মাল্টায় লাভ বেশি!

অন্য এক দিগন্ত | Feb 07, 2021 07:32 am
মাল্টা

মাল্টা - ছবি : সংগৃহীত

 

ধান ও আমের আবাদ বাদ দিয়ে নওগাঁর পোরশা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লোকসানের আশঙ্কায় অনেকেই মাল্টা চাষে প্রথমে পা বাড়াতে না চাইলেও পাঁচ বছরের ব্যবধানে উপজেলায় এখন মাল্টার ২০০টি বাগান গড়ে উঠেছে। বাগানমালিকের সংখ্যা প্রায় ১৫০।

প্রথমে শুরুটা করেন একজন বাগানমালিক। তিনি সাহস দেখালেও চাষ করেন সামান্য জমিতে। কয়েক বছর পর দেখা গেল তার বাগানের মাল্টার ফলন ও দাম দুটোই ভালো। এবার তার দেখাদেখি এগিয়ে এলেন অন্য চাষিরাও।

পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মাটির গুণাগুন মাল্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় আকারে বড় ও সুমিষ্ট হওয়ায় এ এলাকার মাল্টা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে আমের পর নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সম্ভাবনার দিকে নজর রেখে মাল্টা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে আধুনিক কলাকৌশলসহ নানাভাবে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে পোরশা উপজেলায় ১০২ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। উপজেলার নিতপুর, ঘাটনগর, সরাইগাছী, তেতুলিয়া, বড়গ্রাম, তিলনা, গাঙ্গুরিয়া এলাকায় মাল্টা বাগানের সংখ্যা বেশি। বর্তমানে ১৫০ জন বাগানমালিকের ২০০টির বেশি মাল্টা বাগান রয়েছে।

সম্প্রতি উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাগানে সারি সারি মাল্টা গাছ। ছোট ছোট গাছে ঝুলছে থোকা থোকা মাল্টা। একেকটি গাছে ১৫০-২০০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত মাল্টা ধরে আছে। বাগানের প্রায় সব গাছের মাল্টাই পরিপক্ক হয়ে গেছে। গাঢ় সবুজ রঙের মাল্টাগুলোর কোনো কোনোটিতে হলুদাভ ভাব এসেছে।

বাগানটির মালিক ওবায়দুল্লাহ শাহ জানান, ২০১৬ সালে উপজেলায় তিনিই প্রথম মাল্টা চাষ শুরু করেন। মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখালে পোরশা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস থেকে তাকে বারি মাল্টা-১ জাতের ৬০টি মাল্টা গাছের চারা দিয়ে সেগুলো জমিতে লাগানোর প্রস্তাব দেন। ওই চারা ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আনা একই জাতের আরও দেড় হাজার মাল্টা গাছের চারা লাগিয়ে উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামে নিজের ৭ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন মাল্টার বাগান। এক বছরের মাথায় তার গাছগুলোতে ১০-১২টি করে ফল ধরে। পরের বছর গাছগুলোতে আরও ফল ধরে। এ বছর একটি গাছ থেকেই দেড় থেকে দুই মণ মাল্টা সংগ্রহ হবে বলে আশা করছেন ওবায়দুল্লাহ শাহ। চলতি বছর আরও ছয় বিঘা জমিতে নতুন করে মাল্টা বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি।

ওবায়দুল্লাহ শাহ বলেন, আমার এক ভাগনে প্রথমে আমাকে মাল্টার বাগান গড়ে তোলার পরামর্শ দেয়। তার পরামর্শ অনুযায়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করি। কর্মকর্তারা আমাকে বারি মাল্টা-১ জাতের মাল্টার চাষের পরামর্শ দেন। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মাল্টার বাগান পরিদর্শন করি এবং ওই সব বাগানমালিকের সাথে কথা বলে মাল্টা চাষের কলাকৌশল সম্পর্ক জ্ঞান নিয়ে আসি।

‘২০১৬ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে ৭ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান গড়ে তুলি। গাছ লাগানোর এক বছরের মাথায় গাছগুলোতে ১০-১২টি করে ফল আসে। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ওই বছরের মাল্টা পরিপক্ক হওয়ার আগেই ফেলে দেই। ২০১৮ সাল থেকে বাগানের মাল্টা বিক্রি শুরু করি। ওই বছর আড়াই লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করি। গত বছর মাল্টা বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ টাকার,’ বলেন তিনি।

ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘মাল্টা বাগান করার পরিকল্পনার কথা জানালে প্রথমে এলাকার অনেকেই আমাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছেন। আমার আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের অনেক মানুষই তখন বলেছিলেন, এই এলাকার মাটি মাল্টা চাষের উপযোগী নয়। এখানে মাল্টা গাছ হবে না। গাছ হলেও এখানকার মাল্টা সুমিষ্ট হবে না। তারপরেও আমি মাল্টা চাষের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলিনি। সাহস করে বাগান করেছি এবং তাদের সব কথা মিথ্যা প্রমাণ করেছি। যারা তখন আমাকে নিরুৎসাহিত করেছিল এখন তারাই মাল্টা চাষের জন্য আমার কাছে পরামর্শ চাইতে আসে।’

উপজেলার বড়গ্রাম এলাকার মাল্টা চাষি আব্দুস সবুর শাহ্ বলেন, ধান ও আমের তুলনায় মাল্টা চাষ অনেক বেশি লাভের। যে ফসল আবাদ করে বেশি লাভ হবে, সবাই সেটাই আবাদ করার চেষ্টা করে। এক বিঘা জমিতে ধান আবাদ করে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আসে। আম বাগান করলে বড় জোর ৪০ হাজার টাকা আসতে পারে। সেখানে এক বিঘা জমির মাল্টা বাগান থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অনেকেই ধান ও আম চাষ বাদ দিয়ে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন।

ওবায়দুল্লাহ শাহের মাল্টা চাষ দেখে উৎসাহিত হয়ে ২০১৮ সালে সারাইগাছী গ্রামের ফরিদুল ইসলাম ২৬ বিঘা জমিতে ধান আবাদ ছেড়ে দিয়ে মাল্টা বাগান গড়ে তোলেন। এ বছরই প্রথম তিনি বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা বিক্রি শুরু করেছেন।

ফরিদুল বলেন, ‘ওবায়দুল্লাহ শাহের বাগান দেখে উৎসাহিত হয়ে বাগান গড়ে তুলি। ২৬ বিঘা জমিতে ৭ হাজার মাল্টা গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ১৫ থেকে ২০ কেজি করে মাল্টা ধরেছে। পাইকারি ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় মণ হিসাবে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি, প্রথম বছরই ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হবে। মাল্টা বাগানে এ পর্যন্ত শ্রমিক ও পরিচর্যা বাবদ প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’

মাল্টা চাষকে জনপ্রিয় করা গেলে একদিকে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন, অন্যদিকে পুষ্টিকর এ ফল আমদানি নির্ভরতা কমবে বলে মনে করেন পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম।।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে এই এলাকার মাটির গুণাগুন মাল্টা চাষের উপযোগী। দাম ও ফলন দুটোই ভালো হওয়ায় অধিক লাভের আশায় ধান ও আম চাষ বাদ দিয়ে অনেক কৃষক মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। পাঁচ বছর আগেও মাত্র একটি বাগান ছিল। এখন উপজেলায় প্রায় ২০০টি মাল্টা বাগান। এখানকার উৎপাদিত মাল্টা বেশ সুমিষ্ট হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি পোরশার মাল্টা ঢাকাসহ দেশের বড় বড় বাজারে যাচ্ছে।’

সূত্র : ইউএনবি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us