জার্মানির কোভিড কারাগার : যেভাবে থাকে বন্দীরা
জার্মানির কোভিড কারাগার : যেভাবে থাকে বন্দীরা - ছবি : সংগৃহীত
কোয়ারান্টিনের নিয়ম না মানা ব্যক্তিদের বন্দি রাখতে জার্মানির কয়েকটি স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ ‘কোভিড কারাগার' নির্মাণ করেছে৷ এখন পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক ব্যক্তিকে সেখানে রাখতে হলেও সিদ্ধান্তটি সমালোচিত হয়েছে৷
সম্প্রতি উত্তর জার্মানির শ্লেসভিগ-হলস্টাইন রাজ্যের ছোট শহর নয়ম্যুনস্টারের কিশোর সংশোধনাগারের অব্যবহৃত একটি এনেক্স ভবনের ছয়টি ঘরকে ‘কোভিড কারাগারে' পরিণত করা হয়৷
তবে এটি গতানুগতিক কোনো জেল নয়৷ ‘বন্দিদের' টিভি দেখতে দেয়া হবে৷ তারা ল্যাপটপ, ফোন ও বাসায় থাকার যত সুবিধা আছে, সব পাবেন৷ শুধু তাদের নিরাপত্তাপ্রহরীদের কথা শুনতে হবে৷ ৪০ জন সাবেক পুলিশ সদস্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ঐ জেলে কাজ করছেন৷
কোয়ারান্টিনের নিয়ম ভাঙা কাউকে কোভিড কারাগারে পাঠাতে আদালতের নির্দেশ লাগবে৷ একজন ব্যক্তি নিয়মিত কোয়ারান্টিনের নিয়ম ভাঙছেন সেই প্রমাণ থাকতে হবে৷ এরপর পুলিশ ঐ ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে প্রথমে তাকে জরিমানা করতে পারে৷ শুধুমাত্র তারপরই আদালতের নির্দেশে তাকে কোভিড কারাগারে পাঠানো যেতে পারে৷
গত বছরের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জার্মানির ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে দুশর বেশি মানুষকে কোয়ারান্টিনের নিয়ম না মানার জন্য বিচার করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে ত্রিশজনেরও কম ব্যক্তিকে কোভিড কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷
জার্মানির একটি কিশোর সংশোধন কেন্দ্রকে কোয়ারান্টিন না মানা ব্যক্তিদের কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হবে৷
জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মধ্যে টুরিঙ্গিয়া, সারলান্ডসহ কয়েকটি রাজ্যের প্রশাসন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, তাদের এমন কারাগার তৈরির কোনো পরিকল্পনা নেই৷
২০২০ সালে হেসে রাজ্যের প্রশাসন একটি হোটেলকে এমন কাজের জন্য ঠিক করেছিল৷ কিন্তু ‘চাহিদা না থাকায়' সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷
এদিকে, সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি থাকা সাক্সোনি রাজ্যের প্রশাসন ড্রেসডেনে এ মাসেই একটি কোভিড কারাগার চালু করছে৷
স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক এমন কারাগার নির্মাণের সমালোচনা হচ্ছে৷ অনেকে একে মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ জার্মানির বাম দলও এর সমালোচনা করেছে৷
করোনায় আক্রান্ত দশ কোটি ছাড়িয়ে গেল
গত বছর থেকে কোভিড ১৯ প্রায় গোটা বিশ্বের স্বাভাবিক জনজীবন কমবেশি থামিয়ে দিয়েছে৷ বুধবার মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেল৷ অর্থাৎ সরকারি হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক দশমিক তিন শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন৷ মৃতের সংখ্যা ২১ লাখেরও বেশি৷ এখনো পর্যন্ত গড়ে প্রতি সেকেন্ডে সাত দশমিক সাত শতাংশ মানুষ এই ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হয়েছেন৷ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া ও ব্রিটেন৷ নথিভুক্ত সংক্রমণের অর্ধেকেরও বেশি এই সব দেশে ঘটেছে৷ অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ২৮ শতাংশকে বাড়তি এই ধাক্কা সামলাতে হয়েছে৷ মোট আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ৷ সে দেশে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪২৫,০০০৷
করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতিও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হবার পর প্রথম ১১ মাসে গোটা বিশ্বে পাঁচ কোটি সংক্রমণ নথিভুক্ত হয়েছিল৷ কিন্তু তারপর মাত্র তিন মাসের মধ্যে সংখ্যাটি দ্বিগুণ হয়ে গেল৷ ব্রিটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত করোনা ভাইরাসের আরও ছোঁয়াচে সংস্করণ এমন পরিস্থিতির জন্য অন্তত আংশিকভাবে হলেও দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে৷
এমন বিপর্যয় সামলাতে অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে একাধিক টিকা একে একে অনুমোদন পেলেও সেই টিকা উৎপাদন, বণ্টন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা দেখা যাচ্ছে৷ প্রায় ৫৬টি দেশ এরই মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে৷ একমাত্র ইসরায়েল দেশের জনসংখ্যার প্রায় ২৯ শতাংশকে কমপক্ষে টিকার প্রথম ডোজ দিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে৷
অঞ্চল হিসেবে ইউরোপ করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হয়ে পড়েছে৷ সেখানে প্রতি চার দিনে নতুন করে দশ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে৷ করোনা মহামারি শুরু হবার পর থেকে প্রায় তিন কোটি মানুষ সংক্রমণের শিকার হয়েছে৷ ধীর গতিতে সরবরাহের কারণে ইউরোপের মানুষকে টিকা দিতে বিলম্ব ঘটছে৷
আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ রেখে অথবা যাতায়াতের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে অনেক দেশ পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই সব বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে চলেছেন, যারা সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছেন৷ ব্রিটেনও কয়েকটি দেশ থেকে প্রবেশের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করতে চলেছে৷ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড মহামারির শুরু থেকেই ভ্রমণের ক্ষেত্রে এমন নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সুফল পেয়েছে৷
জার্মানিও সীমান্তে আরো নিয়ন্ত্রণ এবং বেসামরিক বিমান চলাচল প্রায় বন্ধ করে দেবার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার বর্তমান পরিস্থিতি সামলাতে আরও কড়া পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছেন৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে