করোনার দায় : তীব্র সমালোচনা থুনবার্গের
থুনবার্গ - ছবি সংগৃহীত
পাবনায় বহুল প্রচলিত প্রবাদ— ‘গ্যাদার কাছে বুড়াবুড়ি কচি শিশু’। গ্যাদা মানে শিশু। কথাটা মনে পড়ল পরিবেশবাদী গ্রেটা থুনবার্গের নানাবিধ প্রশ্ন শুনে। প্রশ্ন করছেন সাংবাদিক, মন্ত্রী, রাজনীতিকদের। প্রশ্নের উত্তর এবং যুক্তি, সবটাই গ্রহণীয় নয়, গ্রেটা সরাসরি জানাচ্ছেন যুক্তির বিশ্লেষণে। করোনা মহামারীর মূলেও বৈশ্বিক আবহাওয়া সম্পর্কিত, কেন এবং কী কারণে, তার কথায় ‘বিষাক্ত ও দূষিত হাওয়ায় এ রোগের বিস্তার দেশ থেকে দেশান্তরে, যেমন সূর্যালোক কোনো দেশে সীমাবদ্ধ থাকে না। করোনা মহামারী নিয়ে যে রাজনীতি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, মূলে করোনা হাওয়া। পরবর্তিত আবহাওয়া।
বার্লিনের ডাকসাইটে দৈনিক ‘ড্যের টাগেস্পিগেল’ আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সেমিনারের প্রথম সন্ধ্যায় গ্রেটা থুনবার্গ অংশগ্রহণ করেননি। বক্তা ছিলেন না। অনুষ্ঠান বার্লিনের আরবিবি (রেডিও বার্লিন–ব্যান্ডেনবুর্গ) স্টুডিওর ছাদে। মোটা ত্রিপলে ঘেরা। উপরটাও ঢাকা। শীতে যেমন ঘর গরম, এখানেও হিটারে ২৫ ডিগ্রি উষ্ণতা। সেমিনারে যোগ দিয়েছেন রাজনৈতিক দল এসপিডি–র জার্মান অর্থমন্ত্রী ওলাফ সোলৎস। তিনি এসপিডি–র পক্ষ থেকে এ বছর সেপ্টেম্বরে চ্যান্সেলর নির্বাচনে প্রার্থী। অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী, সিডিউউ–র পেটার আলট্মায়ার, ফ্রান্সের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী ব্রুনো ল্য মারি, রাষ্ট্রপুঞ্জের ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক অনিতা ভাটিয়া, জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ‘ডি ৎসাইট’ সাপ্তাহিক পত্রিকার ব্যুরো প্রধান, গ্রিন পার্টি তথা সবুজ দলের আবহাওয়াবিদ, ইউরোপীয় কমিশনের আবহাওয়া দপ্তরের উপপ্রধান।
তিন দিনের সেমিনারের পরিচালক ড্যের স্পিগেল–এর প্রধান সম্পাদক আনা জাওয়ারব্রে। প্যানেলে আলোচ্য বিষয় করোনা মহামারী ও বিশ্ব আবহাওয়ার যোগসাজশ। করোনা ও ইউরোপ, কেন আবহাওয়ার পরিবর্তন? ইউরোপ এবং আমেরিকা আবহাওয়া পরিবর্তনে কতটা দায়ী। এশিয়ার কোন কোন দেশ এবং কেন? জো বাইডেন সরকার করোনা মোকাবিলায় অগ্রাধিকার দিলেও আবহাওয়ার দ্বিতীয় স্থান! কতটা সফল হবে, হতে পারে, ইত্যাদি বিষয়ে।
প্যানেলের মধ্যমনি গ্রেটা থুনবার্গ। আলোচনার শুরুতেই চাঁচাছোলা কথা— ‘‘করোনা সংক্রমণে চীন একা দায়ী নয়, বিশ্বের সব দেশই। বৈশ্বিক আবহাওয়া। দায়ভাগে ইউরোপ আমেরিকাও, চীন এবং ভারতও। জাতিসঙ্ঘের অনিতা ভাটিয়া, জাতিসঙ্ঘ কী করছে, সেই ব্যাখ্যায় খুব একটা এগোননি। গ্রেটার প্রশ্ন— ‘এখন খুব মাথা ঘামাচ্ছেন, ৫০ বছর আগে টের পাননি? আমেরিকার ধমকধামকে এত কেন লেজ গুটিয়ে ছিলেন? জো বাইডেন কি কিছু করতে পারবেন? অস্ত্র ব্যবসায়ীদের চোখ-রাঙানিতে কোন প্রেসিডেন্ট গদি সামলাননি? আবহাওয়ার কারবারিও আমেরিকার ব্যবসায়ী, বড় কর্পোরেট। অনিতা জানান, ‘আমরা জো বাইডেন সরকারকে চাপ দিচ্ছি। কী করণীয়।
ফরাসি মন্ত্রী বলেন, ‘প্যারিস (পরিবেশ) চুক্তি কার্যকর করার জন্য পৃথিবীর সব দেশেই জোর তৎপরতা চলছে। আমরাও বসে নেই।’ জার্মান দুই মন্ত্রীরও একই কথা। শুনে গ্রেটার ঠোঁটের ফাঁকে এক চিলতে হাসি। অতঃপর প্রশ্ন, অস্ত্র নির্মাণ কি বন্ধ করেছেন? ভারী শিল্প? ইউরোপের আকাশে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি বিমান চলাচল করে। করোনার কারণে যদিও এখন বন্ধ, কিন্তু বিমানে বাতাস দূষিত। বিমান বন্ধ করবেন কি? ব্যবসা পয়লা, এই কথা স্বীকার করে বলুন, অর্থ আগে। অর্থনীতি আগে। পরমাণু চুল্লির জ্বালানি বন্ধের কথা ভাবছেন, আইনও তৈরি করছেন জনগণের দাবিতে। কিন্তু নদী সাগরে জাহাজ চলাচলে কী পদক্ষেপ করেছেন?
পাহাড় পর্বত ধ্বংস, বন-বাদাড় উচ্ছেদ, খনিজ উত্তোলন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বড় বিল্ডিং তৈরি, লোহালক্কড়, ইট-পাথরের কংক্রিটের পৃথিবী এখন ভারে অসহনীয়। যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যাবে। তখন ব্যবসা, কারখানা, নির্মাণ শিল্প কোথায় যাবে? কোন চুলোয়?
আরো প্রশ্ন, আরো কথা। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না মন্ত্রী রাজনীতিকরা। কিছুটা আবোল তাবোল কথামালা, অতঃপর মুখ চাওয়াচাওয়ি। যুক্তি ও খুব একটা পোক্ত নয়। ‘গ্যাদার কাছে বুড়াবুড়ি কচি শিশু’। সেমিনার শেষে প্যানেলের একজন আলোচকের বাণী শুনলাম আলাপচারিতায় : ‘মেয়েটির বয়স অল্প, তাই কিছু বলিনি। তবে প্রকৃত প্রকৃত পরিবেশবাদী বিপ্লবী। অনেক প্রশ্নই ভাবনার'।
সূত্র : আজকাল