নেতানিয়াহু : গ্র্যান্ড চেজ মাস্টার

মো: বজলুর রশীদ | Jan 21, 2021 04:33 pm
নেতানিয়াহু

নেতানিয়াহু - ছবি সংগৃহীত

 

ভিকি ওয়ার্ডের মতে, নেতানিয়াহু একজন 'গ্র্যান্ড চেজ মাস্টার'। তিনি ট্রাম্পের সাথে লবিং করে পুতিনকে ধরেছেন আর রাশিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। তাদের পৃথক অতীত ও পৃথক স্টাইল থাকলেও তারা ‘একই সূতায় তৈরি’ বলে ভিকি অভিমত দিয়েছেন। এই তিনজন একজনকে অপছন্দ করেন। তিনি হলেন, ওবামা এবং তার সব কাজকর্ম ও নীতিমালা। প্রধানত লিবারেল আইডিয়া ও লিবারেল পররাষ্ট্রনীতি। হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেই ট্রাম্প ওবামার সব কিছু ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে দিয়েছিলেন। নেতানিয়াহু এতে ইন্ধন যোগান, পুতিন হাততালি দেন। পুতিন-নেতানিয়াহু সৌদি রাজতন্ত্রকে সব সাপোর্ট দিয়েছেন, আরব বিরোধ ও বিভক্তিতে ইন্ধন যুগিয়েছেন। মিসরের স্বৈরশাসক সিসি তাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব, তেমনিভাবে ব্রাজিলের বলসোনারো, হাঙ্গেরির ভিক্টর ওরবানও। এসব ব্যক্তিত্ব ও বিষয় নেতানিয়াহু, পুতিন ও ট্রাম্পকে সংযুক্ত করে রেখেছে। এসব একাধিক কারণে আলজাজিরার বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা নেতানিয়াহুকে ‘উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক’ বলে অভিহিত করেছেন।

যদিও ইরানকে ‘মন্দ আঞ্চলিক অভিনেতা’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটরা ও রিপাবলিকানরা ইরানের পরিবর্তে রাশিয়াকেই বিপজ্জনক বৈশ্বিক শত্রু মনে করেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর পুতিনকে কাছে টেনে নিতে চায় না। কিন্তু নেতানিয়াহু উভয় দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের সাথে এবং পুতিনের সাথে মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।

পুতিন ও ট্রাম্প একই চিন্তাভাবনা করলেও দেশের জনগণ সবকিছুতে উল্টোটাই ভাবেন। সাইবার যুদ্ধ থেকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ, ইউরোপে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু, মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার উৎসাহ- সবই। এ সব কিছু চলমান থাকা সত্ত্বেও নেতানিয়াহু উভয় শিবিরে সমান জনপ্রিয় ও শক্তিশালী। পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক ব্যর্থ হলেও নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সাথে দুই বছরে পাঁচটি বড় বৈঠক করেছেন যার সবই ফলপ্রসূ এবং বিগত চার বছরে ১৩টি সমান সার্থক বৈঠক হয়েছে। নেতানিয়াহুকে একজন ‘স্টার নেটওয়ার্ককার’ বলা হয়। কেননা তিনি জানেন, ‘কোন হাতের আঙটিতে চুমু খেতে হবে’। রাশিয়া একমাত্র বিশ্বশক্তি যে মধ্যপ্রাচ্যের মুখ্য শক্তিগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখে, হামাস, হিজবুল্লাহ, ইরান, সৌদি আরব, তুরস্ক ও মিসর সবার সাথে। নেতানিয়াহু রাশিয়ার কাছে থেকে এসব বৈঠকের সংক্ষিপ্তসার সংগ্রহ করে নিজেকে তথ্যসমৃদ্ধ রাখেন বলে জানা যায়।

পুতিনের সাথে নেতানিয়াহুর এতই মধুর সম্পর্ক যে, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম কূটনীতিকদের সতর্ক থাকতে বলেছেন এবং সিরিয়া নিয়ে এমন কোনো চুক্তি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন যাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্বার্থের ক্ষতি না হয়। পরবর্তীতে এই গ্রাহামই সিরিয়ার গোলান মালভূমি সংযুক্তকরণে নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন দেয়ার জন্য ওয়াশিংটনকে অনুরোধ জানান। রুশ নেতা পুতিন কখনো ইসরাইলের গোলান হাইটস, জেরুসালেম ও পশ্চিম তীর সংযুক্তকরণের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। নেতানিয়াহুর এসব পদক্ষেপে পুতিন সব সময় চুপ থাকেন। হয়তো নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন আবহ সৃষ্টি করতে একজোট করতে পারেননি; তবে ট্রাম্প ও পুতিনকে ইসরাইলের পক্ষে ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে কাজ করাতে সক্ষম হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে Axis of Resistance বা ‘প্রতিহত করার অক্ষশক্তি’ বলে একটি কথা আছে। এসব শক্তির মধ্যে রাশিয়া, ইরান, সিরিয়া, ইরাক, গাজা, লেবানন, আফগানিস্তানের কিছু অংশ, ইয়েমেন, চীন ও উত্তর কোরিয়া রয়েছে। উত্তর কোরিয়াকে এই দলে নিতে অনেকে নারাজ। ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া ও কিউবাও এই দলে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সাংস্কৃতিক ও আদর্শিকভাবে একে অপরের সন্নিকটে। জানা যায়, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সৌদি আরব এবং আইএস, আলকায়দাসহ আরো কিছু চরমপন্থীকে সাপোর্ট দিয়েছে সিরিয়াকে টুকরা টুকরা করার জন্য। ইসরাইলের বিষয়ে রাশিয়ার অভিমত ইরানের মতো নয়। মনে রাখতে হবে, ইসরাইলে অনেক রাশিয়ান ইহুদি অভিবাসী বসবাস করে, তারাও রাজনীতির বড় এক চালিকাশক্তি।
ইসরাইল সব সময় চীন ও রাশিয়াকে বলে আসছে, ইসরাইল ওয়াশিংটনের ‘গেটওয়ে’। এই দুই দেশ যদি ইসরাইলের সাথে সুসম্পর্ক রাখে তবে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিভিন্ন সমস্যা উত্তরণে সহায়তা করতে পারবে।’

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us