কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ এবং কিছু কথা

আবির রায়হান | Feb 08, 2021 05:14 pm
কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ এবং কিছু কথা

কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ এবং কিছু কথা - ছবি সংগৃহীত

 

২০১৭ সালের ৫ জুন জিসিসি সদস্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিত্র দেশ মিসর আরেক জিসিসি সদস্য কাতারের সাথে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি কাতারের সাথে তাদের সীমান্ত অবরুদ্ধ করারও ঘোষণা দেয়। তাদের অভিযোগ, কাতার প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বব্যপী বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে ও সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে ও ইন্ধন যোগাচ্ছে। কাতার এই অবরোধের তীব্র সমালোচনা করলেও এর বিপক্ষে পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকে। জিসিসি-ভুক্ত অপর দু’টি দেশ ওমান ও কুয়েত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত নেয এবং সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেয়। সাড়ে তিন বছর পর অবশেষে ২০১৭ সালে ৫ জানুয়ারি কাতার ও সৌদি-আমিরাতি-বাহরাইনি-মিসরীয় জোট সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে রাজি হয়।

কাতারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ও অবরোধারোপের প্রধান উদ্যোক্তা ছিল প্রতি সৌদি আরবের কাতারের প্রতি রাগান্বিত হওয়ার কারণ অনেক গভীরে প্রোথিত। ১৯৯৫ সালে এক প্রাসাদ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানি। তিনি নিজ পিতা খলিফা বিন হামাদ আল থানিকে ক্ষমতাচ্যূত করেন। খলিফা এ সময় সুইজারল্যান্ড সফরে ব্যস্ত ছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর হামাদ সংস্কারমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা শুরু করেন। তার বাবা খলিফা ছিলেন রক্ষণশীল। ১৯৭২ সালে এক অভ্যুত্থানে চাচাতো ভাই আহমাদ বিন আলি আল থানিকে সরিয়ে ক্ষমতায় বসার পর তিনি ক্ষমতা নিজ হাতে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। কিন্তু ছেলে হামাদ ক্ষমতায় এসে উদারীকরণের নীতি গ্রহণ করেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সংসদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি। কিন্তু পরের বছরই অর্থমন্ত্রী হামাদ বিন জাসিম আল থানির যোগসাজশে এক পাল্টা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। কাতার এর পিছনে মিশর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সর্বোপরি সৌদি আরবকে দায়ী করে। অবশ্য এই অভ্যুত্থান আয়োজনের পিছনে এই রাষ্ট্রগুলোর, বিশেষত সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিহিত ছিল।

আরব উপদ্বীপ তথা মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম রাষ্ট্র সৌদি আরব। ৯৫% মরুময় এই বিশাল দেশটির প্রতি বর্গ কি.মি.-তে মাত্র ১৫ জনের বাস। ১৯৩২ সালে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সৌদি আরব নিজেকে এই অঞ্চলের পরাশক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করে। বিশেষত ইসলাম ও আরব বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সৌদি রাজ পরিবার নিজেদের মুসলিম ও আরবদের নেতৃত্ব উত্তরাধিকার সূত্রে ভোগ করার মানসিক পোষন করা শুরু করে। কিন্তু আধুনিক যুগে দেশটির প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হলো এর অফুরন্ত তেল সম্পদ। ১৯৩৮-এ পশ্চিমাদের সহায়তায় পশ্চিম প্রদেশে তেলক্ষেত্র আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই সৌদি রাজ পরিবার নিজেদের দেশকে এই অঞ্চলে পশ্চিমাদের তল্পিবাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। শুধু তাই নয়, ক্রমে তারা বিশ্বজুড়ে ইসলামবাদ প্রচারে গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেয়। তাদের উপসাগরীয় প্রতিবেশী দেশগুলোও তেল-গ্যাসে সমৃদ্ধ। কিন্তু তা হলেও আয়তনে অনেক ছোট ও তেমন জনবহুল না হওয়ায় তারা সৌদি কর্তৃত্ব মেনে চলতে বাধ্য হয়।

হামাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি অবশ্য ছিল কাতারকে সৌদি প্রভাবমুক্ত করা। এ জন্য তিনি দু’টি পদক্ষেপ নেন – কাতারকে সৌদি প্রভাববলয় থেকে সরিয়ে এনে ভিন্ন কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে কাতারের নিজস্ব প্রচার মাধ্যম গড়ে তোলা। এরই ফলশ্রুতিতে কাতার একই সাথে ইরানের সাথে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। আর একই সময়ে চালু হয় আল-জাজিরা, আরবীভাষী বৈশ্বিক সংবাদ মাধ্যম, যার অর্থায়ন করা হয় কাতার সরকারের মাধ্যমে। সৌদি আরবের সাথে কাতারে দ্বন্দ্বের শুরুটাও এখানেই।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us