সিঙ্গাপুর : সভ্যতা, সংস্কৃতি আর আভিজাত্যের বিস্তৃত শো-পিস
সিঙ্গাপুর - ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম আধুনিক নগরী সিঙ্গাপুর। বিভিন্ন সংস্কৃতি, স্থাপত্য শৈলী, আভিজাত্যের এক বিশাল সমাহার, এ যেন এক বিস্তৃত শো-পিস। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মাঝখানে অবস্থিত সাগরঘেরা এই পুচকে রাষ্ট্রটি ৬০টি ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত।
সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও হংকং ইস্ট এশিয়ান টাইগারদের একই গ্রুপের সদস্য বলা যায়। কারণ এই সমস্ত দেশ বিগত কয়েক বছরে বিশাল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
চলুন জেনে নেয়া যাক সিঙ্গাপুরের সংস্কৃতি, জীবনাচার সম্পর্কে :
* মালয়েশিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান ও অন্য এশীয় ব্যবসায়ীদের (চীনা, ভারতীয়, খমের ইত্যাদি) একটি মিশ্র জনগোষ্ঠী। সিঙ্গাপুরের মোট জনসংখ্যা চীনারা প্রায় তিন-চতুর্থাংশ, এরপরের অবস্থান মালয়েশিয়ান নৃগোষ্ঠীর, তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত।
* সিঙ্গাপুরের সংস্কৃতি মালয়, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরেশিয়ান সংস্কৃতি প্রভাবগুলির একটি ক্ষুদ্র একাংশ। এখানকার আদিবাসী মূলত তাইওয়ান থেকে আগত যা অস্ট্রোনেশিয়ানদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
* এই জাতিগত বৈচিত্র্যের কারণে এ দেশে সরকারিভাবে স্বীকৃত চারটি ভাষা হলো : ইংরেজি, মালয়, চীনা, তামিল। যদিও মালয়কে দেশের জাতীয় ভাষা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
* ২০১৩ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বসবাসের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর হিসেবে রেকর্ড করেছে এই সিঙ্গাপুর।
* দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে সুখী দেশ' হিসাবেও বিবেচনা করা হয় দেশটিকে। এ দেশের মানুষ একে অপরের প্রতি মায়াময় এবং বিনয়ী।
* বিশ্বের নিম্ন জন্মহারের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সিঙ্গাপুরে বিদেশিরাই জনসংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে৷ গত ২০ বছরে সেখানে বিদেশি জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি৷
* সিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের একটি।
* সিঙ্গাপুরকে বহু বছর ধরে ব্যবসায়িক বিশ্ব এশীয় বাজারে একটি নিরাপদ, সমৃদ্ধ এবং দক্ষ প্রবেশের স্থান হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। সিঙ্গাপুর ব্যবসার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। যাকে এক কথায় বলা যায়, উন্নত প্রযুক্তির সাথে উন্নততর ব্যবসায়িক কার্যক্রম।
* পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের সাথে সিঙ্গাপুরের কৌশলগত অবস্থান বিশ্ব-বাণিজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে নগর-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ভৌগোলিক অবস্থান থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও মিয়ানমারের বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম। আসিয়ান অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের জন্য ভবিষ্যতে সাফল্যের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের অবস্থান, কাঠামো, কর্মপদ্ধতি ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র হিসেব পরিগণিত হয়।
* এ দেশে সারা বছর ধরে প্রায় অভিন্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। গড় মাসিক তাপমাত্রা জুনে প্রায় ৮১ ডিগ্রি ফারেনহাইট ও জানুয়ারিতে ৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এর অন্যতম কারণ সামুদ্রিক ও নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থান।
* আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সিঙ্গাপুরের খাবারও বেশ পরিচিত। সামুদ্রিক খাবারের জন্য খ্যাতি ছড়িয়ে সারা বিশ্বে ২০১১ সালে, সিঙ্গাপুরের চারটি খাবারকে 'বিশ্বের ৫০টি সর্বাধিক সুস্বাদু খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল- সিএনএন ইন্টারন্যাশনালে পরিচালিত একটি বিশ্বব্যাপী অনলাইন সমীক্ষায়।
' হাইনান মুরগির চাল', 'মরিচ কাঁকড়া', 'কাতং লাকসা', ও 'রোটি প্রতা' বিখ্যাত সিঙ্গাপুরীয়ান খাবার।
এ দেশে আর একটি সাধারণ অভিবাদন হলো 'আপনি কি খেয়েছেন?' অন্য ব্যক্তিকে শুভেচ্ছা জানাতে এটি একটি উপায় বটে!
* সিঙ্গাপুরের রাজনৈতিক আবহাওয়ায়ও বেশ স্থিতিশীল। সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা পিতা লি কুয়ান ইউয়ের মতে, সিঙ্গাপুর প্রায় ৯০০০ মাল্টি-ন্যাশনাল সংস্থাকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। সুশাসনের ভালো ব্যবস্থাপনার দিকটিও নিশ্চিত করে দেশটি, যাতে নাগরিকরা নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারে।
* ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিকে বিশ্বের সর্বাধিক উন্মুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করে। দেশটি স্বল্প করের ব্যবস্থার জন্যও পরিচিত।
* দেশটি বিশ্ব-মানের স্বাস্থ্য অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা শিল্পে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের জন্যও অন্যতম।
* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা,ডায়েট, সবুজ পরিবেশে সমৃদ্ধ, স্বাস্থ্যবিধি জীবনাচরণে উৎসাহ দেয়। দেশটিকে 'গার্ডেন সিটি' হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এদেশে প্রকাশ্য স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ।
* অত্যন্ত পরিশীলিত অবকাঠামো, সেই সাথে যাতায়াত সিস্টেম নিয়েও দেশটি গর্বিত। যানজট নিরসনে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক রোড প্রাইসিং (ইআরপি) ব্যবস্থা চালু করেছে।
* ওয়াইল্ডলাইফ রিজার্ভস সিঙ্গাপুরে পরিচালিত সিঙ্গাপুরের একটি পর্যটক আকর্ষণ স্থান জুরং বার্ড পার্ক। এটি সিঙ্গাপুরের পশ্চিম কোণে ২০.২ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এই পার্কে ৬০০ প্রজাতির ৮০০০টিরও বেশি পাখির সংগ্রহ আছে। এবং এটি এশিয়ার বৃহত্তম।
* সন্ধ্যা নামার সাথেসাথে, নাইট সাফারিতে শাটারগুলি খোলে দেয় সিঙ্গাপুরে। নিশাচর প্রাণী এবং তাদের রহস্যময় আবাসে অন্য পৃথিবীতে স্বাগত জানায়। আলো আঁধারি খেলায়, গাঁ ছমছম জঙ্গলের পরিবেশে দেখা মিলবে চিতাবাঘ, হাতির মতো প্রাণির সাথে!
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়