কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া - ছবি সংগৃহীত
দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি লাভের দোয়া : হজরত আবু সাইদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত- আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ওই দোয়াটি সকাল-সন্ধ্যা পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার সমস্ত ঋণ ও দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন।’ দোয়াটি হলো- উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি, ওয়াল হুজনি, ওয়া-আউজুবিকা মিনাল আজজি, ওয়াল কাছালি, ওয়া-আউজুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াল জুবনি, ওয়া-আউজুবিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি, ওয়া-কাহরির রিজাল।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, আরো আশ্রয় নিচ্ছি অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আরো আশ্রয় নিচ্ছি কৃপণতা ও কাপুরুষতা থেকে আরো আশ্রয় নিচ্ছি ঋণের প্রবলতা ও মানুষের চাপপ্রয়োগ থেকে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৫৫)।
সব অনিষ্ট থেকে হিফাজত থাকার দোয়া : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমরা এক বর্ষণমুখর অন্ধকার রাতে নবী সা:কে খুঁজতে বের হলাম, যেন তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়েন। তাঁর সাথে যখন সাক্ষাৎ হলো তিনি বললেন, ‘কুল’ অর্থাৎ, বলো। আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি আবার বললেন, ‘কুল’ অর্থাৎ, বলো। আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি আবার বললেন, ‘কুল’ অর্থাৎ বলো। আমি আরজ করলাম, আল্লাহর রাসূল! কী বলব? তিনি বললেন, ‘কুলহুয়াল্লাহু আহাদ’ ও ‘মুয়াওয়াজাতাইন’ (অর্থাৎ, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস)। সন্ধ্যায় ও সকালে তিনবার। এ সূরাগুলো পড়বে, সব কিছু থেকে তোমার হিফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮২, জামে তিরমিজি: ৩৫৭৫)।
বিষধর প্রাণীর ক্ষতি থেকে নিরাপত্তার দোয়া : হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি বিকেল বেলা এই দোয়াটি তিনবার পড়বে, সে রাতে কোনো বিষধর প্রাণী তার ক্ষতি করতে পারবে না। উচ্চারণ : ‘অউজু বি কালিমা তিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক।’ অর্থ : আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় আমি তাঁর কাছে তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৬৫, মুসনাদে আহমাদ: ৭৮৯৮, নাসাঈ: ৫৯০)।
শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার দোয়া : হজরত আবু আয়াশ রা: সূত্রে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে উপনীত হয়ে এই দোয়া (নিম্নোক্ত) পড়ে এটা তার জন্য ইসমাঈল আ:-এর বংশীয় একটি গোলাম ‘আজাদ’ করার সমান হবে, তার জন্য ১০টি পুণ্য হবে ও ১০টি পাপ মোচন করা হবে এবং তার ১০টি মর্যাদা বুলন্দ করা হবে এবং শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে যতক্ষণ না সন্ধ্যা হয়। আর যদি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে তা বলে, তাহলে ভোর পর্যন্ত অনুরূপ ফজিলত পাবে। বর্ণনাকারী হাম্মাদ রহ.-এর বর্ণনায় রয়েছে- এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:কে স্বপ্নে দেখে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আবু আয়াশ রা: আপনার নামে এই এই বলেছে। রাসূল সা: বললেন, ‘আবু আয়াশ সত্যিই বলেছে। দোয়াটি হলো- উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।’
অর্থ : একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (আবু দাউদ: ৫০৭৭, বুখারি: ৩২৯৩, ইবন মাজাহ: ৩৭৯৮, আহমাদ: ৮৭১৯, মুসলিম: ২৬৯১)।
জান্নাত পাওয়ার দোয়া (সাইয়িদুল ইসতিগফার) : হজরত শাদ্দাদ বিন আওস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, হজরত মুহাম্মদ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের শুরুতে সাইয়িদুল ইস্তিগফার পাঠ করবে, সে ওই দিনে ইন্তিকাল করলে জান্নাতি হবে, আর যদি সন্ধ্যায় পাঠ করে এবং এ রাতেই তার ইন্তিকাল হয়, তাহলে সে জান্নাতি হবে। দোয়াটি হলো- উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানি ওয়া আনা আব্দুকা ওয়া আনা আলা আহিদকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবুউ বিজান্বি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগিফরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা।’
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার গোলাম। আমি আপনার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ওপর আছি যথাসম্ভব। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আমার ওপর আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। আবার আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ব্যতীত আর কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারবে না। (সহিহ বুখারি : ৬৩০৬)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে, সকাল-বিকাল উপরোল্লিখিত হাদিসগুলোর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন এবং বর্ণিত ফজিলতগুলো পাওয়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : গবেষক, মোহাদ্দিস; দারুল উলুম মোহাম্মদ পুর কওমি মাদরাসা, চাটমোহর, পাবনা
osmangoninomani@gmail.com