বসন্তকালীন রোগ থেকে যেভাবে মুক্ত থাকবেন
বসন্তকালীন রোগ থেকে যেভাবে মুক্ত থাকবেন - ছবি সংগৃহীত
এসেছে বসন্ত। হলুদের ছোঁয়া লেগেছে সবখানে। মনে, প্রকৃতিতে। জেগেছে প্রকৃতি। পাখির কলকালতিতে মুখর চারপাশ। কিন্তু ঋতু পরিবর্তনে শরীর মানিয়ে নিতে সময় লাগে। নতুন ঋতুতে নতুন করে দেহকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। এতে দেখা দিতে পারে নতুন রোগবালাই।
বসন্ত ফুলের ঋতু। ফুলে ফুলে ভরে যায় চারপাশ। ফুল হলেই কিন্তু খুব ভালো নয়। কথায় আছে না ফুলে কাঁটা থাকে। ফুল বেশি হলে পরাগরেণু বেশি ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। যত বেশি পরাগরেণু তত বেশি হাঁপানি, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট। ফুলের পরাগরেণু অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে হাঁপানির প্রকোপ বৃদ্ধি করে। তাই এ সময়টাতে হাঁপানি আক্রান্তদের কষ্ট বাড়ে। হাঁপানি আক্রান্ত হলে সাবধান। বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পড়ুন। ওষুধ নিতে ভুলবেন না। বেশি শ্বাসকষ্ট হলে ইনহেলার ঘন ঘন নিতে পারবেন। নাকের অ্যালাজিক রাইনাইটিসও কিন্তু এ সময়টাতে বেশি কষ্ট দিতে পারে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরেই কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে নাক পরিষ্কার করুন। নাক বন্ধ থাকলে কুসুম গরম পানির ভাঁপ টানতে পারেন।
সর্দি-জ্বর যেটাকে আমরা ভাইরাস জ্বর বলি সেটিও দেখা দিতে পারে বসন্তের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে। তাই জ্বর হলেই এন্টিবায়োটিক নয়। ভাইরাস জ্বরে কিন্তু এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। কুসুম গরম পানিতে গা মোছালে জ্বরের প্রকোপ কমে আসবে। সাথে চলতে পারে প্যারাসিটামল। সর্দি থাকলে এন্টিহিস্টামিন সেবন করা যেতে পারে। তবে জ্বর সাতদিনের বেশি থাকলে, প্রকোপ অনেক বেশি হলে চিকিৎকের পরামর্শে চলতে পারে এন্টিবায়োটিক।
বসন্তকালে শীতের আবহাওয়ার সময়কার ঘুমন্ত ভাইরাসগুলো একটু গরম পাওয়ায় বাতাসের মাধ্যমে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। জলবসন্ত এবং হাম ভাইরাসজনিত রোগ। এগুলোকে আমরা সংক্রামক ব্যাধি বলে থাকি। কারণ এগুলো খুবই ছোঁয়াচে। জলবসন্ত তেমন মারাত্মক রোগ নয় যদিও যার কোনোদিন এ রোগ হয়নি তার জন্য ছোঁয়াচে। সে জন্য এ রোগ হলে যার জীবনে এ রোগ হয়নি তাকে রোগীর কাছ থেকে দূরে রাখা উচিত।
সরাসরি সংস্পর্শে এবং রোগীর হাঁচি-কাশির মধ্য দিয়ে এ রোগ পরিবেশে ছড়িয়ে যায়। জলবসন্ত এবং হাম হলে রোগীকে কখনো ঠাণ্ডা লাগাতে দেবেন না। কারণ এ দু’টি রোগেই ঠাণ্ডা লেগে নিউমোনিয়া কিংবা ব্রংকো-নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। হাম পরবর্তী শিশুর ব্রংকো-নিউমোনিয়া শিশুর জন্য প্রাণঘাতী সমস্যায় পরিণত হতে পারে। এখনো আমাদের দেশে কুসংস্কার রয়ে গেছে যে, জলবসন্ত এবং হাম হলে তাকে ঠাণ্ডা খাবার খাওয়াতে হবে। এটা একটা ভয়ঙ্করধর্মী কুসংস্কার। তাই এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা থাকা প্রয়োজন।
আরেকটি ব্যাপার দেখা যায়, পানি বসন্ত এবং হাম রোগীকে তার আত্মীয় স্বজন মাছ, মাংস খেতে দেন না। এটাও একটা ভ্রান্ত ধারণা। কারণ এ দু’টি রোগেই শরীরে প্রচণ্ড আমিষের ঘাটতি হয়, তার ওপর যদি তাকে আমিষ থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে তার জন্য হয়ে দাঁড়াবে অতিরিক্ত বিপদের ঝুঁকি। মনে রাখবেন, রোগীকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। রোগীকে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফলমূল খেতে দিন। এতে বসন্তের ঘা পাকবে না।