জুলুমকারীর পরিণাম খুবই ভয়াবহ
জুলুমকারীর পরিণাম খুবই ভয়াবহ - ছবি সংগৃহীত
শুধু মৌলিক (ফরজ) ইবাদত পালনের নামই ইসলাম নয়। বরং এর সাথে আরো অনেক আনুষঙ্গিক ইবাদত, ধর্মীয় আচার-আচরণ, রীতিনীতি ও বান্দার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন অধিকার জড়িত রয়েছে। কেউ যেন তার অপর ভাই দ্বারা শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক বা অন্য যেকোনো উপায়ে আঘাতপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এ ব্যাপারে ইসলাম কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। মানবতার মুক্তির দিশারী প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করবে, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন’ (ইবনে মাজাহ-২৩৪২)। অন্য হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের ক্ষতি করল অথবা তাকে ধোঁকা দিলো সে অভিশপ্ত’ (সুনানে তিরমিজি১/৯৪১)। ইসলামে এ ধরনের কাজ বা আচরণকে ‘জুলুম’ বলা হয়। আর যারা এমন কাজ করে বেড়ায় তাদের বলা হয় জালিম বা অত্যাচারী। জুলুমকারীর পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। জালিমকে আল্লাহ বরদাশত করেন না। অন্যের ওপর জুলুম, নির্যাতন করে জালিমরা তাদের ধ্বংস ডেকে আনে। আপদ-বিপদ, দুর্যোগ-বিশৃঙ্খলায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো জুলুম।
কুরআনের ঘোষণা, ‘অবশ্যই আমি তোমাদের আগে বহু জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি যখন তারা জুলুমে লিপ্ত ছিল’ (সূরা ইউনুস ১০-১৩)। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে তাকে এমনভাবে পাকড়াও করেন যে, সে আর ছুটে যেতে পারে না’ (বায়হাকি-৬/৯৪; বুখারি-৪৬৮৬; মুসলিম-২৫৮৩)। বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে জুলুমের মারাত্মক ছড়াছড়ি। জালিমের অত্যাচারে দুর্বল, অসহায়, পীড়িতরা নির্যাতিত; জনজীবন অতিষ্ঠ। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিত্তবানরা দরিদ্র শ্রেণীকে, ক্ষমতাবানরা নিরীহ ও সাধারণ লোকের প্রতি অন্যায় ও হিংসার বশবর্তী হয়ে শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ তাদের নায্য অধিকার, ন্যায়বিচার, সমতা, বাক-স্বাধীনতা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আত্মসম্মান ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। অথচ ইসলাম জুলুমের মতো অন্যায় ও সমাজবিধ্বংসী কাজকে মূলোৎপাটনে জোর তাগিদ দিয়ে আসছে।
জুলুম করাকে আল্লাহ তার নিজের ওপর হারাম করেছেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বান্দা! আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে আন্যের ওপর জুলুম করো না’ (মুসলিম-৬৭৩৭)। হাদিস থেকে বোঝা যায়, জুলুমকারী প্রতিনিয়ত হারাম কাজ করে যাচ্ছে আর আশপাশে থাকা নীরবতা পালনকারী লোকেরা একটি হারাম কাজকে সমর্থন করে যাচ্ছে। ইসলামের সুমহান বাণী হচ্ছে, ‘জুলুমকারী বা ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের সম্পর্কে তুমি কখনো মহান আল্লাহকে উদাসীন মনে করবে না’ (সূরা ইবরাহিম-৪২)। জালিমকে তার জুলুম থেকে প্রতিহত করার ব্যাপারে রাসূল সা: কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছেন, ‘মানুষ যদি কোনো অত্যাচারীকে অত্যাচারে লিপ্ত দেখেও তার দু’হাত চেপে ধরে তাকে প্রতিহত না করে তবে আল্লাহ তায়ালা শিগগিরই তাদের সবাইকে তাঁর ব্যাপক শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত করবেন’ (সুনানে তিরমিজি-২১৬৮)।
হজরত ওমর রা: বলেছেন, ‘জালেমকে ক্ষমা করা মাজলুমের ওপর জুলুম করার শামিল।’ স্পষ্ট বোঝা যায়, সম্মিলিতভাবে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে জালিমকে প্রতিহত করে মাজলুমকে রক্ষা করা সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের অন্যতম দায়িত্ব। পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জালিমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে’ (সূরা শুয়ারা-২২৭)। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না’ (সূরা আনআম-৫৭)।
জালিমদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘অভিযোগ শুধু তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাধায়ক শাস্তি’ (সূরা আশ-শূরা-৪২)। জালিমের বিরুদ্ধে আল্লাহর অবস্থান কঠোর। জালিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান চালাতে ও তাদের মোকাবেলায় প্রস্তুতি থাকতে বলেছেন। কুরআনের ঘোষণা, ‘তোমরা জালিম সম্প্রদায়ের মোকাবেলায় তোমাদের সাধ্যানুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করো’ (সূরা আনফাল-৬০)। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘সাবধান! জালিমের ওপর আল্লাহর অভিশাপ’ (সূরা হুদ-৮)।
জুলুম ব্যক্তির জন্য কিয়ামত দিবসে বিরুদ্ধ সাক্ষী হবে। হাদিসে এসেছে, ‘জুলুম কিয়ামতের দিন অনেক অন্ধকার রূপ নেবে’ (সহিহ বুখারি-২৪৪৭; মুসলিম-৬৭৪১)। রাসূল সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন’ (মুসলিম-২৬১৩)। তাই, অন্যের প্রতি জুলুম করা থেকে বেঁচে থাকতে হবে; জালিম সম্প্রদায়কে সহযোগিতা নয় বরং জালিমকে প্রতিহত করে মাজলুমকে রক্ষা করা হবে প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব।
লেখক : এমফিল গবেষক, প্রাবন্ধিক