করোনার বিপদ কেটে গেছে!
করোনার বিপদ কেটে গেছে! - ছবি : সংগৃহীত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রোটোকল অনুযায়ী টানা তিন থেকে চার সপ্তাহ করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ৫%-এর নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরে নেয়া হয়। সেই হিসেবে বাংলাদেশে গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সংক্রমণের হার ৫%-এর নিচে নেমে এসেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই নিম্নমুখী ধারার মধ্যেই গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে কোভিড ১৯-এর টিকাদান কার্যক্রম।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কি স্বস্তির পর্যায়ে এসেছে নাকি এখনো আশঙ্কা আছে?
দীর্ঘ প্রায় নয় মাস পর করোনাভাইরাস শনাক্তের হার গত ১৪ জানুয়ারি ৫%-এর নিচে নেমে আসে। সবশেষ শতাংশের এই হার ছিল গত বছরের এপ্রিল মাসে।
এরপর কয়েক দিন এই হার কিছুটা বেশি এলেও ১৯ জানুয়ারি থেকে সংক্রমণের হার টানা ৫% -এর নিচে রয়েছে।
এমনকি গত ছয় দিন ধরে এই হার ৩%-এর এদিক ওদিক ওঠানামা করছে।
এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মো. মোস্তাক হোসেন বলছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেলেও বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত থাকায় এখনো পুরোপুরি স্বস্তির সময় আসেনি।
জনস্বাস্থ্য বিধিগুলো বজায় না রাখলে যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, 'সংক্রমণের হার যদি নিম্নমুখী রাখতে হয় তাহলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে তাকে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, তার যোগাযোগে আসা মানুষদের কোয়ারেন্টিন করা, এসব বিষয়ে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে, যেন সংক্রমণ পুনরায় ছড়াতে না পারে।'
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে গত বছরের ৮ মার্চ। এপ্রিল পর্যন্ত সংক্রমণের হার একের অংকে ওঠানামা করলেও মে থেকে এই হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় জুলাই মাসে। সে সময় সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ ৩৩% ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
অগাস্ট থেকে সংক্রমণের গ্রাফ নামতে নামতে নভেম্বরে কিছুটা ওপরে ওঠে এবং আবার ডিসেম্বরে নামতে শুরু করে।
অথচ এই শীতের মৌসুমে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সংক্রমণের হারের এই নিম্নমুখীতার মধ্যেই শুরু হয়েছে সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম।
কিন্তু এই টিকা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থামিয়ে দেবে এমনটা ভাবার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শারমিন ইয়াসমিন।
তার মতে, করোনাভাইরাসের টিকা একমাত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা না। কারণ এই টিকা এখনও সব বয়সীদের ঢালাওভাবে দেয়া হচ্ছে না।
যারা টিকা নিচ্ছেন তারা যে শতভাগ নিরাপদ হয়ে যাবেন, সেটাও বলা যাচ্ছে না। কারণ এই টিকা দীর্ঘমেয়াদে রোগটিকে প্রতিরোধ করবে এমনটা গবেষণায় বেরিয়ে আসেনি।
সেক্ষেত্রে মিস ইয়াসমিনও গুরুত্ব দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর।
'আমরা যদি করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য যে পরিকল্পিত স্বাস্থ্যবিধি আছে, সেগুলো না মানি তাহলে এই পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তাই টিকা এলেও বা সংক্রমণের হার কমলেও মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া এই অভ্যাসগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। তবে টিকাদান প্রক্রিয়া যেহেতু শুরু হয়েছে, এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।'
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী আজ দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত করোনাভাইরাসের টিকার জন্য সারাদেশ থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন ১১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ।
এছাড়া গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে ৩ লাখ ৩৭ হাজার জনকে টিকা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই টিকা নেয়ার ব্যাপারে আরও বেশি প্রচার প্রচারণা করলে সেইসঙ্গে দেশের সব মানুষকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনলে একটি বড় জনগোষ্ঠীর প্রতিরোধ গড়ে তোলা বা হার্ড ইমিউনিটি সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে যত দিন পর্যন্ত না বাংলাদেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি একটি নির্দিষ্ট কমিউনিটিতে সীমাবদ্ধ করা যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিরাপদ বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা।
কারণ সব মানুষকে দুই ডোজ টিকার আওতায় আনা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
তিনি বলেন, 'আমার স্বস্তিতে আছি যে সংক্রমণের হার কম কিন্তু যেটুকু আছে সেটা সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সংক্রমণটা কোনো একটা নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে বা ক্লাস্টার হয়ে নেই। সংক্রমণটা একটা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলে আমরা সেটা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতাম আর দেশের বাকি অংশকে নিরাপদ বলতাম। কিন্তু সারাদেশে ছড়ানো থাকায় আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলতে পারছি না।'
সংক্রমণের হার কমে যাওয়া এবং টিকা চলে আসার কারণে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে জন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক করার আগে প্রতিটি ক্ষেত্রে মনিটরিং বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র : বিবিসি