ধর্মান্তরিত মুসলিম সনি যা করেছেন জন্মগত অনেক মুসলিমও তা পারেনি
সনি বিল উইলিয়ামস - ছবি : সংগৃহীত
সকাল ভোর ৬টা। লন্ডনের একটি হোটেলে বসে আছেন সনি বিল উইলিয়ামস। ফজরের নামাজের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বললেন, “আমি যখন নামাজের জন্য হাত তুলি, তখন আমি বলি- আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দান করুন, আমাকে রিজিক দান করুন, আমাকে আরো উত্তম ব্যক্তি হিসাবে গড়ে তুলুন!”
“আমি আমার দুর্বলতা জানি, আমাকে সাহস দিন। আমার পাপ ক্ষমা করুন! আয় আল্লাহ! আমার প্রিয়জন এবং আমার কাছের মানুষদের মঙ্গল করুন। তাদের সুরক্ষিত রাখুন, বিশেষত আমার বাচ্চাদের। আমরা আপনারই ইবাদত করি, আপনারই প্রশংসা করি।”
উইলিয়ামসের ইসলাম গ্রহণের ১২ বছর হয়ে গেছে। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় সিডনির এক মসজিদে গিয়ে তিনি প্রভাবিত হন এবং এরপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তাকে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুসলিম মুখ বলা হয়। দেশটির ক্রীড়াজগতে তার বেশ প্রভাব রয়েছে।
৩৩ বছর বয়সী সনি বিল উইলিয়ামস হলেন নিউজিল্যান্ডের প্রখ্যাত রাগবি খেলোয়াড় ও পেশাদার হেভিওয়েট মুষ্টিযোদ্ধা। তিনি দুবার রাগবি বিশ্বকাপও জেতেন। ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই মুসলমানদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।তার প্রচেষ্টায় উইলিয়ামসের মা ‘লি উইলিয়ামস’ ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন ,১০ বছর আগে আমার জীবনে খ্যাতি ছিল, চাকচিক্য ছিল কিন্তু আমার অন্তরে ছিল হাহাকার। ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে আমি আমার জীবনের পূর্ণতা অনুভব করেছি। কিছু মানুষ মনে করে ইসলাম গ্রহণ করা লজ্জার বিষয় কিন্তু আমি গর্বিত, কারণ আমি আল্লাহকে পেয়েছি।
বিল উইলিয়ামস আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করার প্রতি গুরুত্বরোপ করে বলেন, এক গ্লাস পানি পান করলেও আল্লাহর প্রশংসা আদায় করতে হবে।বউ-বাচ্চাদের সাথে দেখা করেও আলহামদুল্লিাহ বলতে হবে। আমার প্রভু সবসময় আমার অন্তরে থাকবে।
কয়েক বছর আগে বিখ্যাত এ রাগবি খেলোয়াড় ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব সফর করেছেন। পরে মদিনায় অবস্থিত ঐতিহাসিক মসজিদে নববী পরিদর্শন করেছেন। পরে উমরাহ পালনের জন্য তিনি পবিত্র মক্কা নগরীতে যান।
পরে তিনি তার ইন্সটাগ্রামের পেজে লিখেন, ‘মদিনাতে নবীজীর পবিত্র মসজিদ পরিদর্শন সত্যিকার অর্থেই আশ্চর্য এক অনুভূতি।’
ওমরাহ পালন নিয়ে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন,যখন আপনি ইহরাম পরিধান করছেন,“তখন কোনও অর্থনৈতিক পার্থক্য নেই, প্রতিটি ব্যক্তি সমান, যা সম্ভবত মানবতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
নিজে প্রথম মুসলিম হলেন! তারপর তার স্ত্রীকে মুসলিম বানালেন! ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার বীভৎসতা দেখে তার হাত ধরে তার মা ‘লি উইলিয়ামস’ এবং তার প্রিয় বন্ধু ওফা তুঙ্গাফাসি মুসলিম হয়ে গেলেন!
তিনি এমন একজন মুসলিমে পরিণত হলেন যে তার একমাত্র ছেলের জন্মদিনে ঘর সাজালেন দুই বছরের ছেলেকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য কিন্তু কেক কাটলেন না ইসলাম ধর্মে নেই বলে! ছেলের জন্য দোয়া করলেন যেন আগামী বছর সাথে বাকি জীবনটা সুন্দর ভাবে যায়। নিজের প্রিয়তমা স্ত্রী বিয়ের আগে ছিলেন ব্রাজিলিয়ান নাইট ক্লাবের ডান্সার তিনি নাচতে ভালোবাসতেন। উইলিয়ামের সাথে মাত্র ছয় মাসের সম্পর্ক ছিল তার। তারপর বিয়ে করেন অথচ কোনো মিডিয়া জানলো না শুধুমাত্র তার পরিবারের লোকজন ছাড়া কেউ জানতে পারলেন না! সেই স্ত্রী তারপর হালাল পেশায় নামলেন বাচ্চাদের পোষাকের শপ দিলেন।
সুদ ইসলামে হারাম হওয়ায়,তিনি তার জার্সিতে ব্যাংক লোগো ব্যবহার করতে রাজি হননি!
নিজে ইসলাম গ্রহণ করেই দায়িত্ব শেষ করেননি উইলিয়াম। ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন তিনি।
উইলিয়ামসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুসলিম হয়েছেন হয়তো আরো অনেকেই সেই পথে হাঁটছেন।