পম্পেও কাজটি কেন করলেন?
পম্পেও - ছবি সংগৃহীত
ট্রাম্পের ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে এক প্রতিহিংসাপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও কিছু কাজ করে গেছেন একনিষ্ঠ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও। ওয়াশিংটন পোস্ট এ নিয়ে শিরোনাম ব্যবহার করেছে ‘কূটনৈতিক তাণ্ডবলীলা’ বলে। গত ১৯৪৯ সালের মাওয়ের বিপ্লবের পর থেকে চীন নিরবচ্ছিন্ন অবস্থান হলো, এক চায়না পলিসি। কথাটার মানে হলো, তাইওয়ান কোনো আলাদা রাষ্ট্র নয়, চীনেরই অংশ। তাই অন্য যেকোনো দেশ চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক করতে চাইলে তাকে ‘একচীন পলিসি’ মানতে প্রতিশ্রুতি দিতে হয় আগে। এ প্রসঙ্গে একমত না হলে চীন সে রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক করে না। তাই আমেরিকার ক্ষেত্রেও ১৯৭৯ সালে ১ জানুয়ারি চীন-আমেরিকা প্রথম পরস্পরকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি বিনিময় করার সময় আমেরিকাকে তাইওয়ানের হাত ছেড়ে মূলভূখণ্ড চীনকে জানাতে হয়েছিল একচীন পলিসির প্রতি আমেরিকান সম্মতির কথা।
তাইওয়ানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়েছিল। তবে চীন তাইওয়ানের সাথে যেকোনো রাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে, ট্রেড রিলেশন অফিস খুলতে আপত্তি করে না। এমনকি চীনের নিজেরই তাইওয়ানের সাথে সেসব সম্পর্কই আছে। আর এই সূত্রে সেই থেকে আমেরিকান ফরেন অফিসে অভ্যন্তরীণভাবে বিভিন্ন আইনি সার্কুলার জারি করা ছিল যে, কূটনীতিকরা ‘একচীন পলিসি’ মেনে চলতে কী কী করবেন আর কী কী কখনো করবেন না। কিন্তু পম্পেও গত ১০ জানুয়ারি ঘোষণা করেন, তিনি চীনের একচীন নীতি মানার জন্য আমেরিকা স্বেচ্ছায় যেসব শর্ত মানতে অভ্যন্তরীণ সার্কুলার দিয়ে ছিল সেসব সার্কুলার তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এটা কূটনীতিক বিষয় নিয়ে এক ধরনের ফাজলামো করা। যেখানে চীন-আমেরিকা কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করার এটা ছিল উভয়ের মেনে নেয়া একটা শর্ত সেখানে এই শর্তপালনের জন্য আমেরিকার অভ্যন্তরীণ সার্কুলার যেটা ঠিক কোনো চুক্তির অংশ নয়, প্রত্যাহারের কথা কেন আসবে?
তবে সম্পর্ক-চুক্তি মেনে চলার জন্য অভ্যন্তরীণ সার্কুলার বাতিল করে দেয়াটা একটা অকূটনীতিক আচরণ। কারণ পম্পেও সাহস করে অর্থপূর্ণ কিছু করতে চাইলে তার ঘোষণা করে দেয়া দরকার ছিল যে, ‘চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক আমরা ছিন্ন করছি।’ এটা অনেকটা ‘গরুর মাংস খাবো না কিন্তু ঝোল খাবো’ বলা। অভ্যন্তরীণ প্রশাসনের মধ্যে সার্কুলার প্রত্যাহার করার মানে, চীনকে উসকানি দেয়া যে, তাইওয়ান যে চীনের অংশ, সে কথা মানলাম না। কিন্তু আবার ট্রাম্প-পম্পেওর সেই মুরোদ নেই যে, সে কথা মুখের ওপর চীনকে বলে জানায়। তাহলে এর উদ্দেশ্য কী? এতে পম্পেও কী অর্জন করলেন? অন্যের বাসায় ঢিল মেরে পালিয়ে গেলেন যাতে বাড়ির মালিক বাইরে এসে বাইডেনকে দেখে মনে করেন তিনিই ঢিলটা মেরেছেন। অথবা অন্য ভাষায় বললে এটা হলো, অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে সুখ পাওয়া। অন্যের আসা যাওয়ার পথে কাঁটা বিছিয়ে রেখে তার ক্ষতি করার ‘সুখ’ নেয়া।
যেমন এরই আরেক অংশ হলো, পম্পেও ঘোষণা দিলেন ‘বাংলাদেশে আল -কায়েদা আছে।’ অথচ ট্রাম্প-পম্পেও আর ক্ষমতা থাকবেন না। তাহলে এমন কথা বলে তার কী লাভ হলো? লাভ হলো, বাইডেন প্রশাসনের সাথে আগেই হাসিনা সরকারের সম্পর্কটা তিতা করার চরমে নেয়া। হাসিনা আমেরিকার প্রশাসনকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে কড়া বিবৃতি দিয়েছেন। এর রেশ ও প্রভাব এখন শপথ নিয়ে ক্ষমতায় এসে যাওয়া বাইডেন প্রশাসনের ওপরও পড়বে। একই অভিযোগ তিনি করেছেন ইরানের বেলায়ও। এর আরেক মানে তাহলে পম্পেও চেয়েছেন- তিনি এমন কিছু ঘটিয়ে দিলে এতে তার অনুমান হলো, বাইডেনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো যাবে না। তাই এটাই তার ভালো পছন্দ যে, এটাকে এদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টাঅভিযোগে ফেলে দিলে ঝগড়াটা বেশি তিতা হবে। তাই তিনি এটা করেছেন।
এ তো গেল যেটা চলে গেছে সেই ট্রাম্প প্রশাসনের আলাপ। কিন্তু যেভাবেই হোক ঐ পর্ব এখন মৃত। চার দিকে জল্পনা কল্পনা হলো, বাইডেন কী করতে যাচ্ছেন? যেমন চীন প্রসঙ্গে বাইডেনের বিদেশনীতি মূল ধারা যেটা সামনে আসছে তা খবরের শিরোনামের ভাষায় হলো, ‘প্রতিযোগিতা ভালোভাবেই চলবে কিন্তু (কোনো যুদ্ধের) বিপর্যয় ঘটানো যাবে না।’ এটা নিরস্ত্র লড়াই করে রাখতে হবে। নিজ নিজ স্বার্থে স্ট্রাটেজিক আর কূটনীতিতে লড়াই চালাতে হবে।
যেমন, শপথের দিন বাইডেন বলছেন- তিনি তার শাসনের প্রথম এক শ’ দিনের মধ্যে এমন কিছু করতে চান যা দেশ-বিদেশে মানুষের কাছে বার্তা দেবে যে আমেরিকা ফিরে এসেছে- ‘আমেরিকা ইজ ব্যাক’!