ইসলামে মেয়ের অধিকার ছেলের চেয়ে বেশি!
ইসলামে মেয়ের অধিকার ছেলের চেয়ে বেশি! - ছবি সংগৃহীত
অনেকে মনে করেন, নারী নীতি এমন হতে হবে, যাতে সম্পত্তিতে পুত্র ও কন্যার উত্তরাধিকার সমান হয়। এটি যদি করা হয়, তাহলে কুরআনের সূরা নিসার আয়াত নম্বর ১১-এর নির্দেশিত বিধানের সরাসরি লঙ্ঘন করা হবে। অথচ এটি একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। প্রকৃতপক্ষে ইসলামে পুত্রের চেয়ে কন্যার আর্থিক অধিকার এবং সুবিধা বেশি। নিচে এ ব্যাপারে বিশ্লেষণ করা হলো যা আপনারা সবাই ভালো করে দেখবেন।
আমার একজন পরিচিত ব্যক্তির কথা বলছি। তারা দুই ভাই-বোন ছিল। তাদের বাবার পুরো সম্পত্তির মূল্য আজকের বাজারদরে প্রায় ৯০ লাখ টাকা। উত্তরাধিকার হিসেবে ছেলে পেয়েছিল ৬০ লাখ আর মেয়ে পেয়েছিল ৩০ লাখ টাকার সম্পত্তি। এতে দেখা যায়, বোনের চেয়ে ৩০ লাখ টাকা বেশি পেয়েছে ভাই। ইসলামী বিধান মোতাবেক (কুরআনের সূরা বাকারা, সূরা নিসা ও সূরা তালাক)-এর বিধান অনুযায়ী ওই ভাইকে তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার ভরণপোষণ করতে হয় যা বোনকে করতে হয় না। আমরা বিয়ের সময়কে ৩০ বছর ধরি। তাহলে ওই ভাইকে ৩০ বছরে আজকের বাজার দরে ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে অন্তত ৩০ হাজার টাকা করে ৩০ বছরে হয় (৩০ হাজার´১২´১২)= এক কোটি আট লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। অন্যদিকে বোনের এক্ষেত্রে কোনো টাকা খরচ করতে হয়নি।
এর মানে হচ্ছে, বোনের এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে- এক কোটি আট লাখ টাকা। তাহলে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বোনের ৩০ লাখ টাকা কম; অথচ জীবনভর ভরণপোষণের ক্ষেত্রে তার সুবিধা এক কোটি আট লাখ টাকা। এক কোটি আট লাখ থেকে ৩০ লাখ বিয়োগ করলে মোট সুবিধা পায় ৭৮ লাখ। এ হিসাবের মধ্যে আমি মোহরানা ধরিনি।
মোহরানা ধরলে কন্যার সুবিধা আরো বেড়ে যায়। অসংখ্য ক্ষেত্রে হিসাব করে দেখেছি, আর্থিক সুবিধা ইসলামী বিধানে পুত্রের চেয়ে কন্যার বেশি। মা-বাবার উত্তরাধিকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমান। ভাই-বোনরা, যে ক্ষেত্রে তারা উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমান পান। এসব ক্ষেত্রেও সব শ্রেণীর পুরুষের আর্থিক দায়িত্ব নারীর চেয়ে একইভাবে বেশি।
হিসাব করে দেখেছি, আমেরিকার জনগণ যদি ইসলামী আইন অনুসরণ করে তাহলে নারীরাই অধিক সুবিধা পাবেন। সেখানে উত্তরাধিকার খুব সামান্যই পাওয়া যায়। কেননা, বেশির ভাগ মানুষ ক্রেডিট কার্ডে চলেন, তাদের সঞ্চয় নেই বা থাকলেও তা খুবই সামান্য, ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে। সে দেশে মাসিক খরচ যদি মাত্র দুই হাজার ডলারও ধরি, তাহলে ৩০ বছরের বিবাহিত জীবনে ইসলামী আইন মোতাবেক নারীর সুবিধা হবে (দুই হাজার´১২´৩০)= সাত লাখ ২০ হাজার ডলার (বাংলাদেশী টাকায় সাত লাখ ২০ হাজার ´৭০= পাঁচ কোটি চার লাখ টাকা)।
এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আশা করি এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, পুরুষ ও নারীর আর্থিক সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম মূলত নারীদেরই অধিক সুবিধা দিয়েছে। তাই উত্তরাধিকার আইন বদলের যেকোনো প্রচেষ্টা অপ্রয়োজনীয়। তদুপরি ৯০ ভাগ মুসলিম অধিবাসীর বাংলাদেশে এ ধরনের সরাসরি কুরআন-বিরোধী বিধান প্রবর্তন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং দেশে উত্তেজনা সৃষ্টি হবে।
নারীদের সব ধরনের অধিকার দেয়া হোক, তাদের অধিকার যাতে তারা সত্যিকার অর্থেই পান এবং কেবল কথায় যাতে তা সীমাবদ্ধ না থাকে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এখানে উল্লেøখ করা প্রয়োজন, আমাদের দেশে বেশির ভাগ পুরুষ নারীদের উত্তরাধিকার দিতে চান না।
অথচ এই অধিকার আল্লাহ তায়ালার দেয়া। যে আল্লাহর আইনের আলোকে পুরুষ উত্তরাধিকার পায়, সেই একই কুরআনের আলোকে নারী উত্তরাধিকার পায়। সুতরাং নারীকে বঞ্চিত করা একটি অন্যায় কাজ। যারা কুরআনের আইন পরিবর্তন করতে চান, তাদেরকে বলছি- আইন কখন বেশি কার্যকর হয়? যখন আইনের পেছনে নৈতিকতার সমর্থন থাকে, ধর্মের সমর্থন থাকে; তখন সেগুলো বেশি কার্যকর হয়। ধর্মবিরোধী আইন কখনোই সত্যিকার অর্থে কার্যকর হয় না। কেননা, আইনের পেছনে দরকার নৈতিক ভিত্তি।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার