অ-তে অজগর, অ-তে অপারেশন
অ-তে অজগর, অ-তে অপারেশন - ছবি : সংগৃহীত
স্বরবর্ণের প্রথম বর্ণ আমরা সবাই জানি। ছোটবেলায় শেখা বুলি অ-তে অজগরটি ওই আসছে তেড়ে এখনো বিস্মৃত হয়নি এটা নিশ্চিত। আমার মাথায় আসে না ভয়ঙ্কর এই সাপ দিয়েই কেন ছড়া তৈরি করা হলো?
এই লেখায় থাকছে অ দিয়ে গঠিত কিছু শব্দ নিয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য।
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা ২০টি গুরুত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টর নির্ধারণ করেছেন। এই ফ্যাক্টরগুলো সামনের দিনে বিশ্বে অধিক আলোচিত হবে। এর মধ্যে একটি হলো নয়া উসমানিয়া সাম্রাজ্যের উত্থান।এ নিয়ে প্রাথমিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।
উসমানিয়া সাম্রাজ্যের জন্ম হয়েছিল ১২৯৯ সালে। উত্তর পশ্চিম তুরস্কের অগুজ তুর্কি গোত্র প্রধান উসমান এই সাম্রাজ্যের ভিত্তি গড়েছিলেন৷ এই সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল ১২৯৯ সাল থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয় এই সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত করে। মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে এই সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটে।
১৭ শতকের প্রথমভাগ পর্যন্ত এই সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল ৩২টি প্রদেশ। এর সীমানা প্রায় ৫২ লাখ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত ছিল। বিলুপ্তির আগে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ১৮ লাখ বর্গকিলোমিটার বা ৬ লাখ ৯০ হাজার বর্গমাইল এলাকা এই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল।
আজকের দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপ, মধ্য ইউরোপের কিছু অংশ, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, পশ্চিম এশিয়া, ককেশাস এলাকা, উত্তর আফ্রিকা ও আফ্রিকার চূড়া হিসবে পরিচিত দেশগুলো এই সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। মানচিত্রে দৃষ্টি দিলেই বুঝতে পারা যায় কত বিশাল এলাকাজুড়ে এই সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটেছিল।
১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল দখলের মধ্য দিয়ে উসমানিয়া সাম্রাজ্যের অবস্থান শক্ত হয়েছিল। অনেকে মত দিয়েছেন, এই সালেই ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে রেনেসাঁস শুরু হয়েছিল।
বর্তমান তুরস্কের নেতৃত্বে উসমানিয়া সাম্রাজ্যের উত্থানের সুর শুনতে পাওয়া যাচ্ছে৷ এ নিয়ে অন্য কোনো লেখায় বিস্তারিত আলাপ করার ইচ্ছা আছে।
উসমানিয়াদের বিনাশ ঘটলে মধ্যাপ্রাচ্যের দেশগুলো ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে ভাগ বাঁটোয়ারা হয়। আজকের ঝামেলাপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ফিলিস্তিনের ম্যাডেন্ট পেয়েছিল ব্রিটেন।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর ১৯১৭ সালে এক ঘোষণায় ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পর নানা ঘটনার পথ মাড়িয়ে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
জন্মের পর থেকেই এই রাষ্ট্র নতুন উদ্যমে নানা উপায়ে ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে এমনি এক হামলায় ২১০০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়। এই হামলার নাম দেয়া হয়েছিল অপারেশন প্রোটেকটিভ এজ।
এমন অনেক অপারেশনের কথাই আমরা শুনে থাকি। এর মধ্যে অধিক আলোচিত কিছু অপারেশন হলো ওডিসি ডন, রেড ডন, গেরেনিমো। এই প্রতিটি অপারেশনই বিশেষ একজন ব্যক্তিকে হত্যার জন্য পরিচালিত হয়েছিল।
রেড ডনের মাধ্যমে সাদ্দাম হোসেন, ওডিসি ডনের মাধ্যমে গাদ্দাফি, গেরেনিমোর মাধ্যমে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়৷ এর মধ্যে ওডিসি ডন ও গেরোনিমা পরিচালিত হয় ২০১১ সালে, রেড ডন ২০০৩ সালে।
ইরাকের নামের সাথে আরো দুটি অপারেশন জড়িয়ে আছে। একটি হলো- ডেজার্ট স্ট্রম, যা ১৯৯০ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় পরিচালিত হয়েছিল৷ ইরাক কুয়েত আক্রমণ করলে এই যুদ্ধের সূচনা হয়৷
অপরটি হলো অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম। ২০০৩ সালে ইরাকে পরিচালিত অভিযান যা আবার দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ নামেও পরিচিত।
৯/১১-এর পর আল কায়েদাকে নির্মূল করতে আফগানিস্তানে পরিচালিত দুটি অভিযান অপারেশন এন্ডুরিং ফ্রিডম ও অপারেশন অ্যানাকোন্ডাও আলোচিত হয়েছিল।
এর বাইরেও অনেক অপারেশন রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের সি-লায়ন, হাস্কি, বারবারোস, ওভারলোড, লাস্টের নাম স্মরণ রাখা যেতে পারে।
অপারেশন নিয়ে আলাপ করতে চাইলে আরো দীর্ঘ করা যাবে। আর মাত্র দুটি অপারেশন এর নাম জানিয়ে আজকের মতো ক্ষান্ত দিব।
একটি হলো- অপারেশন ডিপ ফ্রিজ। এন্টার্টিকা মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত অভিযান এই নামে পরিচিত। এখানে মার্কিন সেনাবাহিনী একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রায় ৪০টি দেশের গবেষকরা এখানে কাজ করছেন।
অপরটি হলো- অপারেশন রেক্টর হোপ। ১৯৯২ সালে মার্কিন বহুজাগতিক বাহিনী সোমালিয়ায় অবতরণ করেছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা মার্কিন সেনাদের অবরুদ্ধ করে কাউকে কাউকে হত্যাও করেছিল। পরে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়।
স্বরবর্ণের প্রথম বর্ণ অ দিয়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আলাপ বাকি থেকে গেল। পরের লেখায় অবশিষ্ট বিষয় নিয়ে আলাপ করবো। আজ এই পর্যন্ত।