বাস বা গাড়িতে চেপে লম্বা সফর করলেই বমি পায়?
বাস বা গাড়িতে চেপে লম্বা সফর করলেই বমি পায়? - ছবি সংগৃহীত
বাস বা গাড়িতে চেপে লম্বা সফর করলেই বমি বমি ভাব। অনেকেরই এই সমস্যা রয়েছে। এটা কিন্তু কোনো রোগ নয়। এটা আসলে মোশন সিকনেস বা গতি-অসুস্থতা। অনেকে বাস বা গাড়িতে চেপে কিছুক্ষণ সফর করলেই বমি করে ফেলেন। কারও আবার লম্বা সফরের পরও দু-তিনদিন বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরার মতো সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে তো বমির ভয়ে লম্বা সফরে যেতেই রাজি হন না। তবে সমস্যা যখন আছে, সমাধানও রয়েছে। কয়েকটি ব্যাপার একটু মেনে চললেই সফর করার সময় বমি ভাবের সমস্যা কাটাতে পারবেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাসে বা গাড়িতে লম্বা সফরের সময় বমি পায় কেন! আসলে Motion Sickness Symptoms-এর জেরে অনেকেই রাস্তাঘাটে সমস্যায় পড়েন। বিরক্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। আসলে লম্বা সফরের সময় আমাদের মস্তিষ্কের ভিতর কান, চোখ, ত্বক থেকে আলাদা আলাদা সিগনাল যায়। ফলে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। তবে আগে থেকে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।
দেখে নেয়া যাক, সফরের সময় বমি ভাব কাটাতে কী কী করা যেতে পারে-
* পিছনের সিটে বসবেন না। বাসের পিছনের সিটে গতি গতির অনুভূতি বেশি হয়। গাড়িতেও সামনের সিটে বসতে পারলে ভাল।
* সফরের সময় বমি বমি ভাব হলে বই পড়বেন না। না হলে মস্তিষ্কে ভুল বার্তা যাবে। সমস্যা বাড়তে পারে।
* বমি পেলে বাস বা গাড়ির জানালা খুলে ঠাণ্ডা বাতাসের স্পর্শ নিতে পারেন। তাতে একটু আরাম অনুভব করতে পারেন।
* খালি পেটে কখনোই সফর করবেন না। খালি পেটে থাকলে Motion Sickness বেশি হতে পারে।
* বাড়ি থেকে পাকা লেবু নিয়ে গাড়িতে উঠুন। বমি পেলে সেই লেবু গন্ধ নিতে পারেন। তাতে সতেজতা আসবে।
* লবঙ্গ পিষে রাখতে পারেন সঙ্গে। বমি ভাব হলে অল্প লবঙ্গের গুঁড়ো অল্প চিনি দিয়ে মুখের ভিতর ফেলে রাখুন।
* তুলসী পাতার গন্ধ নিলে বমি ভাব কাটতে পারে।
* বাসের সিটে খবরের কাগজ বা পেপার পাতুন। সেই পেপারের উপর বসলে অনেক সময় বমি ভাব রোধ করা যেতে পারে।
সূত্র : জি নিউজ
হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা
ডা: শহিদুল ইসলাম
যার মাথা আছে তার মাথাব্যথা আছে। কিন্তু সবাই কি ডাক্তারের কাছে যান? না, যান না। তাহলে ডাক্তারের কাছে কখন যাওয়া উচিত?
মাথাব্যথার অনেকগুলো রকমফের আছে। নানাভাবে একে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। কিছু মাথাব্যথা আছে যেটা নিজেই একটা অসুখ। উদাহরণ হিসেবে মাইগ্রেনের কথা বলা যায়। আবার কিছু মাথাব্যথা অন্য কোনো অসুখের উপসর্গ হিসেবে থাকে। যেমন- সর্দি-জ্বরের সময় যে মাথাব্যথা হয় সেটা সর্দি-জ্বরের একটা উপসর্গ। তবে সর্দি-জ্বর হলে কেউ ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলেন না, আমি মাথাব্যথার চিকিৎসা নিতে এসেছি। বরং বলেন, আমার জ্বর, সর্দি আর সাথে মাথাব্যথা। কারণ রোগী নিজেও জানেন, মাথাব্যথা হচ্ছে জ্বরের কারণে। কিন্তু কিছু অসুখ আছে যাদের একমাত্র উপসর্গ বা প্রধান উপসর্গ হচ্ছে মাথাব্যথা। এসব রোগের ক্ষেত্রে বোঝা খুব সহজ নয় যে, মাথাব্যথা নিজেই একটা অসুখ নাকি এর পেছনে অন্য কিছু আছে।
মাথাব্যথা প্রথম শুরু হলো কিভাবে তার ওপর অনেকাংশে এর গুরুত্ব নির্ভর করে। অনেক সময়ই রোগী মনে করতে পারেন না কখন কিভাবে মাথাব্যথা শুরু হয়েছিল। কারণ মাঝে মধ্যে সবারই মাথাব্যথা হয়। এই মাঝে মধ্যে হওয়া ব্যথাটা কখন স্বাভাবিকতার সীমা ছাড়িয়ে যায় সেটা ঠিক খেয়াল করা হয়ে ওঠে না। একসময় মনে হয়, ইদানীং কি মাথাব্যথাটা একটু বেশি হচ্ছে? আমি কি একটু বেশি প্যারাসিটামল খাচ্ছি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে চলে যায় কয়েক মাস। তারপর মনে হয়, আমার কি ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত? কয়েক মাস পরে এক সময় মনে হয়, হ্যাঁ, আমার মাথাব্যথাটা একটু বেশিই হচ্ছে। আমার ডাক্তার দেখানো উচিত। কিন্তু নানা ব্যস্ততায় কিছুতেই সময় করা হয়ে ওঠে না। নিজের সাথে বোঝাপড়া শেষ করে, সময় বের করে ডাক্তারের কাছে পৌঁছতে পৌঁছতে চলে যায় ছয় মাস, এক বছর বা আরো বেশি সময়। এটা মাথাব্যথা শুরু হওয়ার একটা ধরন।
আবার অন্য একটা ধরন আছে। হঠাৎ করেই হয়তো এমন মাথাব্যথা শুরু হলো, যেটা আগে কখনো হয়নি। এটা হতে পারে তীব্রতার বিবেচনায়, ব্যথার ধরন বা ব্যথার স্থানের বিবেচনায় আগের সব ব্যথার থেকে আলাদা। এরকমভাবে শুরু হলে সাধারণত রোগীরা সবকিছু মনে করতে পারেন। বলতে পারেন কবে শুরু হয়েছিল, কিভাবে শুরু হয়েছিল আর তখন কী কী ঘটেছিল। এভাবে যে মাথাব্যথা শুরু হয় তার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা জরুরি।
বয়স মাথাব্যথার গুরুত্ব নির্ধারণের জন্য একটা অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। ৫৫ বছর বয়সের সীমা পার হলে যদি এমন মাথাব্যথা শুরু হয় যা তার ধরন, অবস্থান বা তীব্রতার বিচারে নতুন তাহলে সেটা হয়তো কোনো গুরুত্বহীন ব্যথা না-ও হতে পারে। অন্তত এটা প্রমাণ করা দরকার যে, খারাপ কিছু হয়নি।
শুধু ব্যথার তীব্রতাই কখনো কখনো প্রধান বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অনেক তীব্র ব্যথা অনেক সময়ই খারাপ কিছুর ইঙ্গিত দেয়। জীবনের সবচেয়ে তীব্রতম মাথাব্যথাটা সব সময়ই কারণ অনুসন্ধানের দাবি রাখে। তবে তীব্র ব্যথা মানেই খারাপ কিছু এটা সবসময় সত্য নয়।
কখনো কখনো মাথাব্যথা কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ওষুধ না খেলে ভালো থাকা যায় না। সাথে অন্য কোনো উপসর্গ থাকতে পারে আবার না-ও থাকতে পারে। এরকম মাথাব্যথা নিয়ে বেশি দিন ঘরে বসে না থাকাই ভালো।
মাথাব্যথার সাথে অনেক সময় যুক্ত হয় বমি। এরকম হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। বমি মাথাব্যথা শুরু হওয়ার আগেও হতে পারে আবার পরেও হতে পারে। তবে ব্যথার আগে বমি হলে তার গুরুত্ব বেশি।
রক্তের প্রেসার যেমন বাড়ে মাথার ভেতরের প্রেসারও তেমনি বাড়তে পারে। মাথার প্রেসার বাড়লে মাথাব্যথা হয়, উচ্চ রক্তচাপের সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। কিন্তু মাথাব্যথা হলে সবাই রক্তের প্রেসার মাপার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। সবার কাছে রক্তের প্রেসার যতটা গুরুত্বপূর্ণ মাথার প্রেসার ততটা নয়। কিন্তু মাথার প্রেসার উচ্চ রক্তচাপের চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি জীবনের ইতি টানতে পারে।
মাথাব্যথার জন্য হয়তো মাঝে মধ্যে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। প্রায়ই সকালবেলা মাথাব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে উঠছেন। নামাজে রুকু বা সেজদা করতে বা অন্য কোনো কারণে মাথা নিচু করলে মাথাব্যথা বাড়ছে। হাঁচি-কাশি দিলে মাথাব্যথা করছে। এগুলোর কোনো একটা বা একাধিক বৈশিষ্ট্য থাকলে মাথাব্যথা নিয়ে আর বসে থাকা ঠিক হবে না। মনে রাখা দরকার, এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে তা হয়তো শুধুই মাথাব্যথা নয়, আরো কিছু। আর এই আরো কিছুটা ক্ষতিকর কিছুও হতে পারে।
মাথার ভেতরের প্রেসার বাড়লে যেমন মাথাব্যথা করে তেমনি চোখের প্রেসার বাড়লেও করতে পারে। চোখের প্রেসার বাড়ারও আবার রকমফের আছে। মাথাব্যথার ধরন চোখের প্রেসারের ধরনের ওপর নির্ভর করে। ধরন যাই হোক সঠিক সময়ের চিকিৎসা রোগীর দৃষ্টিশক্তি চিরতরে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
মাথাব্যথার আরেকটা বিশেষ ধরন আছে যেটার অবশ্যই কারণ অনুসন্ধান করা উচিত। আর এটা সবার জানা থাকা ভালো। একটা তীব্র ব্যথা যা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তীব্রতার শীর্ষে পৌঁছে যায়। সাধারণত মাথার একপাশে অনুভূত হয়। কেউ কেউ বলে থাকেন এত তীব্র ব্যথা কোনো দিন হয়নি। তবে সবসময় যে জীবনের তীব্রতম ব্যথা হবে তা না-ও হতে পারে। ব্যথার সাথে বমি হতে পারে। গুরুত্বের বিচারে এই ব্যথাটা হার্ট অ্যাটাকের সমান বা তার চেয়েও বেশি।
মাথাব্যথা সবসময় খারাপ অসুখের ইঙ্গিত দেয় না। বরং বেশির ভাগ মাথাব্যথাই সাময়িকভাবে রোগীর কষ্ট বাড়ায় বা দৈনন্দিন কাজের ব্যাঘাত ঘটায় মাত্র।
লেখক : কনসালটেন্ট (মেডিসিন)
সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল