ইউরোপীয় রেনেসাঁ ও মুসলিমবিশ্বের বাস্তবতা
ইউরোপীয় রেনেসাঁ ও মুসলিমবিশ্বের বাস্তবতা - ছবি : সংগৃহীত
ইউরোপীয় রেনেসাঁর ইতিহাস দিয়ে একটি ইসলামপ্রধান জনগোষ্ঠীর সামাজিক বিবর্তনের ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করা সঙ্গত নয় । ইউরোপে রেনেসাঁ এসেছিল ধর্মকে বাদ দিয়ে। মুসলিম সমাজ রেনেসাঁর ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাবে ধর্মকে সাথে নিয়ে কারণ মুসলিম সংস্কৃতি ধর্মনিরপেক্ষ নয়, ধর্মভিত্তিক। তাই মুসলমানের কী রাজনীতি, কী সংস্কৃতি-এর কোনোটিই ধর্মের বন্ধনমুক্ত করা সম্ভব নয়। ইসলামী দুনিয়ার কোথাও তা হয়নি। তুরস্কের কামাল পাশা গায়ের জোরে চেষ্টা করেছিলেন, তাও আজ ব্যর্থতার পথে।
সেকুলারিজম পুরোপুরি একটি ইউরোপীয় বিষয়। আরো পরিষ্কার করে বলা যায়, সেখানকার খ্রিস্টান ধর্মের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যে ঐতিহাসিক পটভূমিতে ইউরোপীয় জনসমাজে সেকুলারিজমের উদ্ভব হয়েছিল তা আমাদের মাথায় রাখা উচিত। সেখানকার খ্রিস্টান নাগরিক, সমাজ ও রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের জন্য এই ধারণা সেখানে কয়েক শ' বছর ধরে বিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা সমাজের খ্রিষ্টীয় মনোগঠন এমনিই যে, সেখানকার খ্রিস্টান নাগরিক, সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে অপর কোনো অখ্রিস্টান নাগরিক, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক মোটেও সেকুলার নয়। অখ্রিস্টান, বিশেষ করে মুসলমান সমাজের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই মনোগঠন বড় রকমের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারা মুসলমান সম্পর্কে তৈরি করে নতুন সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয়।
ইসলাম ও ইসলামপ্রধান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়া ও পণ্ডিতকূল এবং সরকারিভাবে যে নতুন এক ক্রুসেড শুরু করেছেন, সে সম্পর্কে আজ অনেকেই একমত। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের পতনের পর কেন নতুন করে প্রতীচ্য তার অসূয়াকে ইসলাম ও মুসলমানদের দিকে ঘুরিয়ে ধরেছে, তার কারণ হচ্ছে গত শতাব্দীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থানের আগে ইসলাম ছাড়া প্রতীচ্যকে চ্যালেঞ্জ করার শক্তি ধরে এমন কোনো সুসঙ্ঘবদ্ধ ব্যবস্হা আর কিছু ছিল না। ইসলামের প্রতি এই সাবেক ঘৃনাই আবার নতুন করে পশ্চিমা বিশ্বে জাঁকিয়ে বসেছে।
বিশিষ্ট গবেষক ও বুদ্ধিজীবী ফাহমিদ-উর-রহমান তার সাম্রাজ্যবাদ বইয়ে এ সম্পর্কে বেশ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন, মুসলমানদেরকে উদ্বাস্তু হিসেবে গ্রহণ করা হবে না। চেক রিপাবলিকের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে (আপিল), মুসলমান ছাত্রীর হেডস্কার্ফ পরার অধিকার নেই এবং তাতে বৈষম্য হবে না।
গাম্বিয়া ৯৫% মুসলমান, ইয়াহইইয়া জামে, গাম্বিয়াকে দেড় বছর আগে, ইসলামিক রিপাবলিক ঘোষণা করার পর থেকেই পশ্চিমা ও তাদের আফ্রিকান কয়েকটি দেশের সহায়তায় ক্ষমতার পরিবর্তনের পর আজ প্রথম ডিক্রি ছিল- গাম্বিয়ার অফিসিয়াল নাম 'গাম্বিয়ান ইসলামিক রিপাবলিক' থেকে 'ইসলামিক' শব্দটা বাদ দেয়া হবে।
ডোনাল্ড ট্র্যাম্প নতুন ডিক্রি জারি করেছেন, সিরিয়া থেকে শুধু খ্রিষ্টানদেরকে উদ্বাস্তু হিসাবে গ্রহণ করা হবে, পাশাপাশি সাতটি মুসলিম দেশ থেকে কাউকে গ্রহণ করা হবে না।এছাড়াও সাম্প্রতিক ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি বা জেরুসালেম ঘোষণা লক্ষণীয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারত ঘোষণা করেছে, হিন্দু ছাড়া অন্য কোনো অভিবাসী জাতিকে বিশেষ করে মুসলমানদের নাগরিকত্ব দিবে না।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এক বক্তব্যে বলেছেন, 'ইসলামিক টেররিজম'কে নির্মূল করতে আমেরিকা/ব্রিটেনের যৌথ নেতৃত্বে তারা একাট্টা!
প্রত্যেকটা সিদ্ধান্তের টার্গেট 'ইসলাম/মুসলিম'- অনেকেরই স্বীকার করতে লজ্জা হবে বা ভয় করবে, কারো কারো আবার ঘিলুতেই ধরবে না কী ঘটতে যাচ্ছে, মুসলিম বিশ্বের পরিণতি কী হতে পারে!
আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ করবেন, মুসলমান জনপদগুলোতে যারা নেতৃত্বে আছেন বা নেতৃত্ব দিতে চান, এ ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য নেই বা মাথাব্যথা নেই, বরং ক্ষমতায় থাকার জন্য বা যাওয়ার জন্য, মোডারেট চেতনাবাজ হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করার জন্য- ডোনাল্ড ট্র্যাম্প'দের লস্করের ভূমিকায় নেমেছে ।
Samuel P Huntington's theory: 'The Clash of Civilizations, is a theory that "people's cultural and religious identities will be the primary source of conflict in the post-Cold War world".
দুঃখজনক হলেও সত্য মুসলিম জনপদের নেতা-নেত্রীদের এব্যাপারে মাথাব্যথা নেই, অবশ্য মাথাব্যথা হওয়ার জন্য নিজেদের বোধ বিশ্বাস ধর্মের প্রতি যে আনুগত্য ভালোবাসা থাকা দরকার, তার কতটুকু আছে, তাদের কর্মকাণ্ড দেখেই বুঝতে পারবেন!