ইরান কতটা শক্তিশালী?
ইরান কতটা শক্তিশালী? - ছবি সংগৃহীত
ইরান কতটা শক্তিশালী? ইরানের কাছে না তো আধুনিক যুদ্ধ বিমান আছে, আর না কোনো দেশ ইরানকে আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করে। ইরানের ওপর রয়েছে আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধও। তারপরও ইরানের এমন কী শক্তি আছে যার ওপর নির্ভর করে ইরান শক্তিধর দেশগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে? আর ইরানের এমন কী দুর্বলতা আছে যার কারণে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সাথে পরমাণু চুক্তি করে।
ইরানের সবচেয়ে বড় শক্তি ইরানের ভৌগোলিক অবস্থান। ইরান পারস্য উপসাগরে অবস্থিত। পারস্য উপসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় রয়েছে তেলের প্রচুর মজুদ। শুধু তাই না, পৃথিবীর ৪০ শতাংশ তেল এখান দিয়েই রফতানি করা হয়। ইরান যদি কোনোভাবে পারস্য উপসাগর বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি জোর ধাক্কা খাবে। পারস্য উপসাগর রক্ষার জন্য আমেরিকার নৌবহর সবসময় পারস্য উপসাগরে অবস্থান করে, যা ইরানের জন্য একটি হুমকি। ইরানের সরকারের নীতির কারণে ইরান প্রতিবেশী দেশগুলোর বিভিন্ন সমস্যায় তাদের বিরোধী ভূমিকায় থাকে। ফলে ইরানের বেশির ভাগ প্রতিবেশী দেশ ইরানকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে।
ইরাকের বর্তমান শিয়া সরকার, সিরিয়ার বাশার আল আসাদ, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের হামাসের সাথে ইরানের বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ইরান লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের হামাসকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য দেয়। হামাস ও হিজবুল্লাহ ইরানের মিসাইল ও রকেট ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। এসব কারণে আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি আরব কয়েকটি জায়গায় ইরানের বিরুদ্ধে কাজ করে। ইরানের বিরুদ্ধেআমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি আরব লড়াই করছে সিরিয়া, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনে। সিরিয়ায় ইসরাইল ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের হামলা করে থাকে। পাল্টা জবাব হিসেবে ইরানও সৌদি আরব এবং ইসরাইলের সমর্থনপুষ্টদের ওপর হামলা করে থাকে। ইরান পৃথিবীর ২১তম সামরিক শক্তি যেখানে তার শত্রু আমেরিকা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক শক্তি, ইসরাইল ১৫তম সামরিক শক্তি এবং সৌদি আরব ২৪ তম সামরিক শক্তি। যেখানে ইরানের ২০২০ সালের সামরিক বাজেট ছিলো ১৮ বিলিয়ন ডলার। সেখানে ইরানের সবচেয়ে বড় শত্রু আমেরিকার ২০২১ সালের সামরিক বাজেট ৯৩৪ বিলিয়ন ডলার।
ইরানের সৈন্যসংখ্যা ৫ লাখ ৪৫ হাজার। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের সৈন্যসংখ্যা ১ লাখ। ইরানের কাছে রয়েছে ৪৭৭টি যুদ্ধ বিমান এবং ১৬০০ ট্যাংক। অবরোধ সত্ত্বেও ইরানকে ইসরাইল ও মিসরের পর মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অবরোধের কারণে ইরান বহিঃবিশ্ব থেকে অস্ত্র ক্রয় করতে পারে না। ফলে ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে স্বল্প পাল্লার ও দূর পাল্লার মিসাইল তৈরি করে আধুনিক অস্ত্রের অভাব পূরণ করেছে। ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে ট্যাংক, বিমান, হেলিকপ্টার, সাবমেরিন, যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করে থাকে। কিন্তু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, ইরানের প্রযুক্তি পুরনো। তাই এইসব অস্ত্র যুদ্ধে তেমন কাজে আসবে না। ইরানের মিত্র দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে চীন ও রাশিয়া। কিন্তু এরাও আন্তর্জাতিক অবরোধের কারণে ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে না। ২০১৫ সালে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা নমনীয় হলে রাশিয়া ইরানকে মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম এস-৩০০ সরবরাহে করেছিল, যা ইরানকে ইসরাইলি হামলা থেকে খানিকটা নিরাপত্তা দেবে। ইরানকে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে গণ্য করা হয় না। ইরানের জিডিপি ৪৪৫ বিলিয়ন ডলারের। ইরানের অর্থনীতির প্রধান শক্তি তেল ও গ্যাস। ভেনিজুয়েলা, সৌদি আরব ও কানাডার পর তেলের সবচেয়ে বেশি মজুদ ইরানে রয়েছে। আমেরিকা অবরোধ আরোপের পরও তুরস্ক, চীন এবং ভারত ইরান থেকে তেল কেনা জারি রেখেছিলো।
ইরান তার বিভিন্ন সমস্যা ও অবরোধের কারণে বৈশ্বিক শক্তি তো হয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লেবানন ইরানের প্রভাবাধীন থাকে। ফলে আমেরিকা ইরানকে এড়িয়ে যেতে পারে না। আমেরিকা ও ইসরাইল ইরানের ঘোষিত শত্রু। এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবকেও ইরানের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তুরস্ক, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও কাতার ইরানের বন্ধু রাষ্ট্র। সর্বোপরি ইরান একটি বৃহৎ শক্তি তো নয়, কিন্তু ইরান মধ্যপ্রাচ্যের এক বড় শক্তি।
তথ্যসূত্র : হাউ পাওয়ারফুল ইজ ইরান: ডিএসজে, দি ব্যালেন্স, দি ইরান প্রিমিয়ার, ট্রেডিং ইকোনমিক্স, বিবিসি
লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্ক