বিপ্লব আনবে জিন আলু!

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Feb 06, 2021 12:56 pm
জিন আলু

জিন আলু - ছবি সংগৃহীত

 

ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে প্রতি শুক্র ও শনিবার যে কৃষকের বাজার বসে সেখানেই একজন কৃষক বিক্রি করেন কালো রংয়ের আলু।

বিক্রেতার দাবি এটি 'জিন আলু', যদিও এ নামে কোনো আলু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট বা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তালিকায় নেই।

পাবনার ঈশ্বরদীর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ কামাল উদ্দিন আহাম্মেদ বলছেন, বাজারে এটি দেখা গেলেও সরকারিভাবে বা কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে এটি করা হয়নি।

"আলুর জাত আনার ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদনের বিষয়টি শিথিল করা হয়েছে তিন বছরের জন্য। এ সুযোগে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানা জাতের আলু আনছে ও চাষ করছে। কালো রংয়ের আলু তেমনি একটি উদ্যোগ হতে পারে"।

তবে ক্রেতাদের একজন শাহানা হুদা গত মাসেই কৃষকের বাজারে গিয়েছিলেন এবং ব্যতিক্রমী ধরণের আলুটি দেখে নিজে কিনেছেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "আলুর ওপরেও যেমন কালো রংয়ের তেমনি ভেতরেও কালো রংয়ের। বিক্রেতা বলেছেন এটির নাম জিন আলু"।

কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিমল চন্দ্র কুণ্ডুর নেতৃত্বাধীন একটি দল নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ করেন।

কুণ্ডু বলছেন, 'জিন আলু বলে কোনো আলু নেই এবং কালো আলু বলা হলেও এর ভেতর ও বাইরের প্রকৃত রং আসলে গাঢ় খয়েরি।

"আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে এনে বাংলাদেশে এখন এ ধরণের আলুর ট্রায়াল করছি। কয়েকমাসের মধ্যে এ ট্রায়াল শেষ হলে বোঝা যাবে এখানে ফলন কেমন হয় বা সম্ভাবনা কেমন," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, আলুটিতে অ্যান্থসায়ানিনের পরিমাণ বেশি থাকায় এর রং খয়েরি বা কালচে দেখায়।

"তবে এ উপাদান বেশি থাকায় আলুটিতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি যা শরীরকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে। সাধারণত হালকা সিদ্ধ করে এ আলু সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়"।

ডঃ কুণ্ডু বলছেন একই ধরণের মিষ্টি আলুরও একটি জাতের ট্রায়াল চলছে এখন কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে।

কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের একজন ড. মোঃ জুলফিকার হায়দার বলছেন, সরকার বিদেশি জাতের আলু এনে নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে তিন বছরের একটি সুযোগ দিয়েছে এবং এজন্য তাদের অনুমোদনের দরকার হয় না।

আর এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে কাজ করছে যা কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের আওতায় নেই ফলে এখন কারা কালো আলুর চাষ করছেন সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়না বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন বাংলাদেশে খাওয়ার জন্য বারি আলু ২৫ (এসটেরিক্স) জাতটি সবচেয়ে বেশি সমাদৃত আর দেশে ব্যাপকভাবে প্রচলিত প্যাকেটজাত খাবার চিপস তৈরিতে ব্যবহার হয় কারেজ (বারি আলু ২৯) ব্যবহার করে কোম্পানিগুলো।

বাংলাদেশে আলু উৎপাদন
বাংলাদেশে উন্নত জাতের আলু চাষাবাদ শুরু হয় ষাটের দশকে। মূলত অর্থকরী ফসলের মধ্যে ধান ও গমের পরেই আলুর অবস্থান। এখন দেশে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৯৫ লাখ টন, যদিও দেশে আলুর চাহিদা এর অর্ধেক।

তবে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশে আলু রফতানি করা হয়।

যদিও কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে বাংলাদেশে উৎপাদিত সব ধরণের আলু রপ্তানি করা যায় না।

সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় গ্রানুলা জাতের আলুর চাহিদা বেশি আবার মালয়েশিয়ায় ডায়মন্ট ও কার্ডিনাল জাতের আলু রপ্তানি হচ্ছে।

কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বিদেশী আলু জাত আছে প্রায় ৮০টি।

তবে বাংলাদেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে আলু চাষের প্রবণতা কম বলে এখানে হেক্টর প্রতি উৎপাদন ১১ টনের মতো, যা অনায়াসেই ২০-২৫ টনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন কৃষিবিদরা।

ড. বিমল কুমার কুণ্ডু বলছেন এ কারণে উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনে তারা কাজ করে যাচ্ছেন যার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us