বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে করোনার ৪,০০০ রূপ
বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে করোনার ৪,০০০ রূপ - ছবি : সংগৃহীত
দু’-চারটি নয়। এমনকি, দু’ শ'-চার শ'ও নয়। বিশ্বজুড়ে এখন নভেল করোনাভাইরাসের অন্তত চার হাজার রূপ ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের। পরিস্থিতির মোকাবিলায় এ বার উন্নততর করোনা টিকা প্রস্তুত করতে সক্রিয় হলো ব্রিটেন।
বৃহস্পতিবার ওই দেশের করোনা টিকাকরণ বিষয়ক মন্ত্রী নাদিম জাহাউ জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের বিভিন্ন রূপগুলোর মোকাবিলার আরো কার্যকরী ও সুসংহত টিকা তৈরির জন্য ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকার মত টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে যৌথ গবেষণার পথে হাঁটা হবে। তবে উন্নততর করোনা টিকা তৈরির কথা বললেও নাদিমের মন্তব্য, ‘‘তার মানে এমনটা নয় যে, বর্তমান টিকাগুলো সব ধরনের কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারবে না।’’
ব্রিটেনের করোনা টিকাকরণ বিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, বার বার পরিব্যক্তির মাধ্যমে হাজার চারেক রূপ সৃষ্টি হলেও তার মধ্যে অধিকাংশকে নিয়েই দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের জিনোম সিকোয়েন্সিং শিল্প (জিনের ক্রমবিন্যাস বদলের সাহায্যে চিকিৎসার পদ্ধতি) বিশ্বের বৃহত্তম। প্রায় ৫০ শতাংশ জিনোম সিকোয়েন্সিং শিল্পই ব্রিটেনের। আমরা করোনাভাইরাসের সমস্ত রূপগুলো বিশ্লেষণের কাজ চালাচ্ছি, যাতে যেকোনো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে প্রতিষেধক তৈরি করা যায়।’’
২০১৯-এর ডিসেম্বর প্রথম চীনের উহানে নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। তার কয়েক মাস পরে ভাইরাসটির মিউটেশন (পরিবর্তন) নজরে এসেছিল বিজ্ঞানীদের। বর্তমানে ভাইরাসটির প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের চারটি ‘অতি সংক্রামক রূপ’ ঘিরে বিশ্ব জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। লন্ডন, মানাউস (ব্রাজিল), জাপান এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় যাদের উৎপত্তি। এদের মধ্যে ব্রিটেনে পাওয়া করোনাভাইরাসের নয়া প্রজাতি (যেটিকে ভিইউআই-২০২০১২/০১ অথবা বি.১.১.৭ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে) সবচেয়ে বেশি সংক্রামক। মানাউস (পি-১ নামে পরিচিত) এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রজাতির ক্ষেত্রে সংক্রমণের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা বেশি বলে আমেরিকাবাসী ভারতীয় চিকিৎসক তথা পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের দাবি।
ভুল ডোজ
করোনা বিনাশ করতে বাজারে যেসব ভ্যাকসিন আত্মপ্রকাশ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ( OxfordAstraZeneca) ভ্যাকসিন। এবার কোভিশিল্ডের ট্রায়াল নিয়েই গুরুতর অভিযোগ উঠল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে। কোভিশিল্ডের ট্রায়ালে অংশ নেয়া দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবককে টিকার ভুল ডোজ দেয়া হয়েছে, এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগই এবার সামনে এলো। যদিও ভুল ডোজ দেয়ার কথা স্বীকারও করেনি ওই সংস্থা।
বিভিন্ন ডোজে ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে তা শেখানোর জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি প্রেজেন্টেশন দেয়া হয় বলে গত ৮ জুন একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে ট্রায়ালের চিফ ইনভেস্টিগেটর তথা অক্সফোর্ডের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু জে পোলার্ডের স্বাক্ষরও রয়েছে।
জানা গেছে, ট্রায়ালে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের অর্ধেক ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। অক্সফোর্ডের গবেষকদের ভুলেই এই কাণ্ড। কিন্তু, পোলার্ডের চিঠিতে সেকথা স্বীকার করা হয়নি। ট্রায়ালে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কথাও বলা হয়নি।
এই প্রসঙ্গে অক্সফোর্ডের মুখপাত্র স্টিভ পিচার্ড জানান, অর্ধেক ডোজের গ্রুপ অপরিকল্পিত ছিল। কিন্তু, ডোজের পরিমাপে যে ত্রুটি ছিল তা আমরা জানতে পেরেছিলাম। ডোজ দেওয়ার আগে ও সংশোধন করার সময় নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। যদিও এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি অক্সফোর্ডের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু জে পোলার্ড। এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চায়নি অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষও।
উল্লেখ্য, প্রথম থেকেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল আন্তর্জাতিক মহলে। ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতে এই প্রতিষধক প্রয়োগ করা হচ্ছে। ব্রিটেনই প্রথম দেশ, যারা এই টিকা অনুমোদন করে।
সূত্র : এই সময় ও আনন্দবাজার পত্রিকা