ক্রিকেট দলের জুমার নামাজ নিয়ে সমস্যা, পদত্যাগপত্রে যা বললেন ওয়াসিম জাফর
ওয়াসিম জাফর - ছবি : সংগৃহীত
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল মুসলিম ক্রিকেটারদের অগ্রাধিকার দেয়ার এবং ড্রেসিংরুমে 'সাম্প্রদায়িকতা' আনার। কিন্তু পদত্যাগের যে চিঠি ভারতের উত্তরাখণ্ড ক্রিকেট সংস্থাকে পাঠিয়েছেন ভারত জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ওয়াসিম জাফর, তাতে একের পর এক তথ্য উঠে এসেছে। জাফর জানিয়েছেন, দল নির্বাচন হোক বা পরামর্শ, কোনো ক্ষেত্রেই তার মতামত চাওয়া হয়নি। পুরোটাই সামলেছেন শীর্ষস্থানীয় কর্তারা।
দল নির্বাচন নিয়ে জাফর লিখেছেন, “গত ৩০ জানুয়ারি মাহিম বর্মাকে বলি আমার এবং নির্বাচন কমিটির প্রধানের সঙ্গে বসে দল গঠনের ব্যাপারটা মীমাংসা করতে। কারণ আমি চাইছিলাম প্রতিযোগিতা শুরুর আগে ৪-৫টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে। ৩১ জানুয়ারি ফের ফোন করে কত দূর কী হয়েছে জানতে চাই। কিন্তু মাহিম আমার ফোন ধরেননি। ৩ ফেব্রুয়ারি ফোন করেন। শেষমেশ ৮ ফেব্রুয়ারি দল নির্বাচন হয়। একটা দল তৈরি করতে ৮ দিন লাগল দেখে অবাক হয়েছিলাম।”
জাফর জানিয়েছেন, দল গঠনের সময় নির্বাচক কমিটি তার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেনি। এমনকী নির্বাচন কমিটির প্রধান তাকে কোনো ফোন বা বার্তা দেননি বলে জানা গিয়েছে। জাফরের কথায়, “কে কীরকম খেলে তা জানার আগেই দল নির্বাচন করে ফেলা হলো।”
নির্বাচন নিয়ে যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছিল, সেটাও নাকচ করেছেন জাফর। লিখেছেন, “সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে সঠিক ক্রিকেটারদের নেয়ার জন্য আমি চাপ দিয়েছিলাম। কিন্তু বর্মা এমন কিছু ক্রিকেটারকে চাইছিলেন যারা দলে ঢোকার যোগ্য নয়। আমি ক্রিকেটারদের জন্য দুঃখিত। ওদের অনেকের দারুণ প্রতিভা রয়েছে। কিন্তু রাজনীতির কারণে সুযোগ পাচ্ছে না।”
এদিকে, দলে যাকে নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, সেই ইকবাল আবদুল্লাহ পাশে দাঁড়িয়েছেন জাফরের। বলেছেন, “শুক্রবারের নামাজ জামাতে পড়তে হয় এবং তা ইমাম ছাড়া হয় না। দুপুর ৩.৪০-এ আমাদের অনুশীলন শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা নামাজ পড়ার সিদ্ধান্ত নিই। ওয়াসিম ভাইকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আমরা কোনো মৌলবিকে ডাকতে পারি কি না। উনি বলেছিলেন টিম ম্যানেজারের অনুমতি নিতে। তিনি অনুমতি দেন। এতে ওয়াসিম ভাইয়ের কোনো দোষ নেই।”
উল্লেখ্য, উত্তরাখন্ড ক্রিকেট সংস্থার সচিব মহিম ভার্মা আরো জানিয়েছেন দলের ক্রিকেটাররা অভিযোগ করেছেন, দলের মধ্যে মৌলবিকে নিয়ে এসেছেন কোচ জাফর। জাফর আবার বলেছেন, গোটা ঘটনা ইকবাল আব্দুল্লাহর মস্তিষ্কপ্রসূত। তারপরেই ইকবাল আব্দুল্লাহ অভিযোগের তির ম্যানেজারের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
ঘটনা হলো, ঘটনার সিরিয়াসনেসে রীতিমত স্তম্ভিত উত্তরাখন্ড ক্রিকেট। বায়ো বাবল নিয়ম ভঙ্গ বিষয় নিয়েই আপাতত সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জাফরের পাশে অবশ্য দাঁড়িয়েছেন জাতীয় দলের হয়ে যুব বিশ্বকাপ জেতা ইকবাল আব্দুল্লাহ, “ওয়াসিমভাই সবসময় দলকে আগে রাখেন। ওর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ একদম ঠিক নয়। ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। ও ভীষণ ব্যথিত। ক্যাম্পের সময় আমরা একাধিক স্লোগান ব্যবহার করতাম। গান গাইতাম- বারবার হা, বোলো ইয়ার হা। একদিন- জো বোলে সো নিহাল, তো অন্য দিন, জয় শ্রীরাম। তারপর একজন এক দিন বলল, “গো গ্রিন” বলা উচিত। অন্য এক দিন বলা হলো, চলো উত্তরাখন্ড, চলো হৃষিকেশ। ওয়াসিমভাই বলেছিল, আমাদের উত্তরাখন্ড স্লোগান নিয়েই টিকে থাকতে হবে।”
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা