করোনা এবং চীনা চিকিৎসকের মৃত্যু
করোনা এবং চীনা চিকিৎসকের মৃত্যু - ছবি : সংগৃহীত
এক বছর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি করোনা-আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ বছর বয়সি চীনা চিকিৎসক লি ওয়েন লিয়াংয়ের। মৃত্যুর আগে গোটা বিশ্ব জুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল লি-র বার্তা। তিনিই প্রথম চীনে করোনা-সংক্রমণের খবর দিয়েছিলেন। বদলে ‘গুজব’ ছড়ানোর অপরাধে চীনা সরকারের হাতে তাকে তিরস্কৃত হতে হয়েছিল। মৃত্যুর পরে তাকেই ‘চীনের হিরো’ বলে স্বীকৃতি দেয় দেশবাসী। ইন্টারনেটে ভেসে
যায় শোকবার্তায়।
উহানের একটি হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন লি। বাড়তে থাকা রোগীর ভিড়, তাদের চিকিৎসা করতে-করতেই অতিমারি সম্পর্কে সচেতন করতে শুরু করেন লি। তার মৃত্যুর বহু দিন পরে চীনা সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ঝং ন্যানশান-ও একটি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন, লি ‘চীনের হিরো’। কিন্তু সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিং যখন করোনা-যুদ্ধে ‘দেশনায়কদের’ সম্মান জানান, লি-র নাম উল্লেখও করেননি।
চীন এখন অনেকটাই পুরনো ছন্দে ফিরেছে। সাধারণ মানুষ কিন্তু এখনো লি-কে ভুলে যাননি। উহানের এক দোকান মালিক, ২৪ বছর বয়সী লি প্যান বলেন, ‘‘উনিই প্রথম আমাদের ভাইরাসের খবর দিয়েছিলেন। উনি জানতেন এ খবর প্রকাশ্যে আনলে কী পরিণতি হতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অকুতোভয় হয়ে সত্যিটা জানিয়েছিলেন সকলকে।’’ পেশায় ডিজাইনার জি পেনঘুই বলেন, ‘‘লি-র সতর্কবার্তা শুনে মাস্ক মজুত করতে থাকি। তখনও সরকার থেকে কিছু ঘোষণা করা হয়নি।’’ জি জানান, দেশবাসী লি-কে শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রেখেছে। সরকারের উচিত আনুষ্ঠানিক ভাবে তাকে সম্মান জানানো।
করোনাভাইরাসের উৎসের সন্ধানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তদন্তকারী দল এখন উহানে। শহরের বিতর্কিত মাংসের বাজার, গবেষণাগার, সবই খতিয়ে দেখছে তারা। চীনের দাবি, এ দেশে ভাইরাসটি প্রথম চিহ্নিত হলেও চীন করোনার উৎস নয়। আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলোর দাবি, উহানের গবেষণাগার থেকেই ভাইরাস ছড়িয়েছে। ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব জুড়ে যে রাজনীতিই চলুক না-কেন, চীনের বাসিন্দাদের দাবি, তাদের দেশের ‘হিরো’ লি ওয়েনলিয়াং।
দেশজ প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘সিনোভ্যাক বায়োটেক’ রোববার জানিয়েছে, সাধারণ মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ছাড়পত্র পেয়ে গেছে তারা। এই নিয়ে দ্বিতীয় প্রতিষেধ সরকারি অনুমতি পেল চীনে। ডিসেম্বরে প্রথম ছাড়পত্র পায় সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা সিনোফার্ম-এর টিকা। চীনের প্রতিষেধক নিয়ে সরব হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তারা দাবি জানিয়েছে, ভ্যাকসিন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ্যে আনতে হবে চীনকে। ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডের লেয়েন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘কী প্রতিষেধক ওরা প্রয়োগ করছে, কেউ জানে না। এর থেকেই ভবিষ্যতে বিপজ্জনক নতুন স্ট্রেন তৈরি হতে পারে।’’ সিনোভ্যাকের টিকা প্রয়োগে অনুমতি দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, চিলি, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, উরুগুয়ে, লাওস। এ নিয়ে আরো চিন্তায় ইউরোপ।
করোনা সংক্রমণে এখন সব চেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ইউরোপ ও আমেরিকা। ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরেও প্রবীণদের অনেকের মৃত্যু হয়েছে। স্পেন তাই শুক্রবার জানিয়েছে, ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে কাউকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হবে না।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা