টেন্ডুলকারের পর সঙ্গীত সম্রাজ্ঞীর মুকুটও খসে পড়ল
লতা মঙ্গেশকর - ছবি : সংগৃহীত
‘ঐক্যবদ্ধ ভারত’ লিখে টুইট করে নেটাগরিকদের তোপের মুখে এ বার ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকর! কেউ যুক্তি দিয়ে সাজিয়েছেন সমালোচনা, কেউ বা করেছেন রঙ্গরসিকতা। লতা মঙ্গেশকরের টুইটের নিচে এমনই নানা মন্তব্যের বন্যা! ঠিক যেমনটা গত কয়েক দিন ধরে দেখা গেছে শচিন টেন্ডুলকারের ক্ষেত্রে।
আমেরিকার পপ তারকা রিহানা, পরিবেশ কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ কিংবা সাবেক পর্ন তারকা রিহানা কৃষক আন্দোলনের পক্ষে মন্তব্যের পরে ভারতজুড়ে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব থেকে খেলোয়াড়রা টুইটরে প্রতিবাদ করেন। ‘ঐক্যবদ্ধ ভারত’-এর হয়ে একের পর এক নামজাদা মানুষ নেটমাধ্যমে বক্তব্য জানাতে থাকেন। এই তালিকায় অক্ষয় কুমার, শচিন টেন্ডুলকার থেকে সাইনা নেহওয়াল— অনেকেই ছিলেন। ছিলেন লতা মঙ্গেশকারও। নিজের বক্তব্য একটি ছবি আকারে নেটমাধ্যমে প্রকাশ করেন তিনি।
‘ঐক্যবদ্ধ ভারত’-এর সেই টুইট করে এর আগেই একপ্রস্থ সমালোচনার মুখে পড়েছেন শচিন টেন্ডুলকার। তাকে লক্ষ্য করে একের পর এক আক্রমণ ধেয়ে এসেছে নেটমাধ্যমে। সেই আক্রমণ থেকে এ বার রেহাই পেলেন না নবতিপর সঙ্গীত সম্রাজ্ঞীও। অনেকের মতে, রিহানা গায়িকা বলেই, লতাকে দিয়ে এমন বক্তব্য টুইট করানো হয়েছে।
তার টুইটের তলায় এসে কেউ কটূক্তি করেছেন, ‘লতা দিদি তো লেখারও চেষ্টা করেননি। যেমন মোটা ভাই তাকে পাঠিয়েছেন, তেমনই সেঁটে দিয়েছেন’। কেউ আবার লিখেছেন, ‘কিশোর কুমার বা মোহাম্মদ রফি ভারতরত্ন না পেয়ে, আপনি কী করে পেয়ে গেলেন, এত দিন বুঝলাম।’ আর এক জনের মন্তব্য, ‘ভারত একটি মহান দেশ। যেখানে তারকাদের ভগবান বলে মানা হয়। যখন ১৭৫ জন কৃষক ঠান্ডায় বসে প্রতিবাদ করার সময়ে প্রাণ হারান, সেই তারকাদের এক জনও একটি কথা বলেন না’। কেউ কেউ এমনও বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই তারা লতা মঙ্গেশকারকে নিজেদের আদর্শ বলে ভাবতেন। কিন্তু এখন আর ভাবতে পারছেন না। কারণ তিনি সরকারের হয়ে কথা বলছেন, দেশের হয়ে নয়’। এমনও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ, যে মানুষটি ‘অ্যায় মেরে বতন কে লোগো’র মতো গান গাইতে পারেন, তিনি কী করে আরএসএস এবং মোদির সমর্থক হতে পারেন’?
সব মিলিয়ে ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’ যে ভাবে ‘ঐক্যবদ্ধ ভারত’-এর ভূমিকম্পের শিকার হয়ে ভূমিশয্যা নিয়েছিলেন, ঠিক সে ভাবেই তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সঙ্গীত সম্রাজ্ঞীরও মুকুট যেন খুলে পড়ল নেটমাধ্যমে।
রিহানাকে সমর্থন টুইটার কর্তার
রিহানার প্রশংসা করে একটি টুইট পছন্দ করলেন টুইটার কর্তা জ্যাক ডরসি। কৃষক আন্দোলন নিয়ে টুইটার-ভারত দ্বন্দ্বের মধ্যে এই ‘পছন্দ’ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন নেট মাধ্যমের পর্যবেক্ষকরা।
রিহানাকে আক্রমণ করায় বৃহস্পতিবারই কঙ্গনা রানাউতের টুইট মুছে দিয়েছিল টুইটার। এবার জ্যাকের ‘পছন্দ’-এ স্পষ্ট ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে সরব আন্তর্জাতিক তারকা রিহানার সমর্থক স্বয়ং টুইটারের কর্তাই।
শুধু তা-ই নয়, প্রচ্ছন্নভাবে তিনি যে ভারতের কৃষক আন্দোলনেরও সমর্থক তা-ও কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে শুক্রবার। বৃহস্পতিবার রাত্রে বেশ কয়েকটি টুইট ‘লাইক’ করেছেন জ্যাক। তারমধ্যে যেমন রিহানার প্রশংসা করে এক সাংবাদিকের টুইট রয়েছে, তেমনই রয়েছে কৃষক আন্দোলনের জন্য টুইটারের বিশেষ ইমোজির দাবিও। জ্যাকের এই ‘পছন্দ’ নিয়েই তৈরি হয়েছে জল্পনা।
রিহানাদের বিরুদ্ধে টুইট-প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ ‘ঐক্যবদ্ধ ভারত’
কৃষক আন্দোলন নিয়ে টুইটারের সঙ্গে ভারত সরকারের নরমে গরমে দ্বন্দ্ব চলছে সেই সোমবার থেকেই। কৃষক আন্দোলনের পক্ষে সরব আড়াইশোর বেশি টুইটার অ্যাকাউন্ট ও একটি হ্যাশট্যাগ সরিয়ে নেওয়ার জন্য টুইটার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিল ভারত সরকার। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সেই নির্দেশ মেনে প্রথমে অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ করলেও পরে তা আবার চালু করে দেয় টুইটার। কারণ হিসাবে টুইটার জানিয়ে দেয়, তাদের বিবেচনায় এমনটা করলে বাক্ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হবে। এরপরই টুইটারের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের বার্তা দেয় কেন্দ্র। এরই মধ্যে কৃষক আন্দোলন নিয়ে রিহানার প্রশংসামূলক টুইট লাইক করে কি টুইটারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন ডরসি?
সম্প্রতিই আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে টুইটার একটি ইমোজি প্রকাশ করেছিল। ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে আন্তর্জাতিক তারকা রিহানা, পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ-সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের সমর্থন পাওয়ার পর কৃষক আন্দোলন নিয়ে ইমোজি প্রকাশের দাবিও ওঠে। বৃহস্পতিবার সেই ইমোজির দাবি নিয়ে করা টুইটও ‘পছন্দ’ করেছেন টুইটার প্রধান।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা