অতিরিক্ত ব্যায়ামে হয় যেসব ক্ষতি
অতিরিক্ত ব্যায়ামে হয় যেসব ক্ষতি - ছবি সংগৃহীত
ব্যায়াম করলে জোশ আসে, কর্মক্ষমতা বাড়ে। হাঁটাচলায় অসুবিধা হয় না , বরং ভালো থাকে শরীরের পেশি। এছাড়া বডি করতে পারলে মেয়েরা যেমন আলাদা অ্যাডমায়ার করে তেমনই হিরোইজমের একটা ফ্যান্টাসিও কাজ করে মনে মনে। কিন্তু বেশি ব্যায়াম যে শরীরের ক্ষতি বৈ ভালো করে না তা জানেন কী?
আমেরিকার দুই ইউনিভার্সিটিতে কিছু সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে বেশি ব্যায়ামের ফল মারাত্মক। এমনকি তা হয়ে উঠতেও পারে মৃত্যুর কারণও। শুনতে অবাক লাগলেও আসলে এটা এখন প্রমাণিত সত্য।
ঠিক কী কী সমস্যা সৃষ্টি করে অত্যাধিক ব্যায়ামে? এই লেখায় রইল তারই কিছু অনুসন্ধান।
১। কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা :
যারা ব্যায়াম নিয়মিত করেন তারা জানেন এতে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। হৃৎপিণ্ডের গতি বাড়ে। কিন্তু বেশি কোনো কিছুতেই ভালো না। অত্যাধিক ব্যায়ামের আর্টারি বা ধমনীর আকার বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনকি ছন্দপতন হতে পারে হৃৎপিণ্ডের গতিরও। সাধারণ হার্টরেট বদলে গেলে রক্তসঞ্চালনে সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বেশি ব্যায়ামের জন্যই অনেক অ্যাথলিটের হৃৎপিণ্ডের উর্দ্ধমুখী ধমনীতে সমস্যা দেখা দেয়।
২। অত্যাধিক স্ট্রেস ও নার্ভ প্রবলেম :
আজকের সময়ে হাজারও কাজের মধ্যে যখন ব্যায়ামে আপনি সময় দিচ্ছেন অনেকটা, তখন কিন্তু নিজেই ডেকে আনছেন নিজের বিপদ। রিসার্চ বলছে, অত্যাধিক ব্যায়ামে আমাদের শরীরে থাকা কর্টিসল নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি আসলে একটি স্ট্রেস হরমোন যা বাড়লে আমাদের নার্ভে খুব চাপ পড়ে। এই স্ট্রেস হরমোনের অত্যাধিক ক্ষরণ মোটেই ভালো নয়। এতে অ্যাংজাইটি থেকে শুরু করে অনেকরকম নার্ভাস প্রবলেম হতে থাকে। চিন্তার উপর আরও চিন্তা, সহজে মুষড়ে পড়া বা কথায় কথায় ডিপ্রেশড্ হওয়া তখন রুটিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই বিজ্ঞানীদের পরামর্শ একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ব্যায়াম না করাই ভালো।
৩। ইমিউনিটি লেভেল :
অত্যাধিক ব্যায়াম করার পর প্রায় তিন দিন কিন্তু আমাদের শরীর কিন্তু খুব ভালনারেবল হয়ে পড়ে। ফলে বাইরের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে শরীর। এতে সহজেই কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এর কারণ কিছুই না। ক্যালোরি রেস্ট্রিকশনের জন্য প্রয়োজনের বেশি খাওয়া যায় না। অন্যদিকে অতি ব্যায়াম আমাদের আরো বেশি ক্যালোরি খসিয়ে দেয়। ফলে ধাক্কা খায় শরীরের ইমিউনিটি লেভেল। আর ইমিউনিটি লেভেলে ঘাটতি মানে কে না জানে তা আসলে পথ করে দেয় হাজারও রোগকে।
৪। আঘাতের আশঙ্কা :
অত্যাধিক ব্যয়াম শরীরের বিভিন্ন পেশিতে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কাও বাড়িয়ে দেয়। টেনডন, লিগামেন্ট, হাড় এগুলো ব্যায়ামের সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলোয় সামান্য আঘাত লাগলে ব্যায়ামের সময় ঠিক কী পরিমাণ কষ্ট হয় তা যারা ব্যায়াম করেন তারা ভালো করেই জানেন। রিসার্চ বলছে বেশি ব্যায়াম যারা করেন তাঁরা আকছার এমন চোট পান, কিছু সময় তো ফিজিওলজির সাহায্য নিতে হয় ব্যথাগুলো সারিয়ে তুলতে। তাই ভেবে নিন আরেকবার ঠিক কতটা ব্যায়াম করবেন।
৫। মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যা :
দেখা গেছে যেসব মেয়েরা ব্যায়াম করেন না বা কম করেন তাদের কিন্তু কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এ মৃত্যু হয় না কিন্তু অত্যাধিক ব্যায়ামে যেসব মহিলারা অভ্যস্ত তারা কিন্তু হাড়ের সমস্যায় ভোগেন একটা সময়ের পর। শুধু তাই না, হৃদরোগে মৃত্যুর হারও তাদের ক্ষেত্রে অনেকটাই বেশি। এছাড়াও অত্যাধিক ব্যায়ামে মেনস্ট্রুয়েশনেও সমস্যা হয়। হাড়ের ক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিস এর সমস্যা দেখা যায়।
কোনোকিছুই যে বেশি ভালো না, তা তো জানা কথা। ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। দিনে একঘন্টা নিয়মিত মডারেট ব্যায়াম করলেই কিন্তু যথেষ্ট, এমনটাই মত ফিটনেস বিশেষজ্ঞদের। তাই এবার ব্যায়মের পরিমাণটা ঠিক করে নিতে হবে আপনাকেই। কারণ এর সুফল যেমন আছে কুফলও কম নয়।
সূত্র : বোল্ডস্কাই