অন্তরঙ্গ বন্ধু : ইসলামের ৪ শর্ত
অন্তরঙ্গ বন্ধু : ইসলামের ৪ শর্ত - ছবি সংগৃহীত
আল্লাহ মুসলমানদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতির আসনে স্থান দিয়েছেন। কিন্তু এর পরও মুসলিম হয়ে আমরা কতটুকু এর মান বা মর্যাদা রক্ষা করতে পারছি। আবার কেউ কেউ আছেন নামমাত্রই মুসলমান হয়ে আছেন। কতটুকু আমল বা সৎকর্ম করছেন অথবা তাদের বিশ্বাসের সাথে আদৌ তাওহিদের মিল হচ্ছে কি না, এসব কিছুই সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। অথচ, মুসলিম জাতি হয়ে আমরা বোকার মতো ভাবছি যে আমরা ইসলাম রক্ষা করে চলি। কিন্তু আল্লাহ এতে সন্তুষ্ট নন, বরং তিনি বলেছেন- ‘মুসলমানরা যদি ইসলাম ত্যাগও করে থাকে ইসলামের রক্ষার দায়িত্ব আল্লাহ নিজেরই। আর মুসলমানদের উচিত নয় অমুসলিমদের একেবারে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা। যার কারণে কোনো মুসলমান দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা পর্যন্ত থাকতে পারে।’
আল-কুরআনে আল্লাহ মুসলমানদের সতর্ক করে বলেছেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও নাসারাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে নিশ্চয়ই তাদেরই একজন। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না।’ (সূরা মায়েদা-৫১) সুতরাং, একজন মুমিন মুসলিম কখনো অন্য ধর্মের কাউকে নির্ভর করার মতো নিজের আপন ভাববে না।
আল্লাহ বলেছেন- ‘মুমিন মুসলিমরা যদি ইসলাম ত্যাগ করে চলে যায় তবে তাদের পরিবর্তে তিনি অন্য জাতি আনবেন। হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং যারা তাঁকে ভালোবাসবেন; তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে; তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছে তাকে তিনি তা দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা মায়েদা-৫৪)
মুসলিমদের স্বার্থেই তাদেরকে অমুসলিমদের সাথে গভীর বন্ধুত্ব ও মেলামেশা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা দলের ইসলাম ত্যাগে ইসলামের কোনো ক্ষতি হবে না, কারণ ইসলাম রক্ষার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিজে নিয়েছেন। আর মুসলিম জাতি ইসলাম ত্যাগে শেষ হয়ে গেলেও এর পরিবর্তে আল্লাহ অন্য আরেক জাতির উত্থান ঘটাবেন। তাদের বিশেষ বিশেষ গুণের মধ্যে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং তাদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা অন্তর্ভূক্ত থাকবে। সূরা ইমরানে আল্লাহ বলেন- ‘হে রাসূল, আপনি বলে দিন, যদি তোমারা আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার অনুসরণ করো। এর ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, আর আল্লাহ তোমাদের অপরাধসমূহ মার্জনা করে দেবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সূরা ইমরান-৩১)
যে জাতির অভ্যুত্থান হবে তাদের দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে যে, তারা মুসলিমদের সামনে নম্র হবে এবং সত্যবাদী হলেও ঝগড়া ত্যাগ করবে। হাদিসে এসেছে, ‘আমি ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের মধ্যস্থলে বাসস্থান দেয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, যে সত্যপন্থী হওয়া সত্ত্বে¡ও ঝগড়া ত্যাগ করে।’ (আবু দাউদ)
তাদের তৃতীয় গুণ, তারা কাফেরদের ওপর প্রবল, শক্তিশালী ও কঠোর। যাদের ভালোবাসা ও শত্রুতা নিজ সত্তা ও সত্তাগত অধিকারের পরিবর্তে শুধু আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর দ্বীনের খাতিরে নিবেদিত হবে। এ সম্পর্কে কুরআনে এসেছে, ‘কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।’ (সূরা ফাতহ-২৯)
তাদের চতুর্থ গুণ, ‘তারা সত্য দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে জিহাদে প্রবৃত্ত হবে। কুফর ও দ্বীন ত্যাগের মোকাবেলা করার জন্য শুধু কতিপয় প্রচলিত ইবাদত এবং নম্র ও কঠোর হওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দীপনাও থাকতে হবে। এই উদ্দীপনাকে পূর্ণতা দানের জন্য পঞ্চম গুণ বলা হয়েছে, দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত ও সমুন্নত করার চেষ্টায় তারা কোনো ভর্ৎসনারই পরোয়া করবে না।’ (ইবনে কাসির)
‘তোমাদের বন্ধু তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ- যারা সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং তারা বিনীত।’ (সূরা মায়েদা-৫৫) তারা পূর্ণ আদব ও শর্তাদিসহ নিয়মিত সালাত আদায় করে, নিজের অর্থ থেকে জাকাত প্রদান করে ও তারা বিনম্র ও বিনয়ী; নিজের সৎকর্মের জন্য গর্বিত নয়, তারা মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করে।’ (সাদি)
‘আর যে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তবে নিশ্চয়ই আল্লাহর দলই বিজয়ী।’ (সূরা মায়দা-৫৬) যারা কুরআনের নির্দেশ পালন করে বিজাতির সাথে গভীর বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকে এবং শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং মুমিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারা হবে বিজয়ী ও বিশ্বজয়ী। যারা আল্লাহর নির্দেশ মানবে, তারা তার দল ও বাহিনীভুক্ত হবে। তাদের জন্যই জয় অপেক্ষা করছে। যদিও মাঝে মাঝে তাদের ওপর কোনো কোনো বিপদ আসে, তা শুধু আল্লাহ তাঁর কোনো ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার জন্য তা করিয়ে থাকেন। তবে শেষ পর্যন্ত শুভ পরিণাম ও বিজয় তাদেরই পক্ষে যায়। অন্য আয়াতেও আল্লাহ বলেছেন- ‘আর আমাদের বাহিনী অবশ্যই বিজয়ী হবে।’ (সূরা আস-সাফফাত-১৭৩)।
লেখিকা : কবি ও গবেষক