সোনালি ইতিহাসের স্মারক এই মসজিদ
সোনালি ইতিহাসের স্মারক এই মসজিদ - ছবি সংগৃহীত
সাইপ্রাসের লানার্কার মাটিতে ম্যাকেঞ্জি হ্রদের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা এই মসজিদটি মুসলিম ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এক স্মারক। দীনের প্রচারে মুসলিমদের আত্মোৎসর্গের স্মৃতিচিহ্ন। স্থানীয়ভাবে লানার্কার বড় মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটির আছে আরেকটি নাম। মসজিদে উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রা.। কিছু কি আঁচ করতে পারছেন? উম্মে হারাম বিনতে মিলহান ছিলেন একজন প্রখ্যাত সাহাবিয়া। প্রসিদ্ধ সাহাবি উবাদা ইবনে সামিত রা.-এর স্ত্রী। আনাস ইবনে মালিক রা.-এর খালা।
এই ইতিহাসের শুরু হয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস থেকে।
আনাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হারাম বিনতে মিলহানের কাছে গেলেন এবং সেখানে বিশ্রাম করলেন। অতঃপর তিনি হেসে উঠলেন। উম্মে হারাম বিনতে মিলহান তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কেন হাসছেন?’ তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে কয়েক ব্যক্তি আল্লাহ্র পথে জিহাদের উদ্দেশে এই সবুজ সমুদ্রে সফর করবে। তাদের উপমা সিংহাসনে উপবিষ্ট বাদশাহদের মতো।
উম্মে হারাম বিনতে মিলহান বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ্র কাছে আমার জন্য দোয়া করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্, আপনি মিলহানের কন্যাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আবার তিনি বিশ্রাম নিলেন, অতঃপর হেসে উঠলেন। উম্মে হারাম বিনতে মিলহান তাকে একইভাবে জিজ্ঞেস করলেন অথবা বললেন, এ কেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও আগের মতো জবাব দিলেন। উম্মে হারাম বিনতে মিলহান বললেন, আমার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তাদের প্রথম দলে আছ, পেছনের দলে নয়। বর্ণনাকারী বলেন, আনাস রা. বলেছেন, অতঃপর তিনি ‘উবাদা ইব্নু সামিতের সঙ্গে বিবাহ করেন এবং ফাখিতাহ বিনতে কুরাজার সঙ্গে সমুদ্র ভ্রমণ করেন। ফেরার সময় নিজের সাওয়ারীতে আরোহণ করেন, অতঃপর তা থেকে পড়ে গিয়ে ঘাড় মটকে মারা যান। (বুখারি, হাদিস নং : ২৮৭৭)
২৮ হিজরিতে উসমান রা.-এর খেলাফতকালে অবশেষে মুয়াবিয়া রা. সমুদ্র অভিযানের অনুমতি লাভ করেন। উসমান রা. তাঁকে শর্ত দিয়েছিলেন যদি তোমার স্ত্রীকে সঙ্গে নাও, তবে অনুমতি পাবে। ফলে স্ত্রী ফাখিতাহ বিনতে কুরাজাকে তিনি সঙ্গে নেন। এই অভিযানে উবাদা ইবনুস সামিত রা. এর সঙ্গী হন তাঁর স্ত্রী উম্মে হারাম বিনতে মিলহান। যুদ্ধে শেষে ফেরার পথ খচ্চরের পিঠ থেকে পড়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সাইপ্রাসের মাটিতে তাঁকে দাফন করে মুসলিমরা দীনের প্রচারে নিজেদের আত্মোৎসর্গের স্মারক রেখে আসেন। তার সমাধি স্থানীয়ভাবে নেককার মহিলার কবর নামে পরিচিত ছিল। হিজরি বারো শতকে তুর্কিরা এখানে এই সুদৃশ্য মসজিদটি নির্মাণ করেন।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সাইপ্রাস তুর্কি ও গ্রিক এই দুই অংশে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর এই মসজিদটি বন্ধ করে দেয়া হয়। লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি সাইপ্রাস পরিদর্শনকালে সেখানে তিনটি মসজিদ খুলে দেয়ার আবেদন জানান। এর প্রেক্ষাপটে সাইপ্রাসের রাজা তৃতীয় ম্যাক্রিউস মসজিদটি খুলে দেন।
২০০২ সালে জাতিসঙ্ঘের সমর্থনে 'মুসলিম স্থাপত্য পুনর্নির্মাণ সংস্থার মহাপরিচালক সালিহ লাময়ি মুস্তফার তত্ত্বাবধানে মসজিদটির সংস্কার করা হয়। কিন্তু সে অঞ্চলে মুসলিম কম হওয়ায় মসজিদটি এক প্রকার পরিত্যক্ত অবস্থাতেই পড়ে থাকে। অতঃপর ইরাক ও ফিলিস্তিনের কিছু মুহাজির সেখানে হিজরত করে মসজিদটি আবাদ করেন।