ইসরাইলের ধ্বংস আর ফিলিস্তিনিদের মুক্তি চায় যে ইহুদিরা

জাহিদ হাসান মিঠু | Feb 21, 2021 02:28 pm
ইসরাইলের ধ্বংস আর ফিলিস্তিনিদের মুক্তি চায় যে ইহুদিরা

ইসরাইলের ধ্বংস আর ফিলিস্তিনিদের মুক্তি চায় যে ইহুদিরা - ছবি সংগৃহীত

 

ইসরাইল রাষ্ট্রকে আমরা ইহুদিবাদী রাষ্ট্র হিসেবেই জানি। কিন্তু ইসরাইলের মূলভিত্তি জুডাইজম বা ইহুদি ধর্মমত নয়। ইসরাইলের ভিত্তি হচ্ছে জায়োনিজম বা জায়নবাদ। জায়োনিস্টরা মনে করে, ইহুদিদের একটি আলাদা রাষ্ট্র থাকবে। যে রাষ্ট্রে বসবাস করার অধিকার থাকবে বিশ্বের সকল প্রান্তের ইহুদিদের। কিন্তু ইহুদি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হোক সেটা সকল ইহুদি চান না। বিশেষ করে অর্থোডক্স জিউসরা মনে করেন, যত দিন না মেসিয়াহ আসছেন তত দিন ইহুদিদের জন্য আলাদা কোনো রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই। যারা এই বিশ্বাস নিজেদের মধ্যে ধারণ করেন না তারা প্রকৃত ইহুদি ধর্ম থেকে সরে গেছেন বলে মনে করেন এই অর্থোডক্স ইহুদিরা, যারা হারেদি জিউস হিসেবে পরিচিত।

ঊনিশ শতকের শেষ দশকে যখন রাজনৈতিকভাবে জায়োনিজম প্রতিষ্ঠিত হয় তখন থেকেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন হারেদি জিউসদের রাবিরা। তারা মনে করেন, সেক্যুলার জায়োনিস্টদের কারণে ইহুদিরা ধর্মচ্যূত হয়ে পড়বেন। সে কারণে গত শতকের ত্রিশের দশকে অর্থোডক্স জিউসদের রাবিরা ইউরোপে অবস্থানরত হারেদি জিউসদের ইজরায়েল রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনে যেতে নিষেধ করেন।

জায়োনিজম বিরোধী বেশ কয়েকটি জিউস গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কট্টরপন্থী নাটুরেই কার্টা (Neturei Karta)। ১৯৩৮ সালে অর্থোডক্স জিউসরা এই সংগঠন গঠন করে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তারা এর বিরোধিতা করে আসছে। ১৮৮০ সালের দিক থেকে যখন ধীরে ধীরে ফিলিস্তিন অভিমুখে জায়োনিস্ট ইহুদিদের যাত্রা শুরু হয় তখন আরবদের মতো হারেদিদের কাছেও বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয়েছিল। পরবর্তীতে তারা আগুদাত ইজরায়েল নামে অন্য আরেকটি অর্থোডক্স জিউস গ্রুপের সহায়তা নিয়ে জায়োনিজম প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। কেননা তারা বুঝতে পেরেছিলেন জেরুজালেমের ইহুদিদের উপর খুব শীঘ্রই আধিপত্য বিস্তার করবে জায়োনিস্টরা। যে জায়োনিস্টরা ইহুদি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। অথচ ইহুদি ধর্মমতে, জাতীয়তাবাদের কোনো সুযোগ নেই।

নাটুরেই কার্টার সদস্যরা মনে করেন, জায়োনিস্টরা ইহুদি ধর্মমতকে বিকৃত করছেন। এর পরিবর্তে তারা সেক্যুলারিজমকে গ্রহণ করছেন। তারা বিশ্বাস করেন, ইহুদি শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করবে এবং ধর্মীয় বিধিবিধানগুলো সঠিকভাবে মেনে চলবে। কিন্তু জায়োনিস্টরা ধর্মীয় বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে জাতীয়তাবাদকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা মরক্কো, ইরান, আলজেরিয়া, ইয়েমেনসহ বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে ইহুদিদের ইসরাইলে নিয়ে আসছে এবং তাদের ধার্মিক থেকে অধার্মিক করে তুলছেন। অর্থোডক্স ইহুদিরা নারীদের পর্দায় বিশ্বাস করেন। এবং তা বেশ কঠোরভাবে।

১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকে নাটুরেই কার্টার সদস্যরা নাগরিকত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন। এমনকি তারা ইসরাইল সরকারকে কোনো কর দেন না এবং ইসরাইলের সেনাবাহিনীতেও যোগদান করেন না। এই অর্থোডক্স ইহুদিরা হিব্রুর পরিবর্তে য়িদিশ ভাষায় কথা বলেন। আর প্রার্থনার সময় ব্যবহার করেন তাদের প্রাচীন পবিত্র ভাষা 'ল্যাশন হা কোদেশ'। তারা এখনো নকবা দিবসের দিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইসরাইলের দূতাবাসের সামনে ফিলিস্তিনিদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিবাদ করেন। ইসরাইলের পতাকায় আগুন ধরিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। তাদের মূলমন্ত্রই হচ্ছে 'আ জিউস ইজ নট আ জায়োনিস্ট'।

অথচ আরবের কথিত মুসলিম নেতারা জায়োনিস্টদের বন্ধু হিসেবে সাদরে গ্রহণ করছেন বিনা দ্বিধায়, হয়ে যাচ্ছেন জায়োনিস্ট৷


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us