অজানা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সু চিকে
সু চি - ছবি সংগৃহীত
মিয়ানমারে সামরিক শাসন জারি করা হয়েছে, এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে সামরিক বাহিনীর প্রধানের হাতে। আর বেসামরিক নেত্রী আঙ সান সু চিসহ বেসামরিক নেতৃত্বকে আটক করা হয়েছে।
সেনা অভ্যুত্থান ও সু চি
মিয়ানমার বা বার্মা স্বাধীনতা পায় ১৯৪৮ সালে। তারপর তিনবার নির্বাচন হয়েছে ওই দেশে। কিন্তু ১৯৬২ সালে সেনা অভ্যুত্থান হয়। সেনা-শাসন চলে ২০১১ সাল পর্যন্ত। আর সেনা-শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন আঙ সান সু চি। তিনি গৃহবন্দি ছিলেন ১৫ বছর।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই
অং সান সু চির বাবা মিয়ানমারের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। পরে নিহত হন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে পড়া শেষ করে দেশে ফেরেন সু চি। ১৯৮৮ সালে দেশের সেনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু সুচির। ১৯৯০ সালে তার দল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ভোটও পায়। কিন্তু সরকার নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি।
সুচি গৃহবন্দি
১৯৮৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ১৫ বছর গৃহবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন সু চি। দেখা করতে পারেননি স্বামী এবং দুই পুত্রের সঙ্গে। কিন্তু গৃহবন্দি অবস্থাতেই গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।
নোবেল পুরস্কার
সু চির আন্দোলন গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দেয়। ১৯৯১ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়। তাকে নিয়ে এক ফরাসি পরিচালক ছবি তৈরি করেছেন। আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মান এবং পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
নির্বাচন এবং জননেত্রী
২০১২ সালের নির্বাচনে অংশ নেন সু চি। জয়লাভ করেন। সেনা সরকার ক্রমশ গণতান্ত্রিক কাঠামো স্বীকার করতে শুরু করে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে সুচি মিয়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধান নিযুক্ত হন।
রোহিঙ্গা এবং অন্য সুচি
তাল কাটে এক বছরের মধ্যেই। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশের সেনাবাহিনী যখন অত্যাচার চালাতে শুরু করে, সুচি তাতে বাধা দেননি। রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। কিন্তু সু চি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
আন্তর্জাতিক চাপ
রোহিঙ্গা ইস্যুতে গোটা বিশ্ব সুচির উপর চাপ দিতে শুরু করে। বেশ কিছু পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়া হয়। নোবেল কমিটিও নোটিশ জারি করে। কিন্তু সু চি নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, জাতিসঙ্ঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে সু চি।
কারচুপির নির্বাচন
গত বছর নভেম্বর মাসে মিয়ানমারে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে সু চির দল ফের ক্ষমতায় আসে। কিন্তু তার দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছে।
সেনার সঙ্গে দূরত্ব
সেনার সঙ্গে সু চির দূরত্ব ক্রমশই বাড়ছিল। দেশে যে সেনা ফের অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে, সেই সন্দেহও প্রকাশ করছিলেন কেউ কেউ।
সু চি আটক
রোববার রাতে আচমকাই সেনা সু চিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হয়েছে দেশের একাধিক মন্ত্রী এবং বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের। সেনা তাদের অজানা জায়গায় নিয়ে গেছে।
সেনাশাসনের ঘোষণা
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান মিং অং হ্লেইং সেনা টেলিভিশনে ঘোষণা করেছেন, নির্বাচনে কারচুপির জন্য সুচিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আপাতত আগামী এক বছরের জন্য দেশের দায়িত্ব নেবে সেনাবাহিনী।
দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা
রোববার থেকে গোটা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সেনা। সরকারি টেলিভিশনও ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। সু চির গ্রেফতারির খবর প্রথম জানিয়েছিলেন সরকারের মুখপাত্র। তার সঙ্গেও আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
সূত্র : ডয়চে ভেলে