মিয়ানমার ও বাইডেনের হুঁশিয়ারি
মিয়ানমার ও বাইডেনের হুঁশিয়ারি - ছবি সংগৃহীত
প্রতিবেশী মিয়ানমারে এখন চলছে সেনাশাসন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে গ্রেফতার করে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। অবসান হয় পাঁচ বছরের সামরিক-বেসামরিক যৌথ সরকারের।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর একটি দেশে সেনা শাসন জারির এটা প্রথম ঘটনা। ফলে তার জন্যও উপস্থিত হয়েছে ‘অগ্নিপরীক্ষা’। মিয়ানমারে এ ঘটনার পর তিনি নিজেও এর বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। অবিলম্বে বেসামরিক নির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শুধু মিয়ানমারই নয়। জো বাইডেন ৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, “বিশ্বের যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকা ইজ ব্যাক’। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই পরিচালিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি।”
ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ণ গণতন্ত্র নয়, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে। তাই নিজের দেশকে পূর্ণ গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। সামরিক শাসন, একনায়কতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসন অনেক দেশেই চলছে। এর মধ্যে ৩৫টি দেশে আছে কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং ৫৭টি দেশে স্বৈরশাসন। সেসব দেশ নিয়েও বাইডেনের ভাবনার বিষয় আছে।
স্বৈরশাসনে কবলিত দেশের তালিকায় এক নম্বরে আছে উত্তর কোরিয়া। সাবেক ট্রাম্প প্রশাসন ও উত্তর কোরীয় নেতার মধ্যকার আচরণ বিশ্ববাসী ইতোপূর্বে পর্যবেক্ষণ করেছে। আমেরিকায় ট্রাম্পের শাসনের অবসান হয়েছে। দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে কর্তৃত্ববাদী শাসকে পরিণত করেছিলেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত ২০ বছর ধরে ক্ষমতায়। কখনো প্রধানমন্ত্রী, আবার কখনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ক্ষমতায় আছেন। বিগত গণভোটে তিনি আরো ১৬ বছর অর্থাৎ ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে কথিত ম্যান্ডেট নিয়েছেন।
মিসরের প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান আবদেল ফাতাহ সিসি ২০১৩ সালে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুরসিকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসেন। তথাকথিত নির্বাচন করে তিনি কর্তৃত্ববাদী শাসন চালাচ্ছেন। বিরোধীদের ওপর চলছে দমন-পীড়ন।
ব্রিটিশের কাছ থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ৭৩ বছরের মধ্যে মিয়ানমারে দীর্ঘ ৬০ বছরই ছিল সামরিক শাসন। অং সান সু চিকে মুক্তিদানের পর ২০১৫ সালে দেশটিতে নির্বাচন হয়। সামরিক-বেসামরিক মিলে সরকার গঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০২০ সালে নির্বাচনে সু চির দল আগের চেয়ে আরো বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। কিন্তু নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে বেসামরিক সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হয়নি। ফলে মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে সেটা দেখার জন্য সবাই বেশি কৌতূহলী।
জো বাইডেনের অঙ্গীকার
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশে দেশে চলা কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে তার দেশের অবস্থান নেয়ার অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেছেন।
ক্ষমতাগ্রহণের পর এই প্রথম প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট সফর করেন। এ সময় নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকিনও উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার ঐতিহ্যগত মিত্রদের গুরুত্ব দেয়াসহ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার এবং বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে পারস্পরি শ্রদ্ধা ও মর্যাদাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বমঞ্চে আবার পদার্পণ করেছে এবং বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বৈশ্বিক সর্বজনীন অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসনের প্রতি সম্মান এবং প্রদর্শন হবে আমাদের শক্তির ভিত্তি; অবশ্যও এই মূল্যবোধের অনেক বিষয় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাপের মুখে রয়েছে।
জো বাইডেন বলেন, আমেরিকা তার জোট পুনর্গঠন করতে মনোযোগী হবে। জোট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সম্পদের মধ্যে একটি। কূটনীতিতে নেতৃত্ব দেয়া মানে, জোট ও অংশীদারদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। চীন সম্পর্কে বেশি কিছু না বলেই তিনি উল্লেখ করেন, চীনের অর্থনৈতিক পীড়নকে মোকাবেলা করা হবে। মানবাধিকারের ওপর চীনের আক্রমণ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের নেতিবাচক দৌরাত্ম্যকে যুক্তরাষ্ট্র মোকাবেলা করবে।
পররাষ্ট্র দফতরে উপস্থিত এবং নানা প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেয়া কূটনীতিকদের উদ্দেশে বাইডেন ২০ মিনিট বক্তৃতা করেন। তার পূর্বসূরি অর্থাৎ সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সব নীতি ঝেড়ে ফেলারও ইঙ্গিত দেন। ইয়েমেন যুদ্ধকে ‘একটি মানবিক বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়ে বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেন যুদ্ধে আক্রমণাত্মক সব সমর্থন বন্ধ করবে। এ বিষয়ে সৌদি আরব ও ইয়েমেনের বিরোধ নিরসনে তার প্রশাসনের একজন কূটনীতিক নিয়োগ দেয়ার কথাও ঘোষণা করেন। জার্মানিতে মার্কিন সেনাদের পুনঃমোতায়েন বন্ধ, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রতি হুঁশিয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রে মানবিক আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ বাড়ানোর বিষয়েও তার নীতি তুলে ধরেছেন।
দ্য গ্রেট ডিক্টেটর ও গণতন্ত্র
১৯৪০ সালের ১৫ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিল চার্লি চ্যাপলিনের বিখ্যাত ছবি ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’। হিটলারের স্বৈরশাসনকে ব্যঙ্গ করে নির্মিত হয়েছিল ছায়াছবিটি। ব্যঙ্গাত্মক ধ্রুপদী এই চলচ্চিত্রে হিটলারের নৃশংসতার চিত্র হাসির আড়ালে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছিলেন চ্যাপলিন। হিটলারের জন্মের চারদিন পর জন্ম হয়েছিল চ্যাপলিনের। দেখতে হিটলারের সঙ্গে তার অনেকটাই মিল। বৈশিষ্ট্য একজনের হাসি, অন্যজনের ভীতি। হিটলার নিজেও ছবিটি গোপনে দেখেছিলেন। তবে জার্মানি এবং আরো কয়েকটি দেশে ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’ দেখানো নিষিদ্ধ ছিল।
এখন আর হিটলারের শাসন নেই। তবে দেশে দেশে নানা ছদ্ম নামে রয়ে গেছে সেই শাসন। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে দেখানো হয়, বিশ্বের মাত্র ১৯টি দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র চর্চা হচ্ছে। বিশ্ব জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে। একই বছর জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেরটেলসম্যান স্টিফটুং তাদের প্রতিবেদনে দেখায়, পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ মিলে ৭১টি দেশে গণতন্ত্র আছে। আর একনায়কতান্ত্রিক শাসনাধীন দেশের সংখ্যা ৫৮।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্যামুয়েল ফিলিপস হান্টিংটন তার বইয়ে আধুনিক বিশ্বে গণতন্ত্রের তিনটি জোয়ারের কথা বলেছেন। প্রথম জোয়ারটি ছিল ১৮২৮ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ ২৯টি দেশ গণতন্ত্রের পথে তখন যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৯২০ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ২০ বছর গণতন্ত্রের ভাটার সময় গেছে। তখন কোথাও ফ্যাসিজম, কোথাও কমিউনিজমের বিকাশ ঘটেছিল। গণতন্ত্রের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যৌথ বাহিনীর বিজয়ের পর। তখন বিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা ছিল ৩৬। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আবার ভাটা আসে। এ সময় ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে কর্তৃত্ববাদী শাসন জোরদার হয়ে ওঠে। গণতন্ত্রের শেষ জোয়ারটি ছিল ১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। তখন গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা ছিল ৭২। হান্টিংটন বেঁচে নেই। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো গণতন্ত্রের আরো ‘জোয়ার-ভাটা’ নিয়ে লিখতে পারতেন। তবে গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে পূর্ণ গণতন্ত্র আছে মাত্র ২৩টি দেশে। আর ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র আছে ৫২টি দেশে। ৩৫টি দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনের হাইব্রিড রেজিম বা মিশ্র শাসন এবং ৫৭টি দেশে চলছে স্বৈরশাসন। ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং ব্রাজিলও রয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, অনেক দেশে গণতন্ত্র নামেমাত্র কার্যকর রয়েছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলো সামরিক একনায়কের মতোই আচরণ করছে। তাদের মতে নির্বাচন হলো, গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা। সেটা হতে হবে অবাধ ও স্বচ্ছ। কিন্তু যেসব দেশে বেসামরিক একনায়কতন্ত্র আছে সেখানেও নিয়মিত নির্বাচন হয়। তথাকথিত এই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করে চলে। কারচুপি শুধু জাল ভোটের মাধ্যমেই হয় না, আরো নানা উপায়ে হয়। বাংলাদেশে গত নির্বাচনের আগে রাতেই ভোটদান হয়ে গেছে। গণতন্ত্রে জনগণের মতামতের বিষয়টি প্রাধান্য পেলেও কর্তৃত্ববাদী শাসকরা জনগণকে সহিংসভাবে দমনের চেষ্টা করে থাকেন। এতে ভোটাররা ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। আর কর্তৃত্ববাদী ওই শাসকদের ছকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গঠিত সংসদ তাদের একচ্ছত্র আধিপত্যেই চলে। তারা নিরাপত্তা বাহিনীকেও নানা ধরনের আইনবহির্ভূত কাজে ব্যবহার করেন। বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন তাদের আজ্ঞাবাহী হয়। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে এবং গণমাধ্যমও নিয়ন্ত্রণের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। এ সুযোগে দেশে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসক ও একনায়করা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করেন কঠোরভাবে।
ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শাসন
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) গণতন্ত্রের সূচক প্রকাশ করেছে। এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ‘হাইব্রিড রেজিম’ বা মিশ্র শাসনের দেশের তালিকায় রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ‘হাইব্রিড রেজিম’ বলে যেসব দেশকে বর্ণনা করা হয়, যেখানে গণতান্ত্রিক চর্চা রয়েছে; কিন্তু সেখানে নিয়মিত নির্বাচন হলেও রাজনৈতিক দমন-পীড়নও চলে। অর্থাৎ ওইসব দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা বিরাজমান।
ইআইইউ ২০০৬ সাল থেকে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। তাদের বেঞ্চ মার্ক ১০ পয়েন্টের মধ্যে এ বছর বাংলাদেশের স্কোর ৫ দশমিক ৯৯। গত বছর গণতন্ত্রের তালিকায় ১৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ছিল ৮০তম। এবার চার ধাপ এগিয়ে ৭৬। স্কোর ৬ দশমিক ১১। সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১৬৫ দেশের এই তালিকায় বাংলাদেশের মতো মিশ্র বা হাইব্রিড শাসন রয়েছে ৩৫টি দেশে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ভারতের অবস্থান ৫৩তম এবং শ্রীলঙ্কার ৬৮তম। পাকিস্তান ১০৫তম এবং মিয়ানমার ১৩৫তম।
গণতন্ত্রের তালিকায় ৯ দশমিক ৮১ পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং নেদারল্যান্ডস। যুক্তরাষ্ট্রের স্থান হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায়। তালিকার সবচেয়ে নিচে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। এ ছাড়াও আছে কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, সিরিয়া, শাদ প্রভৃতি দেশ।
নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার- এই পাঁচটি মানদণ্ডে ১০ পয়েন্ট ধরে বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বিচার করার মাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এরপর দেশগুলোকে চারভাবে অর্থাৎ পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, মিশ্র শাসন (হাইব্রিড) ও স্বৈরশাসনে ভাগ করা হয়। স্কোর ৮ এর বেশি হলেই পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। ৬ থেকে ৮ হলে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৪ থেকে ৬ হলে মিশ্র শাসন আর ৪ এর কম হলে স্বৈরশাসন বলে ধরে নেয়া হয়।
জার্মান প্রতিষ্ঠান ‘বেরটেলসম্যান স্টিফটুং ২০১৮ সালে তাদের রিপোর্টে বিশ্বের নতুন পাঁচ স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে বলে উল্লেখ করেছিল। রিপোর্টে ১২৯টি দেশের মধ্যে ৫৮টি দেশ তখন স্বৈরশাসনের অধীন এবং ৭১টি দেশ গণতান্ত্রিক বলে বর্ণনা করেছিল। রিপোর্টটিতে আরো বলা হয়েছিল, বিশ্বে গত ১২ বছরের মধ্যে গণতন্ত্র এবং সুশাসনের অবস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যেসব দেশের ওপর সমীক্ষা চালানো হয় তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় পাঁচটি দেশের কথা- বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া এবং উগান্ডা। বলা হয়েছিল, ওইসব দেশ গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ড পর্যন্ত মানছে না। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে তখন এ রিপোর্টের প্রতিবাদ করেছিলেন সরকারের উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। তেমনি ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের রিপোর্টেরও প্রতিবাদ জানিয়ে মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘রিপোর্টটি সঠিক নয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র রয়েছে। এখানে মেয়াদ শেষে নির্বাচন হচ্ছে।’
দেশের সুশীলসমাজ গত বৃহস্পতিবারও এক সেমিনারে দাবি করেছে, দেশে সুশাসনের দারুণ অভাব রয়েছে। জনগণের প্রতি ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতা না থাকা এবং কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার প্রভাব পড়ছে রাষ্ট্রের প্রতিটি খাতে। ‘সুজন’ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জবাবদিহিতার একটি জায়গা হচ্ছে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করা। সেটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এবার পৌরসভা নির্বাচনে দেখা গেল এত অনিয়ম, তবুও কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। কোনো বিরোধী দল বা বিরোধী কণ্ঠ নেই। কণ্ঠরোধের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আছে। (প্রথম আলো, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব