কী ঘটেছিল প্রথম আরব ইসরাইল যুদ্ধে?
কী ঘটেছিল প্রথম আরব ইসরাইল যুদ্ধে? - ছবি : সংগৃহীত
ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শেষ হওয়ার মাত্র ৮ ঘণ্টা আগে ১৪ মে ১৯৪৮ ইসরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ডেভিড বেনগুরিয়ান।
এই ঘোষণা ইহুদিদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তব রূপদান করেছিল। এর পরের দিন ১৫ মে আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
দখলদারি ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আরব বাহিনীর এই আক্রমণ ইতিহাসে প্রথম আরব-ইসরাইল যুদ্ধ নামে পরিচিত।
এই যুদ্ধে সব দিক দিক থেকেই আরব বাহিনী এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত কার্যত পরাজয় বরণ করে। আরব নেতাদের উদ্ভট ও অপরিকল্পিত যুদ্ধকৌশলই ইসরাইলকে শক্তিশালী রাষ্ট্রে গঠনে সহায়তা করেছে।
যুদ্ধ শুরুর আগেই জর্ডানের বাদশাহর সাথে ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী গোল্ডামেয়ার এর বৈঠক নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। এই যুদ্ধে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ছিলেন সুপ্রিম কমান্ডার। তিনিই যখন 'পশ্চিম তীরের বিনিময়ে ইহুদি রাষ্ট্র্বের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়ার প্রতিশ্রুতি' দেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না যুদ্ধের ফলাফল কী হতে পারে।
যুদ্ধ জড়ানোর ঠিক আগ দিয়ে বাদশাহর বাণী- 'ইহুদিরা শক্তিশালী, তাদের সাথে যুদ্ধে যাওয়া আমাদের ভুল হচ্ছে।' অন্যদিকে, আবদুল্লাহর ছেলে যুবরাজ তালালের ঘোষণা 'আমরা পরাজিত'। এমন বক্তব্য আর যাই হোক কখনই বিজয় অর্জনকে সুগম করে না।
ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার আগেই হাগানা, লেহি, পালমাখ, ইরগুনের মতো ইহুদি সশস্ত্র গ্রুপগুলো সামুরিয়া, কাসুরিয়া, নাজারেত, দেইর ইয়াসিন, হাইফা ও জাফায় তাণ্ডব চালিয়ে অসংখ্য ফিলিস্তিনি হত্যা করে।
অবাক করা বিষয় হলো, ইসরাইলি হামলা প্রতিরোধে ক্যারিশম্যাটিক আরব নেতা কাদের আল হোসাইনি আরব রাষ্ট্রগুলো থেকে কোনো অস্ত্র সহায়তা পাননি।
যুদ্ধ শুরু হলে প্রথমদিকে ইসরাইল বিপর্যয় পড়েছিল। এমন সময় জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। এই সময় ইহুদি কমিউনিস্ট পার্টির চেষ্টায় চেকোশ্লোভাকিয়ার কাছ থেকে বিপুল অস্ত্রের চালান আসে ইসরাইলের হাতে।
বিপরীত পক্ষে, আরব রাষ্ট্রগুলো কোনো অস্ত্রই সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে যুদ্ধবিরতি শেষ হলে যুদ্ধের ফলাফলই পাল্টে যায়। রণাঙ্গনে এগিয়ে থাকা আরবরা একের পর এক ভূখণ্ড হারাতে থাকে।
অবশেষে ১৯৪৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন কূটনীতিক রালফ বানচের দূতিয়ালিতে অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইসরাইল পায় জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ।
নিরাপত্তা পরিষদের ৬৯ নম্বর প্রস্তাবে ইসরাইলকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷ এর ফলে রালফ নাচ শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান। এর আগে মধ্যস্থতা করতে এসে খুন হয়েছিলেন সুইডিশ কূটনীতিক ফলকি বার্নাডোট। এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আইজ্যাক শামির।
ভাবলেই অবাক হতে হয়, যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই মানুষ হত্যা করল তারাই শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করল।
প্রথম আরব ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস পাঠ শেষে মন একটি রায় দেয় তা হলো, এই যুদ্ধ আদৌ ফিলিস্তিনের পক্ষে নয়, বরং ইসরাইল রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করেছিল। আর এই অর্জনে আরব রাষ্ট্রনেতারা সাহায্য করেছিল। লোক দেখানো একটি যুদ্ধের সূচনা করে নিজ দেশের জনগণকে বুঝ দিয়েছে মাত্র।