপের কারণে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় মানসিক চাপে পড়েনি সুইডেনের মানুষ।
মার্চের শুরুতে যখন করোনাভাইরাস আমাদের দেশে সংক্রমিত হওয়ার খবর দেয়া হচ্ছিল, সংবাদমাধ্যম এর বিরাট কাভারেজ দিয়েছে। বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কিভাবে নিরাপদ থাকা যাবে; শারীরিক দূরত্ব, সামাজিক দূরত্ব কত ফুট হবে, মাস্ক না পরাটা কত বেশি ক্ষতিকর- এসব নিয়ে বিপুল আলোচনা। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে চারদিকে হইচই। জীবণুনাশক সাবানের কার্যকারিতা, কিভাবে হাত ধুতে হবে ঘন ঘন, এসব নিয়ে ব্যস্ততা। এসব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিপুল সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। এ ধরনের স্বাস্থ্যবিধি আমাদের সবসময় অবলম্বন করা দরকার। একজন রুচিশীল মানুষ হিসেবে এগুলো আমাদের প্রতিদিনের চর্চায় অবশ্যই থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের সংবাদমাধ্যম এগুলো নিয়ে এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তাতে পুরো জাতির প্যানিক সিন্ড্রোম তৈরি হলো। তা থেকে ক্ষতি ছাড়া, লাভ কিছু হয়নি।
jjshim146@yahoo.com