টানা চার টেস্টে হার!প্রশ্নের মুখে কোহলির অধিনায়কত্ব
বিরাট কোহলি - ছবি : সংগৃহীত
একদিকে ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি। অন্যদিকে ক্যাপ্টেন জো রুট। দুই তারকার সম্মুখ সমরে শেষ হাসি হাসলেন ইংরেজ তারকাই। আর চেন্নাই হারের পরেই প্রশ্নের মুখে পড়ল কোহলির নেতৃত্ব। আরো একবার। কোহলির নেতৃত্বে টানা চার টেস্টে হারল টিম ইন্ডিয়া। অন্যদিকে, নেতৃত্বে রেকর্ড গড়লেন জো রুট। নেতা হিসেবে দলকে ২৬তম টেস্ট জয় এনে দিলেন। ইংরেজ অধিনায়কদের মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি। এর আগে এত বেশি টেস্ট অন্য কেউ ইংরেজ অধিনায়ক জিততে পারেননি।
২০১৭ সালে শেষবার ঘরের মাঠে টেস্ট হেরেছিল টিম ইন্ডিয়া। তার পর টানা চার বছর অপরাজেয় ছিল ভারত। সেই তকমাও মঙ্গলবার শেষ হয়ে গেল।
তবে আলোচনায় চলে আসছে ক্যাপ্টেন কোহলির পারফরম্যান্স। ব্যাট হাতে দলের সেরা ভরসা হলেও, অধিনায়ক হিসেবে বারবারই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন কোহলি। চেন্নাইয়ের হার ধরলে টানা চার ম্যাচ হার ভারতের। শেষবার যে টেস্টে কোহলি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই এডিলেড টেস্টে কলঙ্কের নজির গড়ে ৩৬ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। তার আগে নিউজিল্যান্ড সফরে টানা দুই টেস্টে হারে ভারত।
১) নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে হার
২) নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটে হার
৩) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮ উইকেটে হার
৪) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২২৭ রানে হার
চতুর্থ ইনিংসে ভারতীয়দের হয়ে অবশ্য সর্বোচ্চ রান করে গেলেন তারকা। পঞ্চম দিনে কোহলি একাই লড়াই চালিয়ে ৭২ করে যান। তারপর দ্বিতীয় সেশনে বেন স্টোকসের বলে বোল্ড হয়ে যান। ২০১৮ সালে জানুয়ারির পর এই প্রথমবার বোল্ড আউট হলেন তিনি। সেই ম্যাচের পর ৩৭ ইনিংসে ব্যাট করলেও বোল্ড হননি। সেটাই এবার হলেন চেন্নাইয়ে।
ক্যাপ্টেন কোহলির দুর্দশার দিনে নয়া শৃঙ্গ গড়ে ফেলল ইংল্যান্ড। চেন্নাই টেস্ট জয়ে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন জিইয়ে রাখা ছাড়া বিদেশে টানা ছয় টেস্ট জিতে ফেলল। ভারতে আসার আগেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে পরপর দু টেস্ট জিতেছিল ইংরেজরা। সেই কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ন রেখেই এদিন জয়। উপমহাদেশে বাইরের দেশ হিসেবে টানা টেস্ট জেতার নজিরে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। ২০০২-২০০৪ সালে টানা সাত টেস্ট জিতেছিল অজিরা। চেন্নাইয়ে পরের টেস্ট জিতলেই সেই রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলবে ইংল্যান্ড।
তীর্থদের দুষলেন বিরাট
প্রথম টেস্টে হারের পর কোনো অজুহাতই দিতে চাননি ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে জেতার খিদে ছিল না। খেলার মধ্যে তীক্ষ্ণতার অভাব দেখা গিয়েছে। প্রথম দু’দিন বিপক্ষকে সেভাবে আমরা চাপে ফেলতে পারিনি। এই পর্বে উইকেট থেকেও ফায়দা পায়নি বোলাররা। মিস হয়েছে একাধিক ক্যাচ। হয়েছে নো বলও। যার ফল ভুগতে হয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, ইংল্যান্ড অনেক বেশি পেশাদারিত্ব ও ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে। যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে জো রুটরা। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত উন্নতির প্রয়োজন অনস্বীকার্য।’
বোলিং বিভাগের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে খুশি নন ভিকে। তার কথায়, ‘আমাদের সম্মিলিত বোলিং আরো ভালো হওয়া উচিত ছিল। প্রথম ইনিংসে অশ্বিন-ইশান্তরা ভালো বল করলেও ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। অনেক রান ওদের উপহার দিয়েছি। ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছে ব্যাটসম্যানরাও।’পঞ্চম ও ষষ্ঠ বোলার হিসেবে শাহবাজ নাদিম এবং ওয়াশিংটন সুন্দরের পারফরম্যান্সে হতাশ ভারত অধিনায়ক। তার মতে, নাদিম ও সুন্দর পরিকল্পনামাফিক প্রয়োগ ঘটাতে পারেননি। প্রত্যাশিত ছন্দে পাওয়া যায়নি বুমরাহকেও।
প্রথম টেস্টে কুলদীপ যাদবের বদলে বাঁহাতি স্পিনার শাহবাজ নাদিমকে খেলানো নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই ব্যাপারে কোহলির বিশ্লেষণ, ‘দলে দু’জন অফ স্পিনার রয়েছে। তাই কুলদীপকে নেয়া হয়নি। আমাদের বোলিং বিভাগে আরো বৈচিত্র্য প্রয়োজন। তাই সঠিক বোলিং কম্বিনেশন নিয়েই আমরা খেলেছি।’ উল্লেখ্য, কুলদীপ ভারতের হয়ে শেষ টেস্ট খেলেছিলেন ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে।
বিরাটের কথায়, ‘প্রথম ইনিংসে ঋষভ পন্থ, ওয়াশিংটন সুন্দর ও চেতেশ্বর পূজারা ছাড়া ব্যাটিংয়ে আর কেউ ভরসা দিতে পারেনি। তবে নিজেদের ভুল শুধরে নিতে পারব বলেই বিশ্বাস রাখি। দ্বিতীয় টেস্টে সমতা ফেরানোর চেষ্টা করব। সহ-ক্রিকেটারদের বলব, বডি ল্যাঙ্গুয়েজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা দরকার। জেতার খিদে বাড়ানোর কথা টিম মিটিংয়ের আলোচনা করব।’
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও বর্তমান