ভারতের উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়, প্রকৃতির প্রতিশোধ!
ভারতের উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়, প্রকৃতির প্রতিশোধ! - ছবি সংগৃহীত
রুষ্ট প্রকৃতি। এক ঝাপটায় স্রেফ ধুয়ে মুছে গেল ৩০০০ কোটি রুপির বিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্প তৈরি হতে উত্তরাখণ্ডে ফাঁটানো হয়েছিল একের পর এক ডিনামাইট। পাহাড় ভাঙার জন্য চলেছে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি। কেটে ফেলা হয়েছে একের পর এক গাছ। যার জেরেই কি এমন ঘটনা? স্পষ্ট কোনো উত্তর জানা নেই। হিমবাহ ভাঙার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞদের কাছে। তবে স্থানীয়দের কথায় প্রতিশোধ তুলল প্রকৃতি!
রেইনি গ্রামের এই হাল মনে করাচ্ছে চিপকো আন্দোলনের ইতিহাস। গাছকে জড়িয়ে ধরে পরিবেশ বাঁচানোর এক অহিংস লড়াই। গাছ ও বন রক্ষার জন্য গাছকে জড়িয়ে ধরে যে অহিংস আন্দোলন হয়েছিল ৭০-এর দশকে। আন্দোলনের আঁতুরঘর ছিল এই রেইনি গ্রাম। গাছ কাটা বন্ধের জন্য গাছকে জড়িয়ে ধরে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গ্রামবাসীরা। ওই সময় চিপকো আন্দোলনকারীরা আমলাতন্ত্রের হাত থেকে তাদের বনজ সম্পদ রক্ষা করতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেই আন্দোলনের জোর আজ কতটা রয়েছে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একের পর এক হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। যা উত্তরাখণ্ডের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। একের পর এক উন্নয়ন আনতে আঘাত হানা হচ্ছে প্রকৃতির উপর। ক্ষতি করা হচ্ছে হিমালয়ের। দিনের পর দিন পাহাড় ভাঙার জন্য ফাটানো হচ্ছে ডিনামাইট। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ সরকারের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার জোটে তছনছ হয়ে যাচ্ছে উত্তরাখণ্ড।
২০১৩ সালের পর রবিবারের ঘটনা সতর্কবার্তা হিসাবে মনে করছেন বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী। উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়ের পর গঙ্গার উপর বিদ্যুৎপ্রকল্প না তৈরির পক্ষে সওয়াল হয়েছেন তিনি।
উত্তরাখণ্ডে বাড়ছে বিপর্যয়, উদ্ধার ১৯ লাশ
হরিদ্বার হৃষিকেশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গঙ্গার তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের হিমবাহ ধসের জেরে রোববার যে বিপর্যয় দেখছে ভারত তা আট বছর আগের কেদারনাথের স্মৃতিকেই উসকে দিয়েছে। মনে করা হয়েছিল সময় যত এগোবে নদীর বেগ কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে রোববার রাতে ফের বেড়েছে নদীর পানির স্তর। এখন পর্যন্ত ১৫০ জন শ্রমিক নিখোঁজ। এর মধ্যে ১৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং একটি মূল সেতু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিখোঁজদের মধ্যে প্রকল্পের শ্রমিকদের মধ্যে ৩০ জন কর্মী এবং দু’জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
ইতিমধ্যেই হরিদ্বার হৃষিকেশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গঙ্গার তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। উত্তর প্রদেশেও জারি হয়েছে সেই সতর্কতা। তবে কি পশ্চিমবঙ্গেও এর আঁচ এসে পড়বে? প্রমাদ গুণতে শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত বলেছেন, ঋষিগঙ্গার পাঁচ কিলোমিটার নিচে তপোবন এলাকায় নির্মাণাধীন একটি এনটিপিসি প্রকল্পে ধ্বংসাবশেষের অবরুদ্ধ টানেলটিতে ৩৫ জন লোক আটকা পড়েছিল। সূত্র জানায়, আইটিবিপি ও সেনাবাহিনীর একটি যৌথ দল সুড়ঙ্গটিতে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আইটিবিপি কর্মীরা তপোভানের কাছে আরেকটি সুড়ঙ্গ থেকে ১২ জন শ্রমিককে উদ্ধার করেছে।
জোশীমঠের এই ‘হিমবাহ ধস’ ঠিক কী কারণে তা এখনো জানা যায়নি। বিজ্ঞানীরাও এখনো নিশ্চিত নয় যে এই বন্যা হিমবাহ ধস না তুষারধসের কারণে। দ্বিতীয় কারণটিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে ভূ-বিজ্ঞানীরা। উত্তরপ্রদেশেও জারি রয়েছে সতর্কতা। জানান হয়েছে, “গঙ্গার তীরবর্তী জেলাগুলি নজরে রয়েছে। প্রয়োজনে গঙ্গার তীরে বসবাসকারীদের উদ্ধার করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হতে পারে। উত্তরপ্রদেশের ত্রাণ কমিশনার অফিস থেকে দুর্যোগ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গঙ্গা পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো উচ্চ সতর্কতা রয়েছে। পানির স্তর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে সবসময়।”
সূত্র : জি নিউজ ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস