স্কোয়াশ চাষে ভাগ্য বদল!
স্কোয়াশ - ছবি সংগৃহীত
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কৃষি ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে ইতালিয়ান সবজি স্কোয়াশের চাষ।
এ উপজেলায় স্কোয়াশ চাষি প্রথম ব্যক্তি হলেন মাসুদ পারভেজ। তিনি রাজবাড়ী জেলার জনৈক কৃষকের স্কোয়াশ চাষের ভিডিও ইউটিউবে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বোয়ালমারী পৌরসভার রায়পুর গ্রামের আবুল বাশার মোল্যার বাড়ির সামনে সবজিটির চাষ শুরু করেন।
সবজি হিসেবে স্কোয়াশ একেবারেই নতুন হওয়ায় আগ্রহ নিয়ে এলাকার মানুষ ক্রয় করছেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে বাজারে উঠতে শুরু করেছে নতুন প্রজাতির অপরিচিত সুস্বাদু সবজি স্কোয়াশ।
উপজেলার একমাত্র কৃষক হিসেবে স্কোয়াশ চাষি মাসুদ পারভেজ চার একর জমি লিজ নিয়ে সবজিটি চাষ করে সাত লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন।
মাসুদ জানান, বীজ লাগানোর সাত দিনের মধ্যে চারা গজায়, এক মাসে ফুল হয়। আর দুই মাসে বিক্রির উপযোগী হয়।
তিনি বলেন, ‘নভেম্বরে ১৬ হাজার স্কোয়াশের বীজ বপন করেছিলাম, তা থেকে বাছাই করে ১০ হাজার গাছ রেখেছিলাম। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০টি স্কোয়াশ সংগ্রহ করছি।’
বীজ ক্রয়, বীজতলা তৈরি, পানি সেচ, সার ও কীটনাশক ক্রয়, পরিবহন ইত্যাদি খরচ বাবদ মাসুদের ব্যয় হয়েছে আট লাখ টাকা। প্রতিদিন দুজন শ্রমিক খেতের পরিচর্যা করেন। উৎপাদিত সব সবজি বিক্রি হলে প্রায় সাত লাখ টাকা লাভ হবে বলে তিনি জানান।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হযরত আলী জানান, স্কোয়াশের জীবনকাল ৭৫ থেকে ৮০ দিন। এটি মূলত শীতকালীন সবজি। বেলে-দোআঁশ মাটিতে বছরের নভেম্বরের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এর বীজ বপন করতে হয়। বপনের ৫০ দিন পর থেকে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি স্কোয়াশের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। সবুজ ও লম্বাকৃতির কিছু সাদা রঙয়ের প্রতিটি স্কোয়াশে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি, ই, কে-সহ কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন রয়েছে। লাউ ও মিষ্টি কদুর বিকল্প সুস্বাদু সবজি হিসেবে স্কোয়াশ রান্না করে খেতে হয়। এর পাতা ও কাণ্ড সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
তিনি বলেন, ‘বারি স্কোয়াশ-১ জাতটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক অবমুক্ত হয়েছে। স্কোয়াশ বীজ সরাসরি জমিতে রোপণ করা যায়। তবে ছোট আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে বা প্লাস্টিক ট্রেতে করে তা জমিতে রোপণ করলে ভালো হয়।’
জমির উর্বরতা ফেরাতে আবারও জৈব সারে ঝুঁকছেন চৌগাছার কৃষকরা
কৃষকের ফসল উৎপাদনে এক সময় জৈব সারই ছিল একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই স্থান দখলে নেয় রাসায়নিক সার। তাতে সাময়িক সুফল মিললেও মাটি ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে উৎপাদন ক্ষমতা। মাটির সেই হারানো উর্বর শক্তি ফিরিয়ে আনতে যশোরের চৌগাছার কৃষকরা আবারও জৈব সারে ঝুঁকছেন।
উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রতিটি এলাকা সব ধরনের ফসল উৎপাদনে অত্যন্ত উপযোগী। এ জনপদের কৃষকরা এমন একটি সময় পার করেছেন যখন মাঠে ফসল উৎপাদনে সার হিসেবে গোবর ব্যবহার করতেন। সে সময়ে জমিতে ফসলের ফলন কম হলেও প্রতিটি এলাকার জমি ছিল অত্যন্ত উর্বর। ৭০ কিংবা ৮০’র দশকে কৃষক জমিতে একবার গোবর সার প্রয়োগ করে সারা বছরই ফসল উৎপাদন করেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে গোবর সারের ব্যবহার কৃষক ভুলতে বসে। আর সেখানে স্থানটি দখল করে নেয় রাসায়নিক সার।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের পর বছর জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগে এখন নানামুখী সমস্যায় আছেন চাষিরা। বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে এ অঞ্চলের কৃষকরা আবারও গোবর সার ব্যবহারে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন।
উপজেলার স্বরুপদাহ, নারায়ণপুর ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম এলাকার মাঠে দেখা যায়, আমন ধান কেটে কৃষক বাড়িতে নিয়ে গেছে বেশ আগেই, ফসলি জমি এখন খালি। এই সময়ে তারা জমিতে গোবর ফেলা শুরু করেছেন। বিঘার পর বিঘা জমিতে ফেলে রাখা হয়েছে গোবর সার, কেউ কেউ ওই সার জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক মুজাহিদ, গোলাম মোস্তফা, হারুন অর রশিদ ও জামাল হোসেন বলেন, বছরের পর বছর রাসায়নিক সার জমিতে ব্যবহার করে মনে হচ্ছে জমির শক্তি কমে গেছে। আগে যেখানে পাঁচ কেজি রাসায়নিক সার দিলে ফসল হতো এখন সেই জমিতে ২০ কেজি সার দিতে হচ্ছে। তারপরও ভালো ফলন হচ্ছে না। এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে খেতে কোনো কেঁচো বা অন্যান্য কীটপতঙ্গ দেখা যাচ্ছে না।
‘মনে হচ্ছে সার ও বিষ প্রয়োগে জমি থেকে এসব কিছু হারিয়ে গেছে। তাই রাসায়নিক সারের আদলে জৈব সার অর্থাৎ গোবর সার ব্যবহার করা শুরু করেছি। তবে জমির যে অবস্থা তাতে মনে হয় না শুধু গোবর সার দিয়ে ফসল হবে, পরিস্থিতি বুঝে অল্পস্বল্প রাসায়নিক সার ব্যবহার করব,’ বলেন তারা।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানান, রাসায়নিক সার আর কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষকরা নানা দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব ব্যবহার করে সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা উল্টো তাদের বিপদে ঠেলে দিয়েছে। কেননা রাসায়নিক সার ও কীটনাশক অতি প্রয়োগের ফলে কৃষকরা দেখেছেন যে ফসলগুলোতে রোগ ও পোকার আক্রমণের হার যেন বেড়েই যাচ্ছে। এছাড়া জমিতে ঘাস মারা বিষ প্রয়োগের ফলে জমির শক্তি বহুলাংশে কমে যাচ্ছে। স্বল্প সময়ের ভেতরে সমস্যা সমাধানে কৃষক রাসায়নিক সার, আগাছানাশক ও কীটনাশক ব্যবহার করেন। এতে করে পরিবেশের তো ক্ষতি হচ্ছেই পাশাপাশি মাটির ভেতরে থাকা অনুজীবগুলো বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শৈলেন দাস বলেন, ‘এসব অনুজীব ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণীগুলো মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। অতীতে শহরের আবহাওয়া দূষিত আর গ্রামের আবহাওয়া দূষণমুক্ত মনে করা হতো। বর্তমানে জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে বাতাসও দূষিত হচ্ছে, উৎপাদন খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া থেকে বের হওয়া জরুরি। গ্রামের সব কৃষককে জৈব সার ব্যবহারে আরও বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।’
সূত্র : ইউএনবি