পানি শিকার : একটি চমৎকার প্রযুক্তি!

মাসুদ আলম | Feb 17, 2021 01:34 pm
কুয়াশা ধরার ফাঁদ

কুয়াশা ধরার ফাঁদ - ছবি সংগৃহীত

 

আপনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্ বলুন, অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিন!

হ্যাঁ আল্লাহ্ আমাদের এই ছোট্ট দেশটিকে হাজারো নিয়ামত দিয়ে ভরপুর করে দিয়েছেন। হেসে উড়িয়ে দিতেই পারেন। কিন্তু আপনি যদি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল সমন্ধে জানতে পারেন এবং তুলনা করেন তখন আপনি বুঝবেন বাংলাদেশের উপর আল্লাহ্ নিয়ামত ও রহমতগুলো কী কী?
পানি! হ্যাঁ সুপেয় পানি এবং মিঠা পানির উৎসগুলোই আমাদের অনেক বড় সম্পদ এবং আল্লাহর দেয়া অনেক বড় নিয়ামত।

সেটা কিভাবে তা আজকে আপনাদেরকে নিয়ে যাব সুদূর দক্ষিণ আমেরিকায়, শোনাব একটি ভিন্ন ধরনের শিকারের কথা- পানি শিকার!

মাছ শিকার, পশুপাখি শিকারের মতোই পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানি শিকারের প্রযুক্তির কথা।

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মধ্য-পশ্চিম অংশে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে রয়েছে আতাকামা (Atacama) মরুভূমি।

১ লাখ ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই স্থানকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক মরুভূমি। চিলি আর্জেন্টিনা বলিভিয়া এবং পেরুর অংশজুড়ে থাকা আতাকামা মরুভূমির অতি রুক্ষ অংশে (hyper-arid core) গত ৫০০ বছরের মধ্যে কোনো বৃষ্টিপাত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

আর এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে মরুভূমিটি কতটা শুষ্ক এবং জীবনধারণের জন্য কতটা অনুপযোগী! তবে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এই মরুভূমির কিছু এলাকায় (ছবিতে-মরুভূমির লাল অংশে) মোট তিনবার বৃষ্টিপাত হয়েছে যার পরিমাণ বার্ষিক গড় হিসেবে ৩.৮ সেন্টিমিটার মাত্র। (বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০৩ সেন্টিমিটার)

বৃষ্টিপাতহীন এই মরু অঞ্চলটির ভূমিরূপ- বালুকাময় সমতল, পাথুরে মাটি, পাথরের পাহাড় এবং বেশ কতগুলো সক্রিয় আগ্নেয়গিরির সমন্বয়ে গঠিত। এতো রুক্ষতা ও প্রতিকূল পরিবেশ হওয়া সত্ত্বেও এই মরুভূমির বিভিন্ন অঞ্চলে বহু মানুষের বসবাস রয়েছে, বিশেষ করে আগ্নেয়গিরিগুলোর নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে। কারণ অগ্নুৎপাতের উদগীরণ হলে উঠে আসা ছাই এবং কাদামাটি যুক্ত লাভা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে ফলে সেখানে ভালো ফসল ফলানো সম্ভব হয়। অথচ সেখানে রয়েছে সেচের পানির চরম অভাব এবং পানীয় পানির দুস্পাপ্যতা। কিন্তু বাঁচতে হলে পানি তো চাই!

তাহলে সমাধান কী?

মরুভূমির পূর্ব অংশজুড়ে দক্ষিণে চিলি থেকে উত্তরে কলম্বিয়া পর্যন্ত দেয়ালের মতো রয়েছে আন্দিজ (Andes) পর্বতমালা। প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী এলাকা হলেও এখানে বৃষ্টিপাত হয় না। তবে রাতের বেলা সাগরের উপর থেকে প্রবাহিত হওয়া ঠাণ্ডা বাতাসের ফলে সবসময় ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়। আর এই কুয়াশা থেকেই শিকার করা হয় বিশুদ্ধ পানি।

পলিপ্রোপাইলিন (Polypropylene) পদার্থের তৈরি বিভিন্ন আকার ও আকৃতির এবং বিশেষ বুননে গঠিত জাল গুলো পাহাড়ের ঢালে যতোটা সম্ভব উঁচুতে দুটি খুঁটির সাহায্যে স্থায়ীভাবে পাতা হয়।
এই জালের গায়ে ধীরে ধীরে জমা হওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানিকণা (droplet) চুইয়ে নিচের দিকে যেতে থাকে এবং ফোঁটা হয়ে নিচের চোঙাতে গড়িয়ে পড়ে।

জালের নিচের অংশ একটি U আকৃতির লম্বা চোঙার সাথে যুক্ত করা হয়। এই চোঙার এক মাথা একটি পাইপের সাহায্যে পানি ধারণের বড় ট্যাঙ্কির সাথে যুক্ত করা হয়। এভাবে দুই বা ততোধিক, এমনকি কয়েক শ' জালের সংগ্রহকে পাইপের মাধ্যমে যুক্ত করে পাহাড়ের পাদদেশে বড় ট্যাঙ্কিতে জমা করে পানীয় পানি সরবরাহ করা হয় এবং উদ্বৃত্ত পানি কৃষি কাজের জন্য সরবরাহ করা হয়। সেসব অঞ্চলে এই পানি ছাড়া অন্য কোনো পানির উৎস নেই।

অনেকে কৃষি জমির উপরেই জাল স্থাপন করে ফসলের গোড়ায় গোড়ায় পানির ব্যবস্থা করে থাকে। আর এই পানি শিকারের মাধ্যমে গত প্রায় এক যুগ ধরে 'পানি শিকারীরা' (কৃষকরা) অবদান রেখে যাচ্ছে চিলির প্রস্ফুটিত কৃষি অর্থনীতিতে এবং মিটাচ্ছেন নিজেদের সুপেয় পানির অভাব।

চিলি ছাড়াও এই পানি শিকার পদ্ধতি পেরু বলিভিয়া মরক্কো প্রভৃতি দেশে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে।

...এবার নিশ্চয়ই আলহামদুলিল্লাহ্ বলবেন এবং এ দেশের পানিসম্পদ নিয়ে তৃপ্ত হবেন!


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us