ক্যান্সার নিয়ে ভুল ধারণা ও বাস্তবতা
ক্যান্সার নিয়ে ভুল ধারণা ও বাস্তবতা - ছবি : সংগৃহীত
ক্যান্সার শব্দটির নাম শুনলেই মানুষের মনে আতঙ্ক গ্রাস করে। নানা লোকে নানা কথা বলতে থাকে রোগীকে। ওইসব কুপরামর্শ শুনে নানা ভ্রান্ত ধারণা মাথায় চেপে বসে রোগীর। এইসব ভাবনার বেশিরভাগই সত্যি নয়। সমস্যা হলো, ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকেই সঠিক সময়ে চিকিৎসা করান না। এমনকী ধারণাগুলি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার উদ্রেক ঘটায়। রোগীর পক্ষে এই ধরনের মানসিক চাপ নেয়া মোটেই কাম্য নয়। অতএব, আসুন, দেখে নেই ক্যান্সার নিয়ে ‘মিথ’গুলি কী কী? সত্যিটাই বা কী?
মিথ : ক্যান্সার মানেই মৃত্যু
সত্যি : প্রায় সব ক্যান্সারই প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে ও চিকিৎসা করালে রোগী দীর্ঘ দিন সুস্থ শরীরে জীবন কাটান। আবার বেশ কিছু ক্যান্সার রয়েছে যেগুলির ক্ষেত্রে খুব খারাপ পর্যায়েও সঠিক চিকিৎসা করালে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। প্রয়োজন শুধু, লোকের কথায় কান না দিয়ে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ গ্রহণ করা। তাই হঠাৎ করে শরীরে কোনোরকম অস্বাভাবিক রকমের পরিবর্তন হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। রোগ ফেলে রাখবেন না। সচেতনতাই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান হাতিয়ার।
মিথ : ক্যান্সার ছোঁয়াচে অসুখ।
সত্যি : সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। কোনো ক্যান্সারই ছোঁয়াচে নয়। একমাত্র মহিলাদের সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার হওয়ার পিছনে দায়ী থাকে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণ। আর এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয় অসুরক্ষিত ঘনিষ্ঠ শারীরিক সম্পর্ক থেকে। এছাড়া হেপাটাইটিস বি, সি-এর সংক্রমণের পিছনে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং রক্তের আদানপ্রদানের হাত থাকে। এই ধরনের সংক্রমণ কিছু কিছু ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
মিথ : বংশে ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস না থাকলে ক্যান্সার হয় না।
সত্যি : ক্যান্সার হয় কোষের অস্বাভাবিক মিউটেশনের কারণে। এই মিউটেশন ঘটার পিছনে ‘জিন’ ছাড়াও অসংযমী জীবনযাত্রা, ভাইরাস সংক্রমণ, পরিবেশ দূষণের প্রভাব, রাসায়নিক বস্তুর সংস্পর্শে থাকা, মাত্রাতিরিক্ত সময় ধরে রোদে থাকা ইত্যাদি বহু বিষয় নির্ভর করে। তাই বংশে বা পরিবারে ক্যান্সারের রোগী না থাকলেও ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মিথ : ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা মানুষের ক্যান্সার হয় না
সত্যি : আগেই বলা হয়েছে ক্যান্সার হয় কোষের অস্বাভাবিক মিউটেশনের কারণে। মিউটেশন ‘ইতিবাচক চিন্তাভাবনা’র ওপর নির্ভর করে না। তবে হ্যাঁ, ক্যান্সার ধরা পড়ার পর সেরে উঠতে ও লড়াই জারি রাখতে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা খুবই সাহায্য করে।
মিথ : বায়োপসি করালে ক্যান্সার
ছড়িয়ে পড়ে
সত্যি : সবচাইতে বড় ভ্রান্ত ধারণা। ক্যান্সার নির্ণয়ক ছোট একটি পরীক্ষা হল বায়োপ্সি। কোনও ব্যক্তির ক্যান্সার হয়েছে কি না সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বায়োপ্সি করানো হয়। বায়োপ্সি করার তিনরকম পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত, সন্দেহজনক অংশ থেকে সুচের সাহায্যে কিছু কোষ নিয়ে তার পরীক্ষা করে দেখা হয়। দ্বিতীয়ত, সন্দেহজনক জায়গা থেকে সার্জারির মাধ্যমেও কিছু অংশ নিয়েও বায়োপ্সি করা হতে পারে।
তৃতীয়ত, অপারেশন করে বাদ দেয়া টিউমার থেকে কিছু অংশ নিয়েও বায়োপ্সি করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল থেকে রোগী ক্যান্সার আক্রান্ত কি না তা যেমন জানা যায়, তেমনই রোগ কোন পর্যায়ে রয়েছে তাও জানা সম্ভব।
মিথ : চিনি বা মিষ্টি খেলে ক্যান্সার দ্রুত ছড়ায়। মিষ্টি কম খেলে ক্যান্সার দ্রুত শুকিয়ে যায়।
সত্যি : এই ধারণার কোনও ভিত্তি নেই। বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে এই বিষয়ে। কোনও গবেষণাতেই দেখা যায়নি যে মিষ্টি খেলে ক্যান্সার দ্রুত ছড়ায়। এমনকী মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করলেও যে ক্যান্সার শুকিয়ে যায়, এমন প্রমাণও মেলেনি। তবে হ্যাঁ, একজন সুস্থ ব্যক্তি অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টিপ্রধান খাদ্য খেলে তার শরীরে মেদের মাত্রা বাড়বে। মেদ বাড়লে তার ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কাও বাড়বে।
মনে রাখতে হবে, সুগার এবং স্থূলত্ব বাড়িয়ে দেয় ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা।
মিথ : কেমোথেরাপিতে চুল উঠে যায়। আর চুল গজায় না।
সত্যি : কেমোথেরাপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। কোনো কোনো রোগীর চুল উঠে যায়। তবে কেমোথেরাপি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে পুনরায় চুল গজাতে থাকে।
মিথ : কেমোথেরাপিতে তীব্র ব্যথা হয়
সত্যি : কেমোথেরাপি মোটেই যন্ত্রণাদায়ক প্রক্রিয়া নয়। বেদনাদায়ক হলে বিরাট সংখ্যক রোগী এই থেরাপির সাহায্যে সুস্থ হয়ে উঠতেন না।
মিথ : টিউমার শক্ত হলে সার্জারির দরকার পড়ে না
সত্যি : ক্যান্সার চিকিৎসার অন্যতম নির্ভরযোগ্য অস্ত্রই হল, ম্যালিগনেন্ট টিউমারকে সার্জারি করে দেহ থেকে বাদ দিয়ে দেয়া।
সুতরাং দরকার পড়লে নিশ্চয় সার্জারি করতে হবে।
সূত্র : বর্তমান