কাদের ক্ষমা করেছেন ট্রাম্প?
ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
নয় বছরের আলি কেনানির কথা এখন কেউ মনে করে না। কেনানি গাড়িতে বাবার সাথে বাড়ি ফিরছিল। বাগদাদের নিসোর স্কয়ারে আমেরিকার সিকিউরিটি কন্ট্রাক্টর ব্ল্যাকওয়াটারের লোকেরা আচমকা এলোপাতাড়ি গুলি করে ১৭ জনকে হত্যা করে। ২০০৭ সালের ঘটনা এটি। বাবা আদর করে ছেলেকে ‘আলাবি’ বলে ডাকতেন। ছেলের বিচারের জন্য কেনানির বাবা মোহাম্মদ কেনানি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ব্ল্যাকওয়াটার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। তবে সব কিছু এত সহজ ছিল না। মামলা প্রত্যাখ্যান, আবার মামলা, চার্জ গঠন না করা, আপিল, বিচার, সাক্ষ্যপ্রমাণ সব মিলিয়ে দশটি বছর! চার আসামির মূল নায়ক নিক স্নাটেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। কিন্তু ২২ ডিসেম্বর ২০২০, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিক স্নাটেনসহ মামলার চার সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমা ঘোষণা করেন। কেনানি দুঃখ করে বলেছেন, ‘এত দিন জানতাম, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নেই। এখন জানলাম, আইনের ওপরও কেউ আছেন।’
তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘নিষ্পাপ সন্তানের ন্যায়বিচারের জন্য ইরাক ছেড়ে সুবিচারের দেশে এসেছি, ২০০৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মিসিগানে অপেক্ষা করেছি। এখন ইরাকে চলে যাবো, আমার দেশই উত্তম।’ এই দীর্ঘদিন তিনি ছেলে আলাবি বা কেনানির ছবি ডেট্রয়েটে নিজের অটোরিপেয়ার দোকানে ঝুলিয়ে রাখতেন। প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমা অপরিবর্তনীয়; অর্থাৎ অন্যজন এমনকি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সেটি বাতিল করতে পারেন না বা ব্ল্যাকওয়াটারকে পুনঃ বিচারের সম্মুখীন করতে পারেন না। কারণ, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘অমোঘ’ আদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বিগত বারের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে সাজাপ্রাপ্ত তিনজন রিপাবলিকান আইনজ্ঞকেও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমা করে দেন। নির্বাচনী কোনো কাজ না হলেও তাদের বিরুদ্ধে financial impropriety প্রমাণিত হওয়ায় সাজা ভোগ করছিলেন। দু’জন বর্ডার প্যাট্রোল এজেন্টকেও তিনি ক্ষমা করেছেন। অথচ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- দু’জন ড্রাগ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন তারা। ট্রাম্প বিদায় নিবেন তাই ক্ষমা করছেন- এমনটি নয়। আগের বছর এক সেনাসদস্যকে ক্ষমা করে দিয়েছেন যে ২০০৮ সালে এক ইরাকি বন্দীকে বন্দী অবস্থায়ই হত্যা করেছিল। এ ছাড়া দু’জন আমেরিকান যারা আফগানিস্তানে সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করেছিল তারাও ক্ষমা পেয়েছে। ট্রাম্প নেভি সিল ফোর্সের Edward Gallagher-কে পুনঃ নিয়োগ দিয়ে গেলেন যাকে ওয়ার ক্রিমিনাল হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউট ট্রাম্পের ক্ষমা ঘোষণার সমালোচনা করে বলেছে, আরবদের মূল্যবোধকে তিনি তোয়াক্কা করেন না। তারা বলেন যে, ব্ল্যাকওয়াটার ইরাকে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করেছিল।
ব্ল্যাকওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা হলেন এরিখ প্রিন্স। ১৯৯৭ সালে তিনি বেসরকারি এই সামরিক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। আমেরিকার স্বার্থে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংস্থাটি কাজ করে আসছে। কোম্পানির অন্য নাম ‘জি সার্ভিস’। ২০১১ সালে ‘একাডেমি’ নামেও পরিচিতি লাভ করে। বড় ধরনের অপারেশন, সিক্রেট সার্ভিসের অপারেটরদের বেসরকারি সেবা ও সহযোগিতা, সেনাবাহিনীর পক্ষে গুপ্ত অভিযান- এসব কাজ করে ব্ল্যাকওয়াটার সেনাবাহিনীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হলেও বিশ্বে ব্যাপক কুখ্যাতি অর্জন করেছে।
এরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের নিরাপত্তা সেবাও দিয়ে আসছে ২০০৩ সাল থেকে। এটাও ঠিকাদারি কাজ। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে ২০১৩ সালে সিকিউরিটি গার্ডের এক ঠিকাদারিতে ৯২ মিলিয়ন ডলারের ঠিকাদারি পায়। পরে আরো অনেক সেনাবাহিনীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের সাথে একীভূত হয়। উল্লেখ্য, ওসামা বিন লাদেনকে খোঁজার ঠিকাদারিও ব্ল্যাকওয়াটার পেয়েছিল। ইরাক যুদ্ধে অনেক স্থান ও স্থাপনা পাহারার ঠিকাদারিও এই সংস্থা পরিচালনা করেছে, আফগানিস্তানেও একই কাজে এ সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছিল।
প্রিন্স মনে করেন, হাজার হাজার মার্কিন ও ন্যাটো সেনার বদলে প্রাইভেট সেনারা যুদ্ধ করবে একজন ভাইসরয়ের অধীনে। ‘ভাইসরয়’ সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বার্তা দেবেন। প্রেসিডেন্ট একটি ওয়ার বোর্ড স্থাপন করবেন। এই পদ্ধতি অনেকটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারের জাপান শাসন করার মতো। আরো জানানো হয়েছে, ঠিকাদারের কোনো কাজের জন্য কৈফিয়ত তলব করা যাবে না। এরিখ আরো মনে করেন, ওয়াশিংটনের ব্যুরোক্র্যাট জেনারেলদের দিয়ে যুদ্ধ করা সম্ভব হবে না বরং প্রাইভেট ফোর্স দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে। সে যুদ্ধ যদি অনন্তকালও চলে, সমস্যা নেই’। প্রিন্স ঘোষণা দিয়েছেন সময় যতই লাগুক বিজয় নিয়েই ঠিকাদারির ফাইনাল বিল তুলবেন। ওয়াশিংটন যে অর্থ খরচ করে তার পরিবর্তে মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ খরচ করলেই যুদ্ধের ব্যয় মেটানো যাবে। তিনি বলেন, মার্কিন সেনাবাহিনীকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলে দেশ দ্রুত উন্নতি করবে।
এখন ওয়ার লর্ডের মতো ভাইসরয় কে হবেন আর সৈন্য কোত্থেকে আসবে, এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এরিখ প্রিন্স জবাবে বলেছেন, অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকান সৈন্যদের এসব কাজে নিয়োগ দেয়া হবে। বেকার আমেরিকানদের কয়েক দিনের নোটিশে রিক্রুট করা হবে। সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন থেকে হাজার হাজার সৈন্য সংগ্রহ করা যাবে। ওই সব দেশে যুদ্ধের ফলে মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরছে। দুর্ভিক্ষ, স্বাস্থ্যঝুঁকি, বেকারত্বের রাজ্যে চাকরি ‘সোনার হরিণ’। এরিখ মনে করেন, কোনো যুদ্ধ না হলে মানুষের খাবার জুটবে না, হাত পাতবে না, আমেরিকার অস্ত্র বিক্রি হবে না, আমেরিকার দ্বারে কেউ আসবে না। এসব ভুখা নাঙাকে সামান্য বেতন দিয়ে সেনাবাহিনী গঠন করে যুদ্ধের ময়দানে ছেড়ে দেয়া কঠিন কোনো বিষয় নয়। এসব মিশন বা যুদ্ধ হবে ‘মার অথবা মর’। মারলে আসবে বেশি বেতন, সম্মান ও র্যাংক; মরলে পরিবার পাবে মোটা অঙ্কের টাকা। অতএব উভয় দিকে লাভ! মিশন সফল হলে আসবে অর্থ, বিত্ত ও ‘চিত্ত’। সৈন্য সংগ্রহ করা কষ্টকর কিছু নয়। পেটের ক্ষুধা ও যৌন কামনার বেলায় মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। যুদ্ধক্ষেত্রে দু’টিই সহজলভ্য। তাই এসব সৃষ্টি করতে দরকার যুদ্ধ, খাদ্যাভাব, গোষ্ঠী-সঙ্ঘাত। প্রিন্স মনে করেন ঠিকাদার দিয়ে শাসন ও যুদ্ধ করার উত্তম উদাহরণ হচ্ছে অতীতের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। এরিখ প্রিন্স আফগানিস্তানে ফ্রন্টিয়ার সার্ভিস গ্রুপের নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করছেন। তার মতে যুদ্ধই উন্নয়ন ও শান্তির চালিকাশক্তি।
প্রিন্স ইতোমধ্যে ইরাক যুদ্ধে ঠিকাদারির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সৈন্যরা বাগদাদ স্কয়ারে জনসমাগমে গুলিবর্ষণ করে ১৭ জন নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। আজো তার কোনো জুৎসই জবাব মার্কিন সেনাপ্রধানরা দিতে পারছেন না। মার্কিন বিচার বিভাগ গুলিবর্ষণকারীকে এর মধ্যে বিচারে সাজা দিয়েছেন। কিন্তু এরিখ মনে করেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে কে কী করেছে, সেগুলো আদালতে বিচারের বিষয় নয়। তার প্রস্তাবের সমালোচক জেনারেলরা বলেন, যেভাবে প্রিন্স সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন তা মূলত একটি অনৈতিক দুর্বৃত্ত বাহিনীর জন্ম দেবে। এখানে উল্লেখ্য, ব্লাকওয়াটার বাহিনী ইরাকে ও আফগানিস্তানে অনেক কাজ করেছে; কিন্তু কোথাও ভালো ফল বয়ে আনেনি।
সদ্য বিগত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরো যাদের ক্ষমা করেছেন, তাদের মধ্যে তার বিয়াই চার্লস কুশনার, নিউ জার্সির রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারও রয়েছেন। তিনি ১৯৮৫ সালে ‘কুশনার কোম্পানি’ গঠন করেন। ২০০৫ সালে অবৈধ প্রচারণা, কর ফাঁকি, সাক্ষীকে ‘টেম্পার’ করার দায়ে দুই বছরের সাজা দেয়া হলে তিনি ফেডারেল প্রিজনে সাজা ভোগ করছিলেন। তাকে ৪০ হাজার ডলার জরিমানাও করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ভুয়া স্টেটমেন্টের ১৬টি অভিযোগ ছিল। এসব ব্যক্তিকে ক্ষমা করায় মিডিয়ায় ‘প্রতারকদের ক্ষমা’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। ২৩ ডিসেম্বর-২০ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেক তারকা প্রতারক ‘ফ্রডস্টার’কে ক্ষমা করেন। যারা Aleph Institute-এ ডোনেশন দিয়েছেন তারা অনেক বেশি ক্ষমা পেয়েছেন। এটি গোঁড়া ইহুদিদের সংগঠন, ট্রাম্পের জামাতা জারেদ কুশনার এ সংস্থার সদস্য।
স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় প্রতারক রাজা ফিলিপ এসফরমেসকেও ট্রাম্প ক্ষমা করেছেন। ফিলিপ ১.৬ মিলিয়নের এক ফেরারি এবং ৩৬০,০০০ ডলারের সুইস ওয়াচ অর্জন করেন। তিনি প্রাইভেট জেটে করে পুরো আমেরিকা ঘুরে বেড়ান। এসব অর্থ মেডিকেয়ার খাত থেকে প্রতারণার মাধ্যমে তার হাতে আসে। এফবিআই এজেন্ট ডেনিস স্টিমেন বলেন, ফিলিপ খুব লোভী মানুষ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফিলিপ এসফরমেসকে যখন ক্ষমা করেন, তখন তাকে আদালত ২০ বছরের সাজা দেন। তিনি জেল খাটছিলেন। তার বিরুদ্ধে ১.৩ বিলিয়ন প্রতারণার অভিযোগ ছিল। ইহুদি মানবাধিকার সংগঠন এসফরমেসের মুক্তির বিষয়ে কাজ করছিল। Aleph Institute-এ তার পরিবারও ৬৫,০০০ হাজার ডলার অনুদান দিয়েছে। তার পিতা একজন ইহুদি রাব্বি, নাম মরিস এসফরমাস।
ট্রাম্প ওভাল অফিসে শেষ সময়ে, বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ আগেও অনেককে ক্ষমা করেছেন বলে বিবিসির সংবাদে জানা যায়। তিনি ১৪০ জনকে ক্ষমা করেছেন, তন্মধ্যে ৭৩ জন পূর্ণ ক্ষমা পেয়েছেন এবং ৭০ জনের সাজা কমানো হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাননও রয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। মেক্সিকো সীমান্তে ২০১৬ সালে ‘আমরা দেয়াল নির্মাণ করব’ নামে এক ক্যাম্পেইনের তিনি নেতৃত্ব দেন। তখন ২৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান তুলে নিজেই এক মিলিয়ন মেরে দিয়েছেন।
আইনে ‘পারডন’ মানে ক্ষমা করা, অপরাধ থেকে মুক্ত হওয়া আর ‘কমুটেশন’ হলো সাজা কমিয়ে দেয়া, ধরন পাল্টে দেয়া বা জেলের মেয়াদ শেষ বলে আদেশ দেয়া। ট্রাম্প এই দুই ধরনের ক্ষমাই করেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ক্ষমা করার সীমাহীন ক্ষমতা রয়েছে এবং এ জন্য তাকে কোনো কৈফিয়ত দিতে হয় না। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ মনে করে যে, ট্রাম্প বিদায়ের কিছুক্ষণ আগে গোপনে আরো অনেককে ক্ষমা করেছেন। এর কোনো প্রচার বা ঘোষণা নেই। পত্রিকা বলেছে, এমন ঘোষণা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে তা নিয়ে আরেকটি আইনের ব্যাখ্যা প্রয়োজন যা সংবিধান বিশেষজ্ঞ নিয়ে ‘অস্থিরতা’ অনুভব করছেন।
মানুষ হত্যার দায়ে ইরাকে এখন ট্রাম্পের বিচার শুরু হয়েছে। ইরাকের এক বিচারিক আদালত ৭ জানুয়ারি ২০২১ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। অপরাধ হলো, পরিকল্পিতভাবে ইরাকের বিমানঘাঁটিতে বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা। যার মধ্যে ইরাকের সিনিয়র সেনা কমান্ডার আবু মাহদি আল মুহান্দি এবং সিনিয়র ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিও ছিলেন। তদন্ত শেষে ইরাকে এখন ওই ঘটনার বিচার চলছে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ট্রাম্প নিজেই মিডিয়ায় স্বীকারোক্তি দেয়ায় অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করা সহজ হবে বলে মিডিয়া রিপোর্ট উল্লেখ করেছে।
ট্রাম্প জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জকে ক্ষমা করার ফুরসত পাননি। জেলখানায় ধুঁকে ধুঁকে অসুস্থাবস্থায় তিনি কালাতিক্রম করছেন অনেক বছর ধরে। একই ব্যাপার এডওয়ার্ড স্নোডেনকে নিয়ে যিনি রাশিয়ায় নির্বাসনে রয়েছেন। সমালোচকরা বলছেন অ্যাসেঞ্জ ও স্নোডেন যদি তাদের কিছু বিটকয়েন Aleph Institute-এ পাঠাতেন, তাহলে তাদের পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ওয়াশিংটনে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এলেন লিস্টম্যান বলেছেন, ‘ট্রাম্পের কিছুই আমাকে অবাক করে না। তিনি আইনের কোনো তোয়াক্কা করেন না; না মানবতার, না ঐতিহ্যের।’
অবশেষে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ট্রাম্প ঘোষণা দিলেন যে, তিনি নিজেকে ক্ষমা ঘোষণা করছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে 'an absolute right' বা চরম অধিকার তার রয়েছে। তবে এ কথায় আমেরিকান ঐতিহাসিক ও সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা তাকে সমর্থন দেননি। অবশ্য এখন জো বাইডেন ট্রাম্পকে ক্ষমা করে দিলে সেটি একটি সুরাহা হতে পারে। আমেরিকার ইতিহাসে এর আগে প্রেসিডেন্ট ফোর্ড ক্ষমা করেছিলেন পূর্বসূরি রিচার্ড নিক্সনকে। আমেরিকার জনগণ সেটি ভালোভাবে নেননি ফলে ফোর্ডকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
এর মধ্যে ট্রাম্প তার অনুগত রিপাবলিকানদের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে নির্বাচনী ফলাফল চ্যালেঞ্জের অর্থহীন প্রচেষ্টা চালান আরো একবার। তিনি এর মধ্যে সিনেটের মেজরিটি নেতা মিট ম্যাককনেলের সমর্থন হারান; এমনকি তার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ট্রাম্পের ওপর আস্থা রাখছেন না এমন একটি কথা ওয়াশিংটন ডিসিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। রাজ-ক্ষমাকে সাংবিধানিক গণপ্রজাতন্ত্রের নিয়মের চেয়ে মধ্যযুগের রাজাদের রাজসিক এক বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মেয়াদের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত এই সুরভিত রাজসিক গুণের অধিকারী হতে চেয়েছিলেন!
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব, বাংলাদেশ সরকার