কোয়াড কি নতুন করে যুদ্ধ বাঁধাবে?

কোয়াড কি নতুন করে যুদ্ধ বাঁধাবে? - ছবি : সংগৃহীত
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত অবস্থানে থাকা ছোট ছোট দেশ বড় শক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা সামাল দিতে গিয়ে বিপদে পড়েছে। ভূকৌশলগত অবস্থান একদিকে তাদের জন্য বর হয়েছে কারণ বড় শক্তিগুলো তাদেরকে তোয়াজ করে। অন্যদিকে এই সুবিধাটি তাদেরকে সামরিক অভিযানের মুখে পড়ার ঝুঁকিও বাড়িয়েছে। তাদের সার্বভৌমত্ব ঝুঁকিতে, এমনকি বিপন্নও হতে পারে।
সম্প্রতি পাথফাইন্ডার ইন্ডিয়ান ওশান সিকিউরিটি ওয়েবিনারে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র সচিব ও সাবেক নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল প্রফেসর জয়নাথ কলম্বাজ। ওয়েবিনারে অনেক খ্যাতনামা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অংশ নেন।
সাবেক নৌবাহিনী প্রধান ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের (আইওআর) সামরিকায়নে দুঃখ প্রকাশ ও উপকূলীয় দেশগুলোর উপর এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, এসব দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নেই। বিশ্বের সঙ্গে সমুদ্রপথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মতো সম্পদও এদের নেই।
তার আক্ষেপ : এভাবে চললে ২০৩০ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য হাসির জন্য মনযোগ দেয়া যাবে না। এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২২.৬ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এই তহবিল পাওয়া না গেলে লক্ষ্য অর্জনও সম্ভব হবে না।
কোয়াড ও বিআরআই
তার মতে, আইওআর ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে দুটি মহা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর যুক্ত হয়েছে। একটি হলো ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে (কোয়াড) যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)। কোয়াড একান্তই নিরাপত্তাগত বিষয়। অন্যদিকে, বিআরআই হলো অর্থনীতি, বাণিজ্য, অবকাঠামো ও বিনিয়োগভিত্তিক।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলতে চায়, চীনের নিরাপত্তা এজেন্ডা এগিয়ে নেয়ার কৌশল হলো বিআরআই। তারা কৌশলে ছোট দেশগুলোকে ঋণফাঁদে ফেলতে চায়।
শ্রীলঙ্কার অবস্থা
কলম্বাজ বলেন, শ্রীলঙ্কা একটি আইনভিত্তিক উন্মুক্ত আইওআর চায়। কিন্তু এখন সেখানে উন্নয়নের এজেন্ডা পেছনে ফেলে বড় শক্তিগুলোর কৌশলগত প্রতিযোগিতাই বড় হয়ে উঠেছে।
তার মতে, ইন্দো-প্যাসিফিক গভীর সমুদ্রে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে কোয়াডের ইচ্ছাটি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কোয়াড নিজেকে ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মূল চালক হিসেবে দেখাতে চায়। কোয়াড নতুন একটি স্নায়ু যুদ্ধ বাঁধানোর পায়তারা করছে কিনা সেই আশঙ্কা করেন কলম্বাজ। তিনি বলেন, একক কোন দেশ আইওআর-এর নিরাপত্তা দিতে পারে না। একটি দেশ নিরাপত্তাহীন হলে অন্য দেশগুলোর মনেও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হবে।
কলম্বাজ বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকায়িত এলাকা এখন আইওআর। এর উদাহরণ হলো ২০০৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ২৯টি দেশের ৫৭৫টি যুদ্ধ জাহাজ শুধু শ্রীলঙ্কাই সফর করেছে।
সাবেক এই নৌবাহিনী প্রধান বলেন, আইওআর-এ বিপুল অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া একটি গতিশীল অঞ্চল। কিন্তু এখানে নিরাপত্তা প্রশ্নে কোন ঐক্যমত নেই। এখানে কৌশলগত ধোঁয়াশাও রয়েছে। সবার উপরে দক্ষিণ এশিয়া একটি পারমাণবিক শক্তিধর অঞ্চলও বটে। দুই পারমাণবিক শক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গত ৭২ বছরে অনেক সহিংস সংঘাত হয়েছে।
সূত্র : এসএএম