ভ্যাকসিন নেই, করোনার বিরুদ্ধে কীভাবে লড়বে শিশুরা?
ভ্যাকসিন নেই, করোনার বিরুদ্ধে কীভাবে লড়বে শিশুরা? - ছবি : সংগৃহীত
শিশুদের শরীরে কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন কার্যকর হবে নাকি ওদের বাঁচার পথ আলাদা? ঘরবন্দি শৈশব তো চিরকাল থাকবে না, তাহলে কী করণীয়? বললেন পেডিয়াট্রিশিয়ান ডা. অগ্নিমিত্রা গিরি।
১৮ বছরের কম বয়সিদের আপাতত দেয়া হবে না কোভিড ভ্যাকসিন, এমনই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আসলে শিশুদের কোভিড-১৯ (COVID-19)-এ আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির সংখ্যা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় খুব কম। তাই শিশুদের চেয়েও বয়স্ক বা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কাদের সর্বপ্রথম টিকাকরণ অত্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ। তবে শিশুদের ভ্যাকসিন লাগবে না এটা একেবারেই নয়। যদিও এই মুহূর্তে যে কয়েকটি ভ্যাকসিন করোনা রোধে আশা দেখাচ্ছে, সেগুলো কোনোটাই শিশুদের জন্য উপযোগী হবে কি না, তা এখনো জানা যায়নি। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে সমাধান অন্য পথে।
অন্য উপায়েই সুরক্ষা
মাস্কই শিশুদের একমাত্র ভরসা। তবে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (WHO) তথ্য, পাঁচ বছর বয়সের কম বয়সীদের মাস্ক ব্যবহার স্বাস্থ্যকর নয়। এ ব্যাপারে মা-বাবাদের খেয়াল রাখতে হবে। বারবার শিশুদের হাত ধুয়ে দেয়া ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাই একমাত্র পথ। করোনা কিন্তু এখনো হচ্ছে। আর শিশুদের স্কুলও কিন্তু এখনো খোলেনি। কাজেই এরপর কী হবে সেটা আমরা জানি না। তাই সতর্কতা না মানলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। ৬-১১ বছর বয়সি শিশুদের মাস্ক পড়লে কোনও ক্ষতি নেই। সঙ্গে স্কুলে গেলে সুরক্ষাবিধি আগল আলগা করা যাবে না। আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যে সব শিশু মেন্টালি চ্যালেঞ্জড বা যাদের নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার আছে, তাদের কিন্তু মাস্ক পরিয়ে রাখা উচিত নয়। তাই এদেরও সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানা ও হাত ধোয়ার অভ্যাস জরুরি।
শিশুদের কোভিড ভ্যাকসিন (Corona Vaccine) নেই কেন?
এর প্রধান কারণগুলো হলো –
* শিশুদের উপরে কোনো ভ্যাকসিন ট্রায়াল হয়নি।
* শিশুদের অ্যালার্জির প্রবণতা খুব বেশি।
* কোভিড ১৯-এ শিশুদের প্রাণহানির সংখ্যা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায়
অনেক কম।
* শিশুদের ইমিউনিটি সিস্টেম আলাদা। কিছু ভ্যাকসিনের শিশু শরীরে কার্যকারিতা কম, কিছু ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বেশি।
* শিশুদের কত ডোজ লাগবে আর তা কত দিন অন্তর দেয়া হবে সেটা কিন্তু বড়দের চেয়ে একেবারে আলাদা হবে। সেই কারণে করোনার যে সব ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত আশা দেখাচ্ছে, সেই লিস্টে শিশুদের জন্য ভ্যাকসিন কোনোটাই কার্যকর হবে কি না তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
শিশুদের ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা অবশ্যই রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, শিশুদের করোনায় প্রাণহানির ঘটনা কম থাকলেও এদের কাওয়াসাকি ডিজিজের মতো (মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রম) হচ্ছে, যার সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে ভয়ানক পরিণতি হতে পারে। এই অতিমারীর সময় শিশুরা গৃহবন্দি থাকার ফলে শিশুদের মধ্যে করোনার প্রকোপ কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।
ফাইজার ও মর্ডানা-র ভ্যাকসিন শিশুদের ওপরে (১২-১৭ বছর বয়সী) ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করবে। আগে বড়দের ওপর এই ভ্যাকসিন কাজ করলে তবেই শিশুদের উপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে। সব কিছুর বিচারে এটা বলা যেতে পারে, শিশুদের জন্য কোভিড ভ্যাকসিন আসতে এ বছরের শেষ কিংবা পরের বছরের শুরু হয়ে যাবে।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন