বাইডেন কি সৌদি যুবরাজকে শায়েস্তা করবেন?
বাইডেন সৌদি যুবরাজ - ছবি : সংগৃহীত
ইরান ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে আরো যেসব বিষয়ের দিকে বাইডেন প্রশাসন নজর দেবে তার মধ্যে রয়েছে: ইয়েমেনের যুদ্ধ বন্ধ করা, ইসরাইল-আরব শান্তি চুক্তি, সৌদি আরবে মানবাধিকার, বিরোধী মতাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন এবং সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড।
কিন্তু ইরানের সাথে কি চুক্তি হবে তার প্রভাব এসব বিষয়ের ওপর গিয়েও পড়বে।
বাইডেন যাকে তার জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক হিসাবে নিয়োগ করেছেন কংগ্রেসে তার নিয়োগের শুনানির সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়, ট্রাম্প সরকারের “বেআইনি তৎপরতা“ তিনি বন্ধ করবেন কিনা এবং সাংবাদিক খাসোগি হত্যার একটি পূর্ণাঙ্গ একটি রিপোর্ট তিনি কংগ্রেসকে দেবেন কিনা।
উত্তরে আভরিল হেইনস বলেন, “হ্যাঁ সিনেটর, অবশ্যই। আমরা আইন অনুসরণ করবো।“
গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক নির্ভরযোগ্য মিডিয়া বলে আসছে, সিআইএর কাছে বেশ জোরালো প্রমাণ রয়েছে যে সৌদি যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমানই জামাল খাসোগির হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সৌদি যুবরাজ অবশ্য সবসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কিন্তু বাইডেন কি এ নিয়ে সৌদি যুবরাজকে শায়েস্তা করতে পারবেন?
“আমেরিকানদের উচিৎ যুবরাজকে তাদের সন্দেহের দৃষ্টি থেকে সরানো, কারণ সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ এ ব্যাপারে সেই,“ বিবিসিকে বলেন সৌদি লেখক এবং বিশ্লেষক আলি শিহাবি।
“সিআইএ হোক আর পেন্টাগন হোক বা পররাষ্ট্র দপ্তর হোক, সৌদি আরব যে আমেরিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বাস্তবতা তাদের বুঝতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে যে কোনো কিছু করার জন্য সৌদি আরবকে তাদের দরকার।“
তবে অনেক বিষয়ে সৌদি এবং আমেরিকার নীতির মধ্যে ঐক্যমত্য হওয়া সম্ভব। যেমন, ইয়েমেনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের অন্য অনেক বিষয়ের মতো এই সমস্যারও সহজ কোনো সমাধান নেই।
“সৌদি আরবের জন্য সামরিক সহযোগিতা বন্ধ অতটা সহজ নয়।,“ বলছেন পিটার স্যালসবেরি, যিনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইয়েমেন বিশেষজ্ঞ।
“যুক্তরাষ্ট্র যদি সেখানে শান্তি চায় তাহলে কূটনৈতিকভাবে তাদের আরো তৎপর হতে হবে।“
কূটনৈতিক সেই তৎপরতায় অপ্রীতিকর বহু বিষয় উঠে আসবেই, বিশেষ করে মানবাধিকারকে যখন বাইডেন প্রশাসন তাদের এজেন্ডায় জায়গা দিয়েছেন।
তার অর্থ, রিয়াদ থেকে শুরু করে তেহরান, কায়রো বা অন্যত্র কথাবার্তা বলার সময় জটিল এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামলাতে হবে।
অনেকেই নজর রাখবেন এইসব কথাবার্তা শুধুই কি ফাঁকা বুলি নাকি আমেরিকা এসবের বাস্তবায়নকে গুরুত্ব দেবে।
মধ্যপ্রাচ্যের নতুন বাস্তবতা
তবে নতুন নীতি নিয়ে এগুলেও, বাইডেনকে তার পূর্বসূরীর অনেক পদক্ষেপকে মেনে নিয়েই কাজ করতে হবে।
যেমন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তি অর্থাৎ ইসরায়েলের সাথে কয়েকটি আরব দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের চুক্তির প্রশংসা বিভিন্ন মহলে হচ্ছে। মি. বাইডেনও এই সম্পর্কে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কিন্তু নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বলেছেন, ঐ সব চুক্তির শর্তগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।
ইউএই‘র কাছে অস্ত্র বিক্রি বা বিতর্কিত ওয়েস্টার্ন সাহারা অঞ্চলে মরক্কোর সার্বভৌমত্ব মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতির দিকে তিনি ইঙ্গিত করেছেন।
ইরাক, সিরিয়া এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট, আল কায়দা এবং ইসলামিক স্টেটের অব্যাহত তৎপরতার দিকেও নজর দিতেই হবে জো বাইডেনকে, যিনি নিজের দেশেই নতুন করে উগ্রবাদের উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন।
“আমি মনে করি নতুন সুযোগ হাজির হয়েছে, “ বলছেন কিম ঘাতাস। “কঠিন হবে, কিন্তু বিশ্বে আমেরিকার ভূমিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে নতুন চিন্তার সুযোগ তৈরি হয়েছে।“
সূত্র : বিবিসি