ইমরান খানের সফর এবং পাক-লঙ্কা প্রতিরক্ষা চুক্তি
ইমরান খানের সফর এবং পাক-লঙ্কা প্রতিরক্ষা চুক্তি - ছবি : সংগৃহীত
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শ্রীলঙ্কায় তিন দিনের সফরে যাচ্ছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে এই সফরে দুই দেশের মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি হচ্ছে।
সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা চুক্তি করতে যাচ্ছে বলে এক খবর সম্পর্কে জিজ্ঞসা করা হলে লঙ্কার পররাষ্ট্রসচিব এডমিরাল প্রফেসর জয়নাথ কলমবাজ সাংবাদিকদের বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও অন্যান্য বিষয়ে বেশ কিছু চুক্তি সই হবে। তবে প্রতিরক্ষা বিষয়ক কোনো চুক্তি হচ্ছে না।
পাকিস্তান নিয়মিত শ্রীলঙ্কার আয়োজিত স্লিনেক্স নৌমহড়ায় অংশ নেয়। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে এ ধরনের কোন দ্বিপাক্ষিক বা বহুপক্ষীয় মহড়ায় শ্রীলঙ্কা আগে কখনো অংশ নেয়নি। পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ নিয়মিত কলম্বো সফরে এসেছে।
অবশ্য ভারতের সঙ্গে নিয়মিত নৌ মহড়ায় অংশ নেয় শ্রীলঙ্কা এবং কলম্বোতে ভারতীয় হাই কমিশনের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশের পদে সব সময় একজন নেভাল অফিসারকে নিয়োগ দেয়া হয়।
তবে সম্প্রতি পাকিস্তানের নেতৃত্বে আমান-২১ নামে আরব সাগরে যে আন্তর্জাতিক নৌমহড়া অনুষ্ঠিত হয় তাতে শ্রীলঙ্কার যুদ্ধজাহাজ এসএলএনএস গজবাহু অংশ নেয়। এছাড়া দুই দেশের নৌবাহিনী আলাদাভাবে আরেকটি মহড়ায় অংশ নেবে বলে জানা গেছে।
পাকিস্তানের আয়োজিত আমার মহড়ায় অংশ নেয়া ৪৫টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও তুরস্কও রয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে এই মহড়া আয়োজন করা হচ্ছে। এই মহড়া মূলত আরব সাগর কেন্দ্রিক।
ভারত অন্যদিকে ভারত মহাসাগরেই তার বেশিরভাগ মহড়া চালিয়ে থাকে। এখানে শ্রীঙ্কারও স্বার্থ রয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক জোটেরও (কোয়াড) অংশ ভারত। এই জোটের লক্ষ্য চীনকে দমানো। শ্রীলঙ্কা সামরিক দিক দিয়ে না হলেও অর্থনৈতিকভাবে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। শ্রীলঙ্কা কোয়াডের অংশ নয় এবং কোয়াড আয়োজিত মালাবার নৌমহড়াতেও অংশ নেয় না।
যদিও ভারত ও মালদ্বীপের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় একটি সামুদ্রিক সহযোগিতা চুক্তি আছে শ্রীলঙ্কার। সম্প্রতি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল শ্রীলঙ্কায় একটি সেমিনারে যোগ দিতে এসে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় সহযোগিতা কার্যক্রমগুলো সমন্বয়ের দায়িত্ব শ্রীলঙ্কাকে দেয়ার প্রস্তাব করেন। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোন প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা তৈরি হয়নি।
লঙ্কা-পাক সামরিক সম্পর্ক
পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে কোন প্রতিরক্ষা চুক্তি না থাকলেও এ ধরনের চুক্তি হওয়ার ক্ষেত্র পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে আছে। ২০০০ সাল থেকে ২০০৯ সালে তামিল বিদ্রোহ অবসানের আগ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ছিল খুবই শক্তিশালী। ২০০০ সালে তামিল বিদ্রোহীরা যখন জাফনা দখল করে সরকারি বাহিনীকে ঘেরাওয়ের মধ্যে ফেলে দেয় তখন শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানের কাছে মাল্টি-ব্যারেল রকেট লাঞ্চার (এমবিআরএল) সাহায্য চায়। পাকিস্তান সেগুলো বিমানে করে পৌছে দেয়। ২০০৬ সালে পাকিস্তানি হাই কমিশনার বাসির ওয়ালি মোহাম্মদকে হত্যার চেষ্টা করে বিদ্রোহীরা।
তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল সরথ ফনসেকা পাকিস্তান সফরে গিয়ে অস্ত্র পাঠানোর অনুরোধ করেন। তখন পাকিস্তান প্রতি ১০ দিনে এক জাহাজ ভর্তি অস্ত্র শ্রীলঙ্কায় পাঠাতো। ২০০৮ সালের আগস্টে তামিল বিদ্রোহীদের অবস্থানে বেশ কিছু সফল বিমান হামলায় পাকিস্তানি পাইলটরা অংশ নেয় বলে লঙ্কান মিডিয়ার খবরে উল্লেখ করা হয়। পাকিস্তানি সেনা অফিসাররা কলম্বোতে বসে বিদ্রোহ দমনে লঙ্কান বাহিনীকে পরামর্শ দিতো বলেও জানা গেছে।
২০০৯-এর পট পরিবর্তন
অবশ্য ২০০৯ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভূ-রাজনীতি প্রাধান্য পেতে থাকে। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান সম্পর্কে ভারত প্রবেশ করে। এরপর চীন প্রবেশ করে অর্থ নিয়ে। ভারত নিজেকে দেখাতে চায় তারাই ‘এই অঞ্চলে একমাত্র নিরাপত্তাদাতা’ এবং ‘প্রথম সাড়াদানে সক্ষম’। এসময় ভারতের সঙ্গে শ্রীঙ্কার সামরিক সম্পর্ক জোরদার হয় ও পাকিস্তান পিছিয়ে পড়ে।
ফলে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এখন অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের দিকেই মনযোগী হয়েছে।
সূত্র : এসএএম