তাইওয়ান নিয়ে বাইডেনকে পরীক্ষায় নেমেছে চীন!
তাইওয়ান নিয়ে বাইডেনকে পরীক্ষায় নেমেছে চীন! - ছবি সংগৃহীত
তাইওয়ানের আকাশ সীমায় চীনের যুদ্ধ বিমানগুলো টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বড় ধরণের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে দেশটি। জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম কর্মদিবস শুরু করার সাথে সাথে এমন শক্তি প্রদর্শন করল চীন।
রোববারের ওই অভিযানে ১৫টি বিমান অংশ নেয় এবং এরপরই একই রকম একটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। তারপরে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ওয়াশিংটন।
তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একটি প্রদেশ হিসেবে গণ্য করে চীন। কিন্তু তাইওয়ান নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মনে করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তাইওয়ানের প্রতি জো বাইডেনের কতটুকু সমর্থন আছে সেটিই পরীক্ষা করে দেখছে চীন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রের করা প্রথম মন্তব্যে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, দেশটিকে নিজেদের প্রতিরক্ষায় সহায়তার বিষয়ে 'দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ' রয়েছে তারা।
সাম্প্রতিক কয়েক মাসে তাইওয়ানের দক্ষিণাঞ্চল এবং দেশটি নিয়ন্ত্রিত প্রাতাস দ্বীপের মাঝের জলসীমা দিয়ে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে চীন।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে শনিবার তাদের দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশ প্রতিরক্ষা এলাকায় চীনের পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম আটটি বোমারু বিমান, চারটি ফাইটার জেট এবং একটি সাবমেরিন বিধ্বংসী বিমান প্রবেশ করে।
রোববারের অভিযানে ১২টি ফাইটার, দুটি সাবমেরিন বিধ্বংসী বিমান এবং একটি পরিদর্শনের কাজে ব্যবহৃত বিমান ছিল বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। দুটি ক্ষেত্রেই, তাইওয়ানের বিমান বাহিনী বিমানগুলোকে সতর্ক করে সরিয়ে দিয়েছে এবং সেগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে।
এটি গুরুত্বপূর্ণ কেন?
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের কয়েক দিনের মধ্যেই এই মহড়া অনুষ্ঠিত হলো। তিনি মানবাধিকার, বাণিজ্য হংকং ও তাইওয়ানের মতো ইস্যুগুলোতে চীনের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ইস্যুগুলো দুই দেশের ক্রমে খারাপ হতে থাকা সম্পর্কে কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে।
ট্রাম্পের প্রশাসন তাইপেই-এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছিলো এবং চীনের কড়া হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে ওই অঞ্চলগুলোতে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছিলো। তার বিদায়ের কয়েক দিন আগে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দীর্ঘ দিন আমেরিকান ও তাইওয়ানিদের মধ্যে যোগাযোগের ওপর আরোপিত কড়াকড়ি প্রত্যাহার করেন।
চীন ও তাইওয়ান ইস্যুতে নতুন প্রশাসনের নীতি কী হয় সেটি এখনো দেখার বাকি হলেও প্রাইস বলেছেন যে দ্বীপটির সাথে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করবে তারা।
’বেইজিংকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যাতে তাইওয়ানের উপর সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ দেয়া বন্ধ করে এবং এর পরিবর্তে তাইওয়ানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে কার্যকরী আলোচনায় অংশ নেয়।’
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা দ্বীপটির ডি-ফ্যাক্টো অ্যাম্বাসেডর সিয়াও বি-খিম'কে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যাকে তাইওয়ানের প্রতি নতুন প্রশাসনের সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির শীর্ষ এক আইনপ্রণেতা লো চিন-চেং বলেন, চীনের এই পদক্ষেপ দ্বীপটিকে সমর্থন দেয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে নিবৃত করার প্রচেষ্টার অংশ। ’এটা বাইডেন প্রশাসনকে একটি বার্তা দিচ্ছে,’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি একথা বলেন।
প্রেক্ষাপট
১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে চীন ও তাইওয়ানের আলাদা সরকার রয়েছে। তাইওয়ানের আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ড সীমিত করতে দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা করে আসছে চীন। আর প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে দুই পক্ষই প্রতিযোগিতা করে আসছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তেজনা বেড়েছে এবং দ্বীপটিকে আবারো নিয়ন্ত্রণে নিতে শক্তি ব্যবহারের বিষয়টিও বাদ দেয়নি চীন।
যদিও হাতে গোনা কয়েকটি দেশ তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিয়েছে, এর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের অনেক দেশের সাথেই দৃঢ় বাণিজ্যিক এবং অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে।
যেমন, অন্য দেশগুলোর মতোই তাইপেইয়ের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই কিন্তু মার্কিন একটি আইনে দ্বীপটিকে নিজেদের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করার কথা বলা রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি