মিয়ানমারে ক্যু : প্রতিবেশীদের জন্য শঙ্কার কারণ!
মিয়ানমারে ক্যু : প্রতিবেশীদের জন্য শঙ্কার কারণ! - ছবি : সংগৃহীত
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অং সান সু চির ন্যাশন্যাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) দল ভূমিধস বিজয় লাভ করে সংসদ অধিবেশনে বসার কয়েক ঘণ্টা আগে এই অঘটন ঘটে। সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইউএসডিপি) পার্টি করুণভাবে পরাজিত হয়ে সামরিক শক্তি ব্যবহারের পথ বেছে নেয়।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর মিয়ানমারে প্রায় ছয় দশক সামরিক শাসন চলে। চল্লিøশের দশকে সু চির পিতা জেনারেল অং সান জাপানের সহায়তায় বার্মা ন্যাশনাল আর্মি গঠন করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। ১৯৪৮ সালের পর অল্পদিনের গণতন্ত্রের কবর রচনা করে ১৯৬২ সালে অং সানের সহযোগী জেনারেল নে উইন অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সামরিক শাসন জারি করেন। সু চি ১৯৮৮ সালে ‘এনএলডি’ গঠন করে নির্বাচনে জয়ী হলে পুনরায় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং সু চি গ্রেফতার হয়ে ১৫ বছর গৃহবন্দী থাকেন। ইতোমধ্যে সামরিক সরকার একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন করে জাতীয় সংসদে ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত করে। স্বাধীনতার পর থেকেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বিশেষ করে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিয়েই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আবর্তিত হতে থাকে। বর্তমান রোহিঙ্গা গণহত্যার নীলনকশা ১৯৬৬ সালেই প্রণয়ন করা হয়েছিল। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উত্তর আরাকানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এনে কৌশলে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ানো হয়। এমনকি জেলে বন্দীদের সাজা কমিয়ে অর্ধেক করে তাদেরকে আরাকানে বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে রোহিঙ্গারা সেখানে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়। এরপর ১৯৭৮ সালে ব্যাপকভিত্তিক রোহিঙ্গা নিধন শুরু হয়। এরপর পুনরায় ১৯৯২ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে ব্যাপক ভিত্তিক গণহত্যা চালানো হয়। যার ফলে আজ প্রায় ১২ লাখ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর অতিরিক্ত চাপ বাংলাদেশকে বহন করতে হচ্ছে।
মিয়ানমারের এই সামরিক অভ্যুত্থানের অনেক কারণ বিশ্লেষকরা বর্ণনা করেছেন। তবে সবার উপরে প্রধান কারণ হলো, সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের ব্যক্তিগত স্বার্থ। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, উচ্চাভিলাষ এবং অর্থনৈতিক লালসা এসব ধরনের ব্যক্তিস্বার্থই জড়িত এই অভ্যুত্থানে। ব্যক্তিস্বার্থের প্রথম বিবেচ্য হলো, তার নিজস্ব নিরাপত্তা। কারণ, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নিধনের নৃশংস অভিযানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা, গণধর্ষণ এবং ব্যাপক অগ্নিসংযোগ চালিয়ে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করে। সেনাপ্রধান হিসেবে বিশ্ব সম্প্রদায় এই জঘন্য গণহত্যার জন্য সিনিয়র জেনারেল হ্লাইংকে প্রধান আসামি সাব্যস্ত করেছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। ইয়াঙ্গুন ভিত্তিক ম্যাগাজিন ‘ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার’ বলেছে, হ্লাইং হলো ‘ঙহব ড়ভ সড়ংঃ ধিহঃবফ সবহ ড়হ ঃযব ঢ়ষধহঃ’ (আল জাজিরা : ১ ফেব্রুয়ারি-২০২১) এদিকে আগামী জুলাইয়ে ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসরে যাবেন। তখন তার আর বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে কোনো সাংবিধানিক বা অফিসিয়াল রক্ষাবর্ম থাকবে না। এদিকে সু চিও বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হওয়ায় নিজের ভাবমর্যাদা রক্ষায় ক্ষমতাহীন হ্লাইংকে রক্ষা করার ঝুঁকি নেবেন না বলে হ্লাইং আশঙ্কা করছিলেন। ফলে হ্লাইং নিজে প্রেসিডেন্ট হতে পারলে নিজের সুরক্ষাও হবে এবং একজন অনুগত জেনারেলকেও সেনাপ্রধান বানিয়ে রাজনীতিতে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর রক্ষাকবচ ব্যবহার করতে পারার আকাক্সক্ষাই তাকে অভ্যুত্থান ঘটানোর প্ররোচনা দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এছাড়া জেনারেল হ্লাইংয়ের ব্যবসায়ীক স্বার্থও রয়েছে এর পেছনে।
সেনাপ্রধান হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি এবং তার সন্তানরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে সমূহ লাভবান হয়েছেন। সেনাপ্রধান হিসেবে সামরিক মালিকানাভূক্ত দু’টি বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান- ‘মিয়ানমার ইকোনমিক করপোরেশন’ এবং ‘মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিংস লিমিটেড’-এর মূল কর্তৃত্বে আছেন। এই কোম্পানিগুলো জেম, কপার, টেলিকম এবং গার্মেন্ট ব্যবসায় লগ্নি করে থাকে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটাও এই অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় প্রধান কারণ। মিয়ানমারে সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০০৮ সালে প্রণিত সংবিধানে ৪৯৮টি আসনের মধ্যে ১৬৬টি (২৫ শতাংশ) সেনাসদস্যদের দেয়া আছে। সেনাসমর্থিত ‘ইউএসডিপি’-এর জন্য আরো ১৬৭টি আসন প্রয়োজন সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় বসাতে। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তারা মাত্র ৩৩টি আসন পেয়েছে যেখানে সু চির ‘এনএলডি’ জিতিছে ৩৯৬টি আসনে। এতে সেনাবাহিনী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। কারণ, বেশ কয়েকজন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে সু চির জনপ্রিয়তা বেসামরিক শক্তিকে তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। ফলে সেনাসদস্যদের নিরাপত্তা, তাদের ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ ইত্যাদি সবকিছুরই সমূহ হানি ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। এদিকে জনশ্রুতি রয়েছে, সু চি এবার ভূমিধস জনপ্রিয়তার মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে সংবিধানের ২৫ শতাংশ সেনাসদস্যদের জন্য নির্ধারিত আসন সংক্রান্ত ধারায় পরিবর্তন বা সংশোধন আনতে পারেন। এসব মিলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে অস্থিরতাই অভ্যুত্থানে রসদ জোগায়। তাছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে সু চি সরকারের সাথে সেনাবাহিনীর দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সেনাবাহিনী ও বিগত সরকার পরস্পরের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের মূল কারণ রোহিঙ্গা সমস্যা ও তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি হলেও আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি এতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। চীন- ভারতের আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের সুযোগ তাদেরকে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েক সপ্তাহ আগে এবং ভারতের সেনাপ্রধান মাসখানেক আগে মিয়ানমার সফর করে তাদের নিজ নিজ দেশের অকুণ্ঠ সমর্থন নিশ্চিত করে এসেছেন। এ জন্যই অভ্যুত্থানের পর প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছে, এটা মিয়ানমারের মন্ত্রিসভার ‘রদবদল’ এবং বিষয়টি তারা ‘পর্যবেক্ষণ’ করছে। আর ভাতর এতে ‘উদ্বিগ্ন’ হয়েছে মাত্র। উভয় দেশই মিয়ানমারের মন জয় করতে প্রতিযোগিতা করছে। মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ হলো চীনের। তাদের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনশিয়েটিভ’-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো মিয়ানমার। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন বন্ধু হলো চীন। ছয় দশকের সেনাশাসনে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন মিয়ানমারকে আগলে রেখেছিল চীন। অন্যদিকে ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে মিয়ানমারের প্রতি ভারতের সমর্থনও চীনের সাথে প্রতিযোগিতার উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ভারত মিয়ানমারকে ‘সাবমেরিন’ সরবরাহ করেছে এবং সমারিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে তারা মিয়ানমারে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। এ জন্যই ভারত বারবার বাংলাদেশকে ‘প্রথম প্রতিবেশী’ বললেও রোহিঙ্গা সমস্যায় মিয়ানমারকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ভারতকে ‘নাগা’ ও ‘উলফাদের’ দমনে সহযোগিতা করছে। এমতাবস্থায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে দুই শক্তিধর আঞ্চলিক রাষ্ট্র চীন ও ভারতের সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রতিযোগিতার সুযোগকে সেনা অভ্যুত্থানের জন্য ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
বর্তমানে চলমান বৈশ্বিক সার্বিক পরিস্থিতিও অভ্যুত্থানের একটি প্রেক্ষাপটে হিসেবে কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই সময়টিতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত রয়েছে যা তার বিশ্ব মোড়লিপনায় একটু হলেও ভাটা ফেলেছে। আর চীন মিয়ানমারকে আঞ্চলিক বাফার স্টেট হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বান্দ্বিক মনস্তত্ত্বকে মিয়ানমারে আটকে দেয়ার উদ্দেশ্য এই অভ্যুত্থানে ইন্ধন যুগিয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। আবার রোহিঙ্গা সমস্যায় সু চিকে নিয়ে পশ্চিমারা মহাবিরক্ত হওয়ায় তারা সু চির পক্ষে দাঁড়াবে না বলে সেনাকর্মকর্তারা ধরে দিয়েছেন। এদিকে রাশিয়া তাদের সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে প্রকাশ্যেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বলে দেখা যায়। অর্থাৎ বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তেমন একটা প্রতিকূল নয় বলে ধরে নিয়েছে।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর সুদূরপ্রসারি প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এর বহুমুখী প্রভাব আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। এর প্রথম আঘাত পড়বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ওপর। যে প্রক্রিয়া চীনের মধ্যস্থতায় শুরু হয়েছিল তা অনেকের মতে লোক দেখানো হলেও একটা কিছু হতে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন তা নানা ধরনের অজুহাতের অন্তরালে দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে যাবে। একদিকে যেমন মিয়ানমার সেনা সরকার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে কালক্ষেপণের পথ করে নেবে, অন্যদিকে বিশ্ব মোড়লদের মনোযোগ দেশটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপরই বেশি নিবদ্ধ হয়ে পড়বে। ফলে রোহিঙ্গারা সামরিক শাসন বিতর্কের পর্দার আড়ালে চলে যেতে পারে।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে আছে। কাজেই বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের জনতুষ্টি অর্জনের উপাদান হিসেবে এবং জনগণের মনোযোগ রাষ্ট্র পরিচালনার প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য এই সামরিক সরকার পুনরায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাতে পারে। ফলে বাংলাদেশে আরো একটি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর ঢেউ আসতে পারে। অন্যদিকে প্রত্যাবাসনের জন্য ত্রিপক্ষীয় আলোচনার প্রক্রিয়ার যে সূত্রপাত হয়েছিল স্থগিত হয়ে যাওয়ার কারণে মিয়ানমারের ভেতরের এবং বাইরের রোহিঙ্গা জনগণের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হবে, যা অনেককেই চরমপন্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর দ্বারা উৎসাহিত হয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তায় বিঘœ ঘটাতে পারে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের সাথে সাথে অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে দেখা দিতে পারে অস্থিরতা। ফলে তারাও সেনা সরকারের নিধনযজ্ঞের লক্ষবস্তুতে পরিণত হতে পারে।
মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইতোমধ্যে অস্থির হয়ে পড়েছে। পেশাজীবী, ছাত্র-জনতা কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছে। সেনা সরকার মনে হয় একটি পর্যায়ে গিয়ে অধৈর্য হয়ে উঠবে এবং সাধারণ নাগরিকদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালাবে। তাদের সামনে একদিকে রয়েছে চীনের তিয়েনানমেন স্কয়ারের আন্দোলনবিরোধী হত্যাযজ্ঞের উদাহরণ এবং অন্যদিকে রয়েছে চীন অঘোষিত পরীক্ষণ।
আপতদৃষ্টিতে মিয়ানমার চীন-ভারতের সাথে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। ফলে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চীন-ভারত প্রতিযোগিতায় সমতা চলে এলে এর প্রতিক্রিয়া লাদাখ বা চীন-ভারত সীমান্তের অন্য কোনো প্রান্তে দেখা দিতে পারে সেখানে তারা পরস্পর আরো মারমুখী হয়ে পুরো অঞ্চলকে অশান্ত করে তুলতে পারে। আবার চীন-মার্কিন চলমান দ্বন্দ্বের আরো একটি উপাদান যুক্ত হতে পারে। কারণ, বাইডেন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লিপনা বজায় রাখার জন্য মিয়ানমার সেনা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে চীন তা প্রতিহত করতে চাইবে।
গত প্রায় চার দশক যাবত মিয়ানমার-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রধান উপাদান হলো রোহিঙ্গা সমস্যা। তাদের সামরিক সরকার নিজেদের ক্ষমতার রাজনীতির ফায়দা হাসিলের জন্য এই সমস্যা বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এই সমস্যাটিকে ফিলিস্তিন সমস্যার মতো চিরস্থায়ী রূপ দেয়ার উদ্দেশ্যে তারা বাংলাদেশ সীমান্তে নিত্যনতুন উৎপাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। রোহিঙ্গা সমস্যাকে তারা বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সাংঘর্ষিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে পারে। এ ব্যাপারে মিয়ানমার আঞ্চলিক ইমিউনিটি বা আঞ্চলিক মুরব্বিদের উদাসীনতার সুযোগ গ্রহণ করতে চাইবে।
অন্যদিকে তাদের মজুদ করা চীন, রাশিয়া, ভারত এবং পাকিস্তানের তৈরি অত্যাধুনিক অস্ত্রসম্ভার তাদেরকে দিচ্ছে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। ফলে বঙ্গোপসাগর অঞ্চল হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। কাজেই এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের দরকার নির্ভুল ও বলিষ্ঠ কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং মিয়ানমার ইস্যুতে ইস্পাতকঠিন জাতীয় ঐক্য। এই দুটো প্রক্রিয়ায় ভুল করলে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে। এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্রে রেখেই মিয়ানমারের সাথে আমাদের সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় তৎপরতা চালানো উচিত। মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরত পাঠানোই হতে পারে আমাদের কূটনৈতিক সফলতা।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
E-mail: maksud2648@yahoo.com