সকাল-সন্ধ্যার ৫ আমল
সকাল-সন্ধ্যার ৫ আমল - ছবি সংগৃহীত
উভয় জাহানের প্রশান্তি পেতে কে না চায়! কে না চায় দুনিয়ার সব ধরনের বিপদাপদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে! জান্নাত পাওয়ার সহজ উপায় লাভ করতে! অল্প আমলে অনেক পুরস্কার পেতে! মুসলিম মাত্রই আমাদের এতটুকু চাওয়া-পাওয়া। আজ আমি আপনাদের সামনে এরকমই সকাল-সন্ধ্যার ছোট ছোট বিশেষ ফজিলতপূর্ণ কিছু ‘আমল’ হাদিসের আলোকে বর্ণনা করার চেষ্টা করব। যেসব ‘আমল আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও ফজিলতপূর্ণ।
১. সব ধরনের (আসমানি এবং জমিনি) বিপদাপদ থেকে হিফাজত থাকার দোয়া : হজরত উসমান বিন আফফান রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যেই ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে এই দোয়াটি পাঠ করবে, তাকে কোনো জিনিসের ক্ষতি পৌঁছাতে পারবে না। দোয়াটি হলো- উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লা-হিল্লাজি লা ইয়াদ্বুররু মাআ ইসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামা-ই, ওহুয়াস সামিউল-আলিম’ অর্থ- ‘আল্লাহর নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান ও জমিনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।’ (তিরমিজি, হাদিস-৩৪১০) অর্থাৎ, সেই বান্দা সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে হিফাজত থাকবেন। তাকে কোনো জিনিস ক্ষতি করতে পারবে না।
২. কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট লাভের দোয়া : হজরত ছাওবান রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক সকাল-সন্ধ্যা তিনবার এই দোয়াটি পড়বে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা নিজের ওপর আবশ্যকীয় করে নেন কিয়ামতের দিন সেই বান্দাকে খুশি করানোর। দোয়ার উচ্চারণ- ‘রাজিতু বিল্লাহি রাব্বাও ওয়াবিল ইসলামী দ্বীনাও ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়া।’ অর্থ- আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মদ সা:কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস- ৩০১১)
অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে অগণিত সওয়াব দিয়ে সন্তুষ্ট করে দেবেন এবং সে তখন এই সওয়াবের পাল্লা ভারী হওয়ার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৩. আল্লাহর (রাত-দিনে) শুকরিয়া আদায় করার দোয়া : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে গনাম রা: থেকে বর্ণিত- আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, যে সকালে বলে, উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা মা আসবাহা বি মিন নিমাতিন আও বিআহাদিন মিন খলকিকা ফা মিনকা ওহদাকা লা-শারিকালাক, লাকালহামদু ওলাকা শশুকরু।’ অর্থ- ‘ইয়া আল্লাহ! এই সকালে আমার মাঝে বা আপনার যেকোনো সৃষ্টির মাঝে যা কিছু নিয়ামত, সব আপনারই তরফ থেকে। আপনি একক, আপনার কোনো শরিক নেই। সুতরাং,আপনারই হামদ, আপনারই শোকর।’
সে ব্যক্তি এ দিনের শোকর আদায় করল। আর যে সন্ধ্যায় (নিম্নোক্ত দোয়া) পড়ল সে ওই রাতের শোকর আদায় করল। উচ্চারণ- ‘আল্লাহুম্মা মা আমসি বি মিন নিমাতিন আও বি আহাদিন মিন খালকিকা ফা মিনকা ওহদাকা লা শারিকালাক, লাকালহামদু ওলাকা শশুকরু।’ অর্থ- ইয়া আল্লাহ! এই সন্ধ্যায় আমার মাঝে বা আপনার যেকোনো সৃষ্টির মাঝে যা কিছু নিয়ামত, সব আপনারই তরফ থেকে। আপনি একক, আপনার কোনো শরিক নেই। সুতরাং আপনারই হামদ, আপনারই শোকর।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৫০৭৩, সুনানে তিরমিজি, হাদিস-৩৪১৩)
অর্থাৎ, সকালে দোয়া পড়ার সময় শুরুতে ‘মা আসবাহা বি’ আর সন্ধ্যায় দোয়া পড়ার সময় শুরুতে ‘মা আমসি বি’ বলতে হবে বাকি দোয়া অভিন্ন।
৪. জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির দোয়া : হজরত মুসলিম ইবনে হারেস তামিমি রা: বলেন, রাসূল সা: আমাকে কানে কানে বললেন, ‘যখন মাগরিবের নামাজের সালাম ফিরাবে, তখন কারো সাথে কথা বলার আগে এই দোয়াটি সাতবার পড়বে। উচ্চারণ- ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার’। অর্থ- হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।
যদি তুমি পড়ো আর ওই রাতেই তুমি মারা যাও তাহলে তোমার জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফায়সালা লিখে দেয়া হবে। ফজরের নামাজের পরও এ দোয়াটি একই নিয়মে সাতবার পড়বে। যদি তুমি পড়ে থাকো আর ওই দিনেই তুমি মারা যাও তাহলে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফায়সালা লিখে দেয়া হবে। (আবু দাউদ-৫০৮১, নাসায়ি সুনানে কুবরা-৯৯৩৯, সহি ইবনে হিব্বান-২০২২)
অর্থাৎ, যদি কেউ মাগরিবের নামাজ শেষ করে সাতবার এই দোয়াটি পাঠ করে এবং ওই রাতেই তার মৃত্যু হয় তবে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। এমনিভাবে যদি ফজরের পর পাঠ করে এবং ওই দিন তার মৃত্যু হয় তাহলে সে জাহান্নামে থেকে মুক্তি পাবে।
৫. দুনিয়া ও আখিরাতে প্রশান্তি লাভের দোয়া : হজরত ইবনে উমার রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেন-
উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাতি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দ্বীনি ওফি দুনইয়া ওয়া আহলি ওয়া মালি, আল্লাহুম্মাসতুর আরোতি ওয়া আমিন রাওআতি। আল্লাহুম্মাহফাজনি মিম্বাইনি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খালফি ওয়া আন ইয়ামিনি ওয়া শিমালি ওয়া মিন ফাওকি। ওয়া আউজুুবি আজামাতিকা আন উগতালা মিন তাহতি।’ অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হিফাজত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পেছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের ওসিলায় আশ্রয় চাই আমার নিচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে।’ (আবু দাউদ, হাদিস-৫০৭৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস-৩৮৭১)