ফেক ভিডিও দেখে মা ও ছেলের মূত্র পান! করোনা থেকে বাঁচতে গিয়ে প্রাণ যাওয়ার দশা
মা ও ছেলের মূত্র পান - ছবি : সংগৃহীত
যথাযথ নিয়ম মেনে নিজের মূত্র পান করলে না কি করোনা সেরে যায়! লন্ডনবাসী এই মহিলার হোয়াটসঅ্যাপে এমনই মেসেজ এসেছিল। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তাদের ফোনেও একই টেক্সট এসেছে। ইন্টারনেটে ব্যাপক ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নিজের চোখেও দেখেছিলেন তিনি। তাই বিশ্বাস করতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। করোনা থেকে বাঁচতে টানা চার দিন ধরে নিজের মূত্র পান করেছেন তিনি। সন্তানকে বাঁচাতে একই কাজ করিয়েছেন তাকে দিয়েও। ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছে এই অদ্ভুত ঘটনা।
সম্প্রতি এক রিপোর্টে বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছে হেল্থওয়াচ সেন্ট্রাল লন্ডন। রিপোর্টে বলা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়ানো ভুয়ো বার্তার পাল্লায় পড়ে এই অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেছেন ওই মহিলা। ঘটনা থেকে অন্যদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ। আসলে এক বন্ধুর কাছ থেকে মেসেজ পেয়েছিলেন তিনি। পরে একাধিক জায়গা থেকে একই খবর পান। এই সংক্রান্ত নানা ভিডিও দেখেন। তাই তার ভরসা বেড়ে যায়। আর এই বিশ্বাস থেকেই এমন উদ্ভট ও অস্বাস্থ্যকর কাণ্ড করে বসেছেন তিনি।
তবে মহিলার ধ্যানধারণাতেও সমস্যা ছিল। ডব্লিউসিএইচএলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মহিলা জানিয়েছেন, করোনার জেরে অত্যন্ত আতঙ্কিত ছিলেন। তাই নিজেকে ও সন্তানকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তাছাড়া করোনার ভ্যাকসিনে তেমন একটা ভরসা ছিল না তার। ভ্যাকসিনের থেকে প্রথাগত কোনো ঘরোয়া চিকিৎসায় অধিক বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। তাই নিজে এবং তার সন্তান চার দিন ধরে নিয়ম করে নিজেদের মূত্র পান করেছেন। ভেবেছিলেন এতেই শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। আর করোনা থেকে বেঁচে যাবেন। যদিও পরের দিকে বুঝতে পারেন, এই ধরনের উপায় আদতে কোনো কাজে লাগে না। তিনি ভুল পথে এগোচ্ছিলেন।
বছরখানেকের মধ্যে করোনাকে কেন্দ্র করে সমাজের নানা স্তরে একাধিক গুজব ছড়িয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিনিধিরাও নানা সময়ে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়েছেন। তালিকায় ছিলেন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। কর্নেল ইউনিভার্সিটির এক সমীক্ষাতেও এ নিয়ে বিশদে আলোচনা করা হয়েছে। একসময় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়েও ব্যাপক জল্পনা ছড়িয়েছিল। কোথাও সারা শরীরে কাদা মাখা, কোথাও গোমূত্র পান, নানা ধরনের টোটকা ব্যবহারের খবর প্রকাশ্যে আসে। এবার লন্ডনেও এমনই এক দৃশ্য চোখে পড়ল।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, মারণ ভাইরাস থেকে বাঁচতে সচেতনতা জরুরি। তবে সেই সচেতনতা যেন কোনও ভুল পথে চালিত না করে, সে দিকে সব সময়ে খেয়াল রাখতে হবে!
সূত্র : নিউজ ১৮
ব্রিটেনে সংখ্যালঘু, কৃষ্ণাঙ্গদের দ্রুত টিকার দাবি
জাতিগত অবস্থান ও বঞ্চনাও করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় ধরেই এনিয়ে জল্পনা চলছিল। এবার গবেষণাতেও উঠে এলো সেকথা। তারপরই ব্রিটেনজুড়ে জাতিগত সংখ্যালঘু ও কৃষ্ণাঙ্গদের দ্রুত করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার দাবি জোরালো হয়েছে। দাবি উঠেছে, এই সম্প্রদায়গুলোর ২০ লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে। এদের মধ্যে আট লাখ মানুষকে যুদ্ধকালীন তত্পরতায় টিকাকরণের আওতায় আনতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে করোনায় মৃতের ঝুঁকি মাপতে ‘রিস্ক অ্যানালিসিস টুল’ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ইংল্যান্ডের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ক্রিস উইটি। ওই টুল ব্যবহারের ফলেই জাতিগত সংখ্যালঘু ও কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য সামনে এসেছে। এরপরই এশিয়ান অ্যান্ড মাইনরিটি এথিনিক (বেম)-এর মতো গোষ্ঠীগুলো টিকাকরণের ক্ষেত্রে আরো গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে সরব হয়েছে।
বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে কাজ করে রুনিমেড ট্রাস্ট। তারা এই মুহূর্তকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছে। সংস্থার চিফ এগজিকিউটিভ ডাঃ হালিমা বেগমের কথায়, গত বছর মার্চ মাস থেকেই আমরা এটা আঁচ করতে পারছিলাম। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকককেও এই বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। সম্প্রদায় ও বঞ্চনাকেও অন্যতম ঝুঁকি হিসেবে মান্যতা দিতে আর্জি জানিয়েছিলাম। সেইসঙ্গে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে তাঁকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও অনুরোধ করেছিলাম। একইসঙ্গে হালিমা বলেছেন, জাতিগত অবস্থান, সামাজিক বঞ্চনা এবং বডি মাস ইনডেক্স (উচ্চতা ও ওজনের অনুপাত) — এই তিনটি বিষয়কে গুরুতর ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সকলকে একজোট করে বৃহত্ গোষ্ঠী তৈরি করে দ্রুত সুরক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। তাহলে বিপদের মুখে থাকা বহু মানুষকে রক্ষা করা যাবে।
একই সুর শোনা গেছে ‘ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন কাউন্সিল’-এর চেয়ারম্যান চাঁদ নাগপালের গলাতেও। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরেই ‘বেম’ এই বিষয় নিয়ে সরব। তারা বারবার জানিয়েছে, বঞ্চনার শিকার হওয়া জাতিগত সংখ্যালঘুর ক্ষেত্রে করোনায় মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি। গরিব এলাকাগুলিতে অন্যান্য গুরুতর রোগে মৃত্যুর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু, ‘জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন’ বা জেসিভিআই যে তালিকা তৈরি করেছে, তাতে এই গোষ্ঠীর সিংহভাগ মানুষই বাদ পড়েছেন। তাই প্রাণঘাতী করোনার হাত থেকে বাঁচতে অবিলম্বে তাদের টিকাকরণ কর্মসূচির আওয়ায় আনতে হবে।
করোনায় মৃত্যুর কারণ হিসেবে সবার ওপরে রয়েছে বয়স। এরপরেই রয়েছে ক্যান্সার ও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো গুরুতর বিষয়গুলো। রিস্ক অ্যানালিসিস টুল বলছে, ইতিমধ্যেই নথিভুক্ত ২২ লাখের বাইরে আরো ১৭ লক্ষ মানুষকে টিকাকরণের মধ্যে আনতে হবে। এদের বড় অংশই বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। বিভিন্ন পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে জানা যাচ্ছে, কৃষ্ণাঙ্গ, জাতিগত সংখ্যালঘু ও এশিয়দের মধ্যে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। প্রাণ হারাচ্ছেন তাদের গরিব প্রতিবেশীরাও। এছাড়া, ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
করোনায় ঝুঁকির মাত্রা খতিয়ে দেখতে নতুন টুল ব্যবহার করা হচ্ছে। তার নাম ‘কিউকোভিড’। মাস কয়েক আগে অক্সফোর্ডের ‘ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজি’ বিভাগের অধ্যাপক জুলিয়া হিপ্পিসলে-কক্সের নেতৃত্বাধীন টিম এটি তৈরি করেছে। কীভাবে এটি কাজ করে, তা গত অক্টোবরেই প্রকাশিত হয়েছিল। ব্রিটেনের ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ জেনি হ্যারিসের কথায়, সবচেয়ে বিপদের মুখে থাকা সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে এই টুল স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষভাবে সাহায্য করবে।
সূত্র : বর্তমান